ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্লিঙ্কেনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর

প্রকাশনার সময়: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১১:২০ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সফর করতে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত সোমবার এক মার্কিন কর্মকর্তা এ কথা জানান। ধারণা করা যায়, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধির মুখে এ অঞ্চলে মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা গত কয়েক বছরের আলোচিত বিষয়। ১০ দিনের সফরে ভিয়েতনাম, লাওস, জাপান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও মঙ্গোলিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে ব্লিঙ্কেনের। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলো চীন।

কৌশলগত নানা বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার উত্তেজনা চরম পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই পরাশক্তিই নিজেদের সামলে নিয়েছে। তবে দুই দেশের মানসিক প্রতিযোগিতা এখনো তীব্রভাবেই চলছে। সুতরাং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্ত করা জরুরি বলেই মনে করছেন দেশটির নীতি নির্ধারকরা। তাছাড়া সামনেই দেশটির নির্বাচন। যেখানে ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিস নির্বাচন হওয়ার কথা।

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। যদিও চীন এ সময় প্রত্যক্ষভাবে কোনো দেশকেই সাহায্য করেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীনা কোম্পানিগুলো রাশিয়াকে এমন প্রযুক্তি সরবরাহ করছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব। এ নিয়ে সরাসরি কোনো বিতণ্ডা না হলেও এক ধরনের উত্তেজনা ছিল। চীন যাতে রাশিয়াকে প্রযুক্তিগত সহায়তা যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় সেটি না করে সে বিষয়টিও উঠে আসবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক যে উত্তপ্ত এবং দুই দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ সে কথা নিঃসন্দেহ। বলা যায় দুই দেশ দুই মেরুর বাসিন্দা। উভয় দেশ উভয় দেশের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সজাগ এবং প্রায়ই এ নিয়ে কথার সূচনা হয়।

এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বলয় শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা করছে উভয় দেশই। তবে এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে যে দীর্ঘদিনের যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কিছুটা হালকা হয়ে চীনের দিকে ঘুরছে তা ইরান-সৌদি আরব সম্পর্কই প্রমাণ করে। এ উত্তেজনা একেবারে টানটান পর্যায়ে পৌঁছে বেলুন কাণ্ড এবং তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এখনো মাঝে মধ্যেই তাইওয়ানে চীনের যুদ্ধবিমানগুলো সে দেশের সীমানায় ঢুকে পড়ছে। আবার তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রিরও কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। উভয় দেশই নিজেদের প্রতিযোগিতার ফল সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানে এবং এর ফলে যে কারো লাভ হচ্ছে না সেটাও অবগত আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে এমন দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সফর ঘিরে নজর আছে সারা বিশ্বেরই। উভয় দেশের বড় কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা না থাকলেও উভয় দেশের চলমান উত্তেজনা যে একটু ঠান্ডা হবে এটা আশা করা হচ্ছিল। সেটা হয়তো কিছুটা সফলও হয়েছে। অন্তত সফর এবং মতবিনিময় তো হয়েছে। এটা ছিল উভয় দেশের সম্পর্ক মেরামতের একটি বড় সুযোগ। উভয় দেশের সম্পর্ক যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে নিকট ভবিষ্যতে যদি দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তাহলে পৃথিবীর জন্য তা হবে প্রলয়ঙ্কর পরিস্থিতি। এ দুই দেশ গত কয়েক বছর ধরেই তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অস্ত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কূটনীতিসহ প্রতিটি বিষয়েই এ দ্বন্দ্ব বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে শক্তিধর দেশগুলো স্বাভাবিকভাবেই নানাভাবে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই উত্তেজনার পারদ এমনিতেই অনেক ওপরে উঠে আছে। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, আধিপত্যবাদ বিস্তার, সামরিক শক্তি প্রভৃতি বিষয়ে প্রতিযোগিতা চলে আসছে। গত কয়েক বছরে এ সম্পর্ক আরো বেশি তিক্ত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলে আসছে শীতল যুদ্ধ। যদিও সরাসরি বিষয়টি বলা হয় না কিন্তু এটা সত্যি। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে চীন। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে চীনের বর্তমান সফলতাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এখন চীন। সুতরাং চীনকে উপেক্ষা করে পৃথিবীতে শান্তি প্রক্রিয়ার চেষ্টা অর্থহীন হবে। আর যদি উভয় পরাশক্তি দেশগুলো চায় তাহলে পৃথিবীতে শান্তি ফেরানো সম্ভব। বৈশ্বিক অর্থনীতি, বাজার, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান ইস্যু ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন এসব দেশ নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া। তবে সব মিলিয়ে এখন চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার তীব্র প্রতিযোগিতা। দুই দেশের মধ্যে তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে উত্তেজনাসহ আরো কয়েকটি কারণে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে ব্লিঙ্কেনের এ সফর নিশ্চিতভাবেই আশার। যুক্তরাষ্ট্র এখনো যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বে এগিয়ে আছে, এর মধ্যে রয়েছে— গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান। এশিয়া এবং ন্যাটোর মাধ্যমে ইউরোপে গভীর নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র।

এসব দিকে চীন পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু চীনও এগিয়ে চলেছে। শি জিনপিংয়ের সময়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। প্রযুক্তির বাজারে এশিয়ার বাইরেও চীন টেক্কা দিয়ে চলেছে। ভূমি, আকাশ বা সাগরে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এখন হয়তো চীন এশিয়া বা নিজের আশেপাশে প্রভাব বিস্তারে মনোযোগী। ভবিষ্যতে এর বিস্তার যে আরো বৃদ্ধি পাবে না তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। দশকের পর দশক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চালানোর মধ্য দিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী পুনর্গঠিত হয়ে গেছে। তারা নতুন নতুন অস্ত্র সজ্জিত হচ্ছে। পাশাপাশি বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ব্লিঙ্কেনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর সফল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ অঞ্চলে ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ