তীব্র গরমের মাঝে হাজিদের প্রচণ্ড ভিড়; যেন দাঁড়ানোর মতো তিল পরিমাণ জায়গা নেই। এর মাঝেই চলছে হজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি আরবে তীব্র তাপদাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা হাজিদের প্রাণও কাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, মক্কার পবিত্র গ্র্যান্ড মসিজদের ছায়ায় তাপমাত্রা ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১২৫.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছায় বার্ষিক হজ যাত্রার সময় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হজের সময় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জর্ডানের ৬ জন হাজি মারা গেছেন। পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে সৌদিতে হজের সময় জর্ডানের হাজিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৪ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। যদিও হজ পালনের সময় জর্ডানের এই হাজিদের প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরআইএনএন বলেছে, পবিত্র হজ পালনের সময় সৌদিতে অন্তত ১১ ইরানি হাজি নিহত হয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ আরও ২৪ ইরানি হাজিকে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে সৌদিতে হজের সময় ইরানি হাজিদের প্রাণহানির কারণ জানায়নি দেশটি।
এদিকে, সুদানের সংবাদমাধ্যম বলেছে, হজের সময় সৌদিতে সুদানের তিন হাজি নিহত হয়েছেন। আর ইন্দোনেশিয়ার একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সোমবার (১৭ জুন) ফরাসি সংবাদমাধ্যম লি মন্ডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বছর হজ পালনের সময় সৌদিতে ১৩৬ ইন্দোনেশীয় হাজি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সৌদি আরবের পবিত্র হজের সময় পদদলন, তাঁবুতে অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় গত ৩০ বছরে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। যে কারণে হজের আনুষ্ঠানিকতা নিরাপদে সম্পন্ন ও হাজিদের সুরক্ষা নিশ্চিতে নতুন অবকাঠামো তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে সৌদি সরকার। দেশটির কর্তৃপক্ষ বর্তমানে চরম তাপদাহ থেকে হাজিদের রক্ষা করতে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
ট্রাভেল অ্যান্ড মেডিসিন জার্নালের চলতি বছরের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা তাপ প্রশমনের কৌশলগুলোকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্সের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৌদি আরবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাজিরা ভবিষ্যতে ‘চরম বিপদের’ সম্মুখীন হবেন।
সৌদি আরবের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, অত্যন্ত উচ্চ-তাপমাত্রার মাঝে হজ পালনকারী মুসলিম হাজিদের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখতে পায়নি কর্তৃপক্ষ। সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি অধিদপ্তরের প্রধান জামিল আবুলেনাইন বলেছেন, ‘আমরা হজের সময় হাজিদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর স্বাভাবিক সংখ্যায় কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা কিংবা বিচ্যুতি দেখতে পাইনি।’
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি, লে মন্ডে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ