মালয়েশিয়া সরকারের অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি (পিআরএম) ঘোষণার পর নামমাত্র জরিমানা দিয়ে প্রতিদিনই দেশে ফিরছেন শত শত অভিবাসী। কাগজপত্র বিহীন দেশে ফেরা এসব প্রবাসীদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি। তারা দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন দেশে ফেরার প্রত্যাশায়। এ সময় প্রবাসীদের বেশির ভাগই নিশ্ব অবস্থায় দেশে ফিরছেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরেছেন ৬১ হাজার ৫৪ জন নথিবিহীন প্রবাসী।
দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া প্রত্যাবাসন কর্মসূচিতে নিজ দেশে ফিরতে ৯ জুন পর্যন্ত ৭০ হাজার ৩৭৯ জন অবৈধ অভিবাসী নাম নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৯ জুন পর্যন্ত নিজ দেশে ফিরেছেন ৬১ হাজার ৫৪ জন। এ সংখ্যায় কতজন বাংলাদেশি ফিরেছেন তা জানা যায়নি।
অন্যদিকে এ কর্মসূচির মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে চলে যেতে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে দেশটির সরকার ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের ধারণা, বিভিন্ন দেশের ৩ থেকে ৪ লাখ কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অভিবাসী এই কর্মসূচির আওতায় শাস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দেশে ফিরবে।
দেশে ফিরতে প্রতিদিন ইমিগ্রেশনে ভিড় করছেন অভিবাসীরা। এছাড়া ইমিগ্রেশন বিভাগের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ। ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ফিরতে হলে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে ইমিগ্রেশন বিভাগের। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ওয়ানওয়ে এয়ার টিকিট ও পাসপোর্ট। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদেররক নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
এর পরে ইমিগ্রেশন বিভাগে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে স্পেশাল পাস দিলে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবে অবৈধরা। দেশে ফেরা প্রবাসীদের এ তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশ লম্বা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
আর এ সময়ের মধ্যেও চলছে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান। বৈধ পাস/পারমিট ছাড়া কাজ করা এবং বৈধ ভ্রমণ ভিসা নেই এমন বিদেশিদের বিষয়ে তথ্য এবং জনসাধারণের দেওয়া সন্ধানের ভিত্তিতে গোটা মালয়েশিয়ার হটস্পটগুলোতে অপারেসি সাপু, অপারেসি সেলেরা, অপারেসি পিন্টু, অপারেসি মাহির এবং অপারেসি পিকআপের মতো বিভিন্ন নামে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আটক করছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ।
ফলে মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া এত সুযোগ সত্ত্বেও দেশটিতে বর্তমানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে নাজুক অবস্থা। নানা জটিলতায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি যার প্রভাব পড়তে পারে রেমিট্যান্সেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশির ভাগই কর্মহীন কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন। অনেকেই সম্প্রতি কলিং ভিসায় এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দেশে। এভাবে দেশে ফেরাদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এছাড়া ফ্রি ভিসার নামে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়ে এনেছেন অনেক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচির পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না মালয়েশিয়া।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ