গত রোববার প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে কিজ কালাসি এবং খোদাফারিন বাঁধ দুটি উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এরপরই দুর্ঘটনার খবর আসে। রাইসির এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মৃত্যুতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ অথবা সিআইএর কোনো হাত বা ষড়যন্ত্র রয়েছে কী না, এ নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি নেহাত দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দুর্যোগপূর্ণ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট রাইসি প্রকল্প উদ্বোধন করতে গেলেন, সেখানে বাঁধ উদ্বোধন করার পর এক ভাষণে রাইসি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থনের ওপর জোর দেন। এটাই কি রাইসির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। নাকি পরিকল্পিতভাবে রাইসির মৃত্যু নিশ্চিত করল ষড়যন্ত্রকারীরা। এর জন্য কি ইসরায়েল দায়ী? এ নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাস।
সন্দেহের আঙুল যাচ্ছে আমেরিকার দিকেও। কারণ একমাত্র ইরানের কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাব কমেছে ওয়াশিংটনের। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে আমেরিকার চরম শত্রু চীন। এছাড়া কাশেম সোলাইমানির মতো প্রভাবশালী জাঁদরেল নেতাকে হত্যা করতে একটুও বুক কাঁপেনি আমেরিকার।
ঘুরপাক খাচ্ছে যেসব প্রশ্ন: ১. প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজারবাইজানের সীমান্তের কিজ কালাসি এবং খোদাফারিন বাঁধ দুটি উদ্বোধন করতে যাবেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে তাকে হেলিকপ্টারেই কেন যেতে হবে। ২. যেহেতু সীমান্তবর্তী এলাকায় ইব্রাহিম রাইসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাবেন, সেহেতু দেশটির আবহাওয়া দপ্তর কেন আগে সতর্ক করল না। ৩. দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাধারণত আকাশপথে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। করলেও, তা আবহাওয়া বিশ্লেষনের মাধ্যমে যাতে কোনো ঝুঁকি না থাকে, তা নিশ্চিত হয়ে হেলিকপ্টার বা বিমান চলাচল করে। সেখানে এই ঝুঁকি নিয়ে কেন উদ্বোধন করতে গেলেন রাইসি। ৪. যেহেতু হেলিকপ্টার একটি সাধারণ হালকা আকাশপথের চলাচলের মাধ্যম, সেহেতু একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট কেন হেলিকপ্টারেই যাবে। দেশটিতে আবহাওয়ার দুর্যোগ চলা সত্ত্বেও এরকম পরিস্থিতিতে কেন হেলিকপ্টারটি চালান হলো। ৫. আকাশপথের হালকা বাহন হচ্ছে হেলিকপ্টার। পাইলট বা চালক যেহেতু দেখছেন আবহাওয়া যাতায়াতের অনুকূলে নয় তবুও পাইলট কেন যাত্রা শুরু করেন। ৬. সাধারণত যে কোনো দেশের রীতি হলো প্রেসিডেন্ট, ফরেন মিনিস্টার ভিন্ন ভিন্ন হেলিকপ্টারে যাতায়াত করেন। তাহলে তারা সবাই একই হেলিকপ্টারে কেন উঠলেন? এমনকি হেলিকপ্টারের পাইলট কে ছিলেন। তাহলে কি হেলিকপ্টারের পাইলটকে নিজের আয়ত্তে নিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। ৭. যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হেলিকপ্টারে কেন সফরে গেলেন ইব্রাহিম রাইসি।
তাছাড়া পাকিস্তানের তৎকালীন জেনারেল জিয়াউল হক বাওয়ালপুর গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনের তৈরি এম-৩১ ট্যাংকের মহড়া দেখতে, রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৩৩০ মাইল দক্ষিণে বাহওয়ালপুর টেস্ট ফিল্ডে যান। ট্যাংকের মহড়া দেখে ফেরার পথে বিধ্বস্ত হয় লকহিড মার্টিনের তৈরি সি-১৩০বি বিমানটি, উড্ডয়নের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মাটিতে আছড়ে পড়ে ৬০-৭০ ডিগ্রি কোণে। আর এতেই মারা গেছেন জেনারেল জিয়াউল হক। একইভাবে সিআইএর কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হয়েছে। নাকি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মৃত্যুতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর হাত রয়েছে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ