ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিলিস্তিনকে সমর্থন করায় সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫১
শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুম

‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’র কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রীর (ভেলেডিক্টোরিয়ান) সমাবর্তন বক্তৃতা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইএসসি)। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টের কার্যালয় থেকে ই–মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শিক্ষাজীবনে ভালো ফল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে ভেলেডিক্টোরিয়ান স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনিই বক্তৃতা দেন।

এ বছর আসনা তাবাসসুম ইউএসসির ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের এই শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৪.০–এর মধ্যে ৩.৯৮।

আসনা তাবাসসুমের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের ‘বায়ো’তে ফিলিস্তিনপন্থী একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া। মূলত এ ‘অভিযোগেই’ ইসরায়েলপন্থি শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের একাংশ তাকে ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত করার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছিল। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাবাসসুম বক্তৃতা দিলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন কারণ দেখিয়ে তার অংশটি বাতিল করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতি প্রকাশের পর আসনা তাবাসসুমও নিজের মতামত জানিয়েছেন। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-লস অ্যাঞ্জেলেসের (সিএআইআর-এলএ) মাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তাবাসসুম বলেন, ‘ইউএসসির ২০২৪ সালের ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়ে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এটা আমার পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক ও সহপাঠীদের জন্য উদযাপনের সময় হওয়ার কথা ছিল। অথচ মানবাধিকারের প্রশ্নে আমার আপসহীন অবস্থানের কারণে মুসলিমবিরোধী, ফিলিস্তিনবিরোধীরা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত তাকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে জানিয়ে তাবাসসুম বলেছেন, যারা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছে, তারা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু বিস্মিত হয়েছি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার চার বছরের ঘর কীভাবে আমাকে অস্বীকার করল?

আসনা তাবাসসুম বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তার ওপর কোনো হুমকির প্রমাণ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। বরং ঘৃণা ছড়ানোকে সমর্থন দিয়েই তারা ক্যাম্পাসে ভয়ের উদ্রেক করেছে।

ভারতীয়-মার্কিন এই তরুণ বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশলে পড়লেও মাইনর করেছেন ‘গণহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ে। ফিলিস্তিনিসহ পৃথিবীর সব মানুষের ন্যায়বিচারের পক্ষে নিজের সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়ে তাবাসসুমের বক্তব্য, ভেলেডিক্টোরিয়ান হিসেবে সহপাঠীদের অনুরোধ করব, প্রচলিত ধারণার বাইরে বের হও। এমন একটা পৃথিবীর জন্য কাজ করো, যেখানে মানুষের সমতা আর মর্যাদা রক্ষার চেয়ে ঘৃণা ছড়ানোটা বড় হয়ে উঠবে না। আদর্শগত বিভেদ থাকলেও আমি সেটা আলোচনা ও (পরস্পরকে) জানার মাধ্যমেই সমাধান করতে চাই, গোঁড়ামি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নয়।

এদিকে এনবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বস্থানীয় একটি মুসলিম সংগঠন।

উল্লেখ্য, তাবাসসুমের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে একটি স্লাইডশোর লিঙ্ক শেয়ার করা আছে যাতে- ‘ফিলিস্তিনে কী ঘটছে এবং কীভাবে ফিলিস্তিনের নিপীড়িতদের সাহায্য করা যায় সে সম্পর্কে জানতে’ জনগণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সূত্র : লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ