বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকে রপ্তানি যেমন কমেনি, ঠিক তেমনি ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের ভিড়ও কমেনি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচি ঢাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করলেও কলকাতার বাজারে ভারতীয় পণ্য কিনতে বাংলাদেশিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিশেষ করে ঈদের আগে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিড়ে কলকাতার নিউমার্কেট সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশিদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার প্রতিষ্ঠিত পোশাক বিপণী ‘মিলন’ এর কর্ণধার রাজেশ তিওয়ারি জানান, এখানে এরকম কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের কাস্টমাররা নিয়মিতভাবে আমাদের দোকানে আসছেন।
তার অভিমত, ভারত-বাংলাদেশ আগে যা ছিল, এখনো তাই আছে। ভারতীয় পণ্য বয়কটের ইস্যুটি মিডিয়ার তৈরি করা। শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের কর্মচারী সুব্রত নন্দী জানান, ভারতীয় পণ্য বয়কটের যে ডাক দেয়া হয়েছে, তাতে আমাদের এখানে কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতি বছর রমজান মাসের সময় পর্যটকের সংখ্যা এরকমই থাকে। তবে ৫ তারিখের পর ভালো বুকিং রয়েছে। কয়েকদিন পরেই আরও পর্যটক আসবেন। কারণ, তারা মূলত কলকাতাতেই ঈদ পালন করবেন।
শ্যামলী এস আর পরিবহনের কর্ণধার শুভঙ্কর দেবনাথ জানান, বয়কটের কোনো প্রভাব পড়েনি, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তবে ভিসা জটিলতা এবং টাকার তুলনায় রুপির মূল্য কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশি পর্যটকের আশা একটু কমেছে।
প্রথমবার ভারতে বেড়াতে আসা নরসিংদীর তরুণী তিয়ানা তিশা জানান, বাংলাদেশের একটা নির্দিষ্ট দল এবং কিছু মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু এটা উচিত নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাই প্রতিবেশী দেশের সাথে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা উচিত।
শিবচরের বাসিন্দা ইমাম হোসেন জানান, আমি মনে করি দুই বাংলারই শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এক। সেক্ষেত্রে কিছু মৌলবাদী মানুষজন অপপ্রচার করে। কিন্তু আমাদের একত্রিত হয়ে এই অপপ্রচারকে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি এও বলেন, আসলে যারা পণ্য বয়কটের ডাক দেয় তারাও কেনে, যারা ডাক না তারাও কেনে।
আরেক বাংলাদেশী পর্যটক ইলিয়াস মিয়া বলেন, যারা বয়কট করেছেন তারাই ভারতে কেমন প্রভাব পড়েছে ভালো বলতে পারবেন তবে ভারতের প্রবেশ করতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অন্তত ৪ ঘণ্টার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতীয় চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য ও ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন তারা। কারণ বয়কটের জেরে রপ্তানিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব এখনো পড়েনি। তিনি বলেন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের উন্নতির জন্য দুই দেশের পারস্পারিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক সহযোগিতা এমন পর্যায়ে রয়েছে যেখানে ইন্ডিয়া আউট বা ভারতীয় পণ্য বয়কট কখনোই বেশি দিন চলবে না।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ