ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাখির ভাষায় কথা বলেন যে গ্রামের বাসিন্দারা

প্রকাশনার সময়: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৮

তুরস্কের পাহাড় ঘেরা ছায়া-সুনিবির প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কুসকয়। যেখানে গেলে নিজেকে ভিনজগতের মানুষ বলে মনে হতে পারে। প্রথমেই যে বিষয়টি নজর পড়বে, তা হলো- গতানুগতিক শব্দ উচ্চারণ করে কেউ কথা বলে না। পাখির মতো শিস দিয়ে গ্রামটির বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে থাকে।

পাখির মতো শিস দিয়ে তৈরি ভাষার নাম ‘কুস দিলি’। শিস দিয়ে তৈরি বলে একে বলা হয় ‘পাখির ভাষা’। এই গ্রামের লোকেরা পাখির মতোই শিস দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই এই গ্রামকে কুসকয় বা ‘পাখির গ্রাম’ বলা হয়।

গ্রামটিতে মূলত কৃষকরা বাস করেন। তারা চা, ভুট্টা, বীট ও অন্যান্য শস্য চাষ করেন এবং পশুপাখি পালন করেন। তুরস্কের অন্যান্য জায়গার বাসিন্দাদের সাথে তাদের কোনো মিল নেই। তাদের এই গোপন পাখির ভাষা তাদেরকে তুর্কিদের থেকে আলাদা করেছে।

কুসকয় গ্রামে এই পাখির ভাষা প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসছে। গ্রামবাসী তাদের পূর্বসূরিদের থেকে এ ভাষা পেয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ লোক এ ভাষায় কথা বলে, যদিও তাদের প্রধান ভাষা তুর্কি। তবে সেখানে পাহাড়ি এলাকা এবং বাসিন্দাদের বাড়িগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায় তারা যোগাযোগের ক্ষেত্রে শিস ব্যবহার করে থাকে। শিস ব্যবহার করলে সহজে শোনা যায় এবং অনেক দূর থেকেও একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

তারা মুখের ভেতর দুই আঙুল দিয়ে তীক্ষ্ণ সুরে এই আওয়াজ বের করে, যা পাখির শিসের মতোই শোনায়। কুসকয় গ্রামের পাখির ভাষাকে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৪ সাল থেকে সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরে পাখির ভাষা শেখানো শুরু করে।

এভাবেই কোনো শব্দ ব্যবহার না করে কুশকয় গ্রামের বাসিন্দারা কথা বলেন। তবে প্রাত্যহিক জীবনের সকল প্রয়োজনে এই শিস ব্যবহার করলেও কারও সাথে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা গোপন কথার ক্ষেত্রে তারা এই শিস ব্যবহার করেন না। তাহলে যে ধরা খেয়ে যাবেন!

এই কুশকয় গ্রামের তরুণ-তরুণীরাও প্রেম করেন। তবে প্রেমের ক্ষেত্রে তারা শিসের ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। কারণ উচ্চস্বরের এই শিস অনেক দূর থেকে শোনা যায়। তাই নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তারা প্রেমের সম্পর্কে শিস দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

ইউনেসকোর তথ্যমতে, তুরস্কের ঐ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই পাখি ভাষা অর্থাৎ শিস দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেন। সংস্থাটি এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সংকটাপন্ন অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

তবে কুশকয় গ্রামের বাসিন্দারাও তাদের পাখির ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তাদের স্থানীয় স্কুলগুলোতে এই ভাষার উপর বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে, শিস দেওয়া শেখানো হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ