ভয়াবহ সহিংসতা, গভীর মেরুকরণ এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পাকিস্তানের জনগণ সাধারণ নির্বাচনে আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোট দিতে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণের আগের দিন এক স্বতন্ত্রপ্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে জোড়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন কমপক্ষে ২৮ জন। আহত হন অন্তত কয়েক ডজন মানুষ। এর দুই দিন আগে, একটি পুলিশ ক্যাম্পে ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারায় অন্তত ১০ জন। খবর রয়টার্স, দ্য ডন।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ব্যাপক জনপ্রিয় ইমরান খানকে কারাগারে রেখেই দেশটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ, অথচ আগের নির্বাচনে তার দল পিটিআই বিপুল ভোটে জয় পায়। দেশটিতে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অন্য আরও সমস্যা থাকলেও নির্বাচনের আগে ইমরান ইস্যুই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
আজ ২৪ কোটি ১০ লাখ জনগণের দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে ইমরানের দল ও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এদিন দেশটির ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাদের পরবর্তী সরকার কার নেতৃত্বে ইমরান খান নাকি নওয়াজ শরিফ গঠন করবেন তা নির্ধারণ করবে। একইদিন দেশটির চারটি প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভোটার দুটি করে ভোট দিতে পারবেন। একটি জাতীয় আইনসভার জন্য অপরটি প্রাদেশিক আইনসভার ভাগ্য নির্ধারণে।
দেশটির জাতীয় আইনসভার আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে আছে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে আছে ৬১টি, খাইবার পাখতুনখওয়ায় ৪৫টি, বেলুচিস্তানে ১৬টি ও রাজধানী ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৩টি। পাঞ্জাব প্রদেশে জয়ী দলই সাধারণত দেশটিতে সরকার গঠন করে।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে টানা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। সহিংসতা বা কোনো ঝামেলার কারণে ভোট বিঘ্নিত হলে কর্মকর্তারা ভোটের সময় বাড়াতে পারবেন।গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই দেশজুড়ে কট্টরপন্থি জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। ভোটগ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে অন্যতম অস্থিরতা কবলিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখওয়ায় থানায় জঙ্গি হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। তিন প্রতিবেশী দেশ ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক নাজুক হয়ে আছে।
কিন্তু নির্বাচনের আগে এসব ইস্যু নিয়ে কথা তেমন একটা হচ্ছে না। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মূল মনোযোগ ইমরান ও নওয়াজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরেই।
নির্বাচন ইস্যুতে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ হুসেইন হাক্কানি রয়টার্সকে বলেন, 'এই নির্বাচনের প্রচারাভিযানে মূলত নেতাদের ব্যক্তিত্ব বেশি প্রভাবিত করেছে। অর্থনীতিসহ অন্য ইস্যু কম আলোচিত হয়েছে।'
কারাবন্দী ইমরান খানের পেছনে দাঁড়ানোর জন্য তার লাখো সমর্থক অপেক্ষা করে আছেন। তাদের বিশ্বাস, সামরিক বাহিনীর ইন্ধনে ইমরান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে।ঐতিহাসিকভাবেই সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না বলে দাবি করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফকে জেনারেলরা সমর্থন দিচ্ছেন। এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা ইমারনকে বেছে নিয়েছিলেন।
নওয়াজ ও ইমরান, উভয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীই একই অভিযোগ করেছিলেন, সামরিক বাহিনীর ইশারায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তারা। তবে বরাবরের মতো সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করে আসছে।
হাক্কানি বলেন, 'এই নির্বাচন দুই ভুক্তভোগীর লড়াই বলে মনে হচ্ছে। নওয়াজ শরিফ ২০১৭ থেকে ২০২২ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ভুক্তভোগী ছিলেন আর এরপর ভুক্তভোগী হওয়ার দাবি করছেন ইমরান খান।'
নওয়াজের দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) মঙ্গলবার প্রচারণা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী নির্বাচনী বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তাতে তাদের দলনেতাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে ঘোষণা করে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ