চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে কাতারের ভূমিকা এবং হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘হতভম্ব’ বোধ করছে কাতার। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ এবং ‘ধংসাত্মক’ বলেও উল্লেখ করেছে।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ টিভি নেতানিয়াহুর একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে দেখা যায়, ‘আপনারা কখনো দেখেছেন কিংবা শুনেছেন যে আমি কাতারকে ধন্যবাদ দিয়েছি? আমি (ধন্যবাদ) দিইনি।’‘কেন দিইনি? কারণ এটি (কাতার) জাতিসংঘ এবং রেডক্রস থেকে আলাদা নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যাযুক্ত। তাদের (কাতার) ব্যাপারে আমার কোনো বিভ্রম নেই।’‘কিন্তু জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; এবং এক্ষেত্রে আমি যে কোনো পন্থা অনুসরণ করতে প্রস্তুত।’
উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ এবং রেডক্রসের বিরুদ্ধে একাধিকবার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। এই ইহুদি রাষ্ট্রটির ভাষ্য, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে উচ্চকণ্ঠ হলেও হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধারে এ দুই বৈশ্বিক সংস্থার অবস্থান তেমন জোরালো নয়।
চলমান এই যুদ্ধে মধ্যস্থতার পেছনে কাতারের ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই যুদ্ধে জড়িয়েছে। কারণ তারা (হামাসকে) অর্থায়ন করে।’এই ভিডিওটি প্রচার হওয়ার পর বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পর আমরা হতভম্ব বোধ করছি। তার (নেতানিয়াহু) এই বক্তব্য দায়িত্বহীন এবং নিরপরাধ লোকজনের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক; কিন্তু অবাক করার মতো নয়।
কারণ তিনি (নেতানিয়াহু) এই যুদ্ধকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।মাজেদ আল আনসারি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বাঁধার পর ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে মধ্যস্থতার ফলাফল হলো গত নভেম্বরের অস্থায়ী মানবিক বিরতি এবং সেই বিরতির সময় শতাধিক জিম্মির মুক্তি। সবপক্ষের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা ও মধ্যস্থতা ব্যতীত এটি সম্ভব হতো না এবং কাতার এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
‘বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য জন্য পরবর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের কাজ চলছে এবং সেখানেও পূর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে কাতার।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের ছোটো দেশ কাতার। তবে এই দুই রাষ্ট্রের কোনোটিই এ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
সূত্র : বিবিসি
নয়া শতাব্দী /আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ