ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
গৃহবিবাদে তালেবান 

ক্ষমতা দখলের এক মাস, স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশনার সময়: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৪৮
সংগৃহীত ছবি

তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের এক মাস পূর্ণ হলো। কট্টরপন্থী এই সশস্ত্র গোষ্ঠী গত আগস্টের ১৫ তারিখ কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ক্ষমতা দখলের তিন সপ্তাহ পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করলেও এখনো মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ হয়নি।

একদিকে অর্থনৈতিক সংকট চোখ রাঙাচ্ছে তালেবানকে, অন্যদিকে ক্ষমতা নিয়ে গৃহবিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু মিলে এখন হিমশিম অবস্থা তালেবানের। কট্টরপন্থী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের পর আফগানদের উন্নতির সকল স্বপ্নই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

অর্থনীতির বেহাল দশা। চারদিকে শুধু ক্ষুধা আর ক্ষুধা। কাবুলের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল-জাজিরাকে জানান, আফগানিস্তানের প্রতিটি শিশু এখন ক্ষুধার্ত। তাদের কাছে এক মুঠো খাবার কিংবা তেল নেই। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের এক ভিডিও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এখনই ৪০ লাখের বেশি আফগানের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। আফগানিস্তানের ৭০ ভাগ মানুষই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে। সেখানে এখন প্রচন্ড খরা চলছে যা দেশের ৭৩ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করেছে। দেশটির ৩৪ প্রদেশের ২৫টিই খরায় বিপর্যস্ত। আফগানদের জন্য শীতকালীন গম চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশীরভাগ আফগানের ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয় গমের মাধ্যমেই। তাই যদি সেখানে যদি ফসল উৎপাদনও হ্রাস পায় তাহলে তার প্রভাব পড়বে পুরো দেশের ওপরেই। অপুষ্টিতে ভোগার পাশাপাশি বাড়বে মানুষের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কাও। সব মিলিয়ে মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

অন্যদিকে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটির ব্যাংকিং সিস্টেম বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর সামনে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। সেখানে সপ্তাহে মাত্র ২০ হাজার জনকে টাকা তোলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাও সর্বোচ্চ ২০০ ডলার করে। বাড়ছে খাদ্যের দামও। কাবুলে খাবারের দাম দেখা গেছে আকাশচুম্বী। এমন ভয়াবহ অবস্থায় আফগানদের পাশে দাঁড়াতে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির ডাকে সাড়া দিয়ে শতকোটি ডলারের বেশি সাহায্যের অঙ্গীকার করেছে দাতা দেশগুলো। কিন্তু সেই সাহায্য কবে এসে পৌঁছাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে, দেশটিতে সদ্য ঘোষিত তালেবান সরকারের গঠন নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এ ঘটনা ঘটে। তালেবানের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তালেবানের একটি সূত্র বলেছে, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের পদপদবি নিয়ে সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার ও মন্ত্রিসভার এক সদস্যের মধ্যে বিবাদ হয়েছে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এ ঘটনা ঘটে। তবে তালেবান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনা স্বীকার করেনি। বিবিসি সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, মোল্লা আবদুল গনি বারাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহার গেছেন।

তালেবানের এই সরকারে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তাকে কেন প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে, সে সম্পর্কে দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়, তালেবানের মধ্যে অন্তঃকোন্দল রয়েছে। এর একদিকে আছেন বারাদার ও তাঁর সমর্থকেরা, অন্যদিকে আছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। এ জন্য বারাদারকে উপপ্রধানমন্ত্রী ও সিরাজউদ্দিনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। বারাদার ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে আখুন্দকে তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টিকে একটি আপসমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়।

যার ফলে কাবুল দখলের এক মাস পর তড়িৎ গতিতে অর্জিত তাদের সামরিক সাফল্যকে দীর্ঘস্থায়ী একটি শান্তিকালীন সরকারে রূপান্তর করতে গিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠিটির।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ