গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলার ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও তেল আবিব সরকারের দৃশ্যমান কোনো অর্জন না থাকায় অধিকৃত অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে দখলকৃত অঞ্চলগুলো প্রকাশ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের সাক্ষী ছিল।
এই বিভাজন এবং মত বিরোধের ফলশ্রুতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে হাজার লোকের বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছি। এমনকি নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা গঠনের আগেই এসব বিভক্তি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিভিন্ন দল ও তাদের নেতারা মন্ত্রিসভা গঠন এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।
এই কারণে গত ৪ বছরে ৫টি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত পঞ্চম নির্বাচনের ফলাফল ছিল বর্ণবাদী চরমপন্থীদের অংশগ্রহণে নেতানিয়াহুর জোট মন্ত্রিসভা যেটি বিদ্যমান মতবিরোধের ব্যবধান আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল ।
১০০ দিন ধরে চলা গাজার যুদ্ধ এই মতবিরোধের ব্যবধানকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে। এই সমস্যাটি বিভিন্ন আকারে দেখানো হয়েছে। নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভার কিছু মন্ত্রী বিশেষ করে তার সঙ্গে যুদ্ধমন্ত্রীর মধ্যে ব্যাপক মত বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধমন্ত্রী ইয়েভ গ্যালান্ট নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কাজ ব্যাহত করার অভিযোগ করেছেন এবং একইসঙ্গে দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাসও ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল 12 টিভি জানিয়েছে যে নেতানিয়াহুর অফিস বিশ্বাস করে যে গ্যালান্টের অফিস নেতানিয়াহুর সাথে তার ব্যক্তিগত বৈঠকের বিষয়বস্তু ফাঁস করে দিয়েছে। এর আগে গ্যালান্ট বলেছিলেন যে নেতানিয়াহু তাকে গাজা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করেননি যখন তিনি সরকারের যুদ্ধ মন্ত্রী হিসেব আছেন।
মন্ত্রিসভার মধ্যে মতপার্থক্য কেবল প্রধানমন্ত্রী ও যুদ্ধমন্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় মন্ত্রীদের মধ্যেও রয়েছে অবিশ্বাস ও উত্তেজনা। ইতামার বেন গুয়ের সেই মন্ত্রীদের মধ্যে একজন যিনি রাজনৈতিক খেলার সমস্ত নিয়ম ভেঙ্গে দিয়েছিলেন এবং চরমপন্থাকে এজেন্ডায় রেখেছিলেন। এটি এমন একটি বিষয় যেটি যুদ্ধমন্ত্রী গ্যালান্ট এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের আপত্তির মুখে পড়েছিল। এমনকি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীসভার সদস্যদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে বৈঠক পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি।
এসব মতপার্থক্যের পাশাপাশি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়েও বিভক্তিও চরম আকার ধারণ করেছে। বেনি গ্যান্টজ যিনি নেতানিয়াহুর কট্টর সমালোচক এবং যিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন কিন্তু তিনি ইহুদিবাদী যুদ্ধমন্ত্রিসভার সদস্য নিজের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন যার মাধ্যমে এটা দেখায় যে তিনি হামাসের হাতে আটক বন্দী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তার মন্ত্রিসভার অপসারণ এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানায়। অন্য কথায়, একদিকে গ্যান্টজ ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য এবং অন্যদিক নেতানিয়াহুর অন্যান্য সমালোচকদের মতো ইয়ার ল্যাপিডও নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন।
পরিশেষ গাজা যুদ্ধে সামরিক লক্ষ্য অর্জনে নেতানিয়াহুর ব্যর্থতা চলমান রাজনৈতিক বিভাজনগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সমালোচকরা এমনকি মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে এবং লিকুদ পার্টির মধ্যেও গুঞ্জণ রয়েছে যে নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন। অথচ যুদ্ধে প্রতিদিন ইসরাইলের ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির হওয়ার পাশাপাশি শত শত ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে এবং ৪ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ