ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তালেবান নেতাদের দ্বন্দ্ব চরমে!

প্রকাশনার সময়: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৯

আফগানিস্তানের নতুন তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তালেবানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে বিরোধের এ খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান।

বুধবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি সম্প্রতি কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এ সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে এ মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল এবং নতুন মন্ত্রিসভায় ক্ষমতা বন্টনে কোন পক্ষ সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তা নিয়ে এ বিরোধ দানা বাঁধে।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে মন্ত্রিসভার এক সদস্যের তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে দলটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন। সম্প্রতি মোল্লা বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় তার মৃত্যুর গুজব আসে। তালেবান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের অসমর্থিত খবরও আসতে থাকে। যদিও এসব বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে তালেবানের পক্ষ থেকে।

এদিকে গত সপ্তাহে তালেবানের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর অন্যতম মোল্লা বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ার পর থেকেই গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। তার মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময় যাকে নতুন তালেবান সরকারের সম্ভাব্য প্রধান বলে মনে করা হতো সেই বারাদারকে গত কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। রোববার কাবুলে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সঙ্গে তালেবানের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠকেও বারাদার উপস্থিত ছিলেন না।

এ নিয়ে গুজব এতটাই ডালপালে মেলে যে উপদলীয় কোন্দলে বারাদারের নিহত হওয়ার কথা বিবৃতি দিয়ে অস্বীকার করতে হয় তালেবানকে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র সুলাইল শাহীন জানান, মোল্লা বারাদার একটি ভয়েস মেসেজে এক সংঘর্ষে তার নিহত বা আহত হওয়ার গুজব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেছেন ‘এটি মিথ্যা ও পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’

তালেবান একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে, সেটিতে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে এক বৈঠকে বারাদারকে দেখানো হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ ফুটেজটি যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স। তালেবানের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ওই ঝগড়ার পর বারাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহার চলে গেছেন।

গত সপ্তাহে ঘোষিত তাদের অন্তর্র্বর্তী সরকারের সবাই পুরুষ এবং তালেবানের ঊর্ধ্বতন নেতাদের নিয়েই তা গঠন করা হয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকজনকে যুদ্ধ চলাকালে সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু আত্মঘাতী হামলার জন্য দায়ী করা হয়।

তালেবানের এক কর্মকর্তা বিবিসি পশতুকে বলেছেন, মোল্লা বারাদার ও শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রভাবশালী নেতা খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে। ওই সময় কাছে থাকা তাদের সমর্থকদের মধ্যেও ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।

কাতারভিত্তিক একজন ঊর্ধ্বতন তালেবান সদস্য এবং ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এক ব্যক্তি গত সপ্তাহে ওই তর্কাতর্কির কথা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন নতুন উপপ্রধানমন্ত্রী বারাদার। আর এ নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়।

বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে জয়ের কৃতিত্ব তালেবানের কোন অংশ পাবে সেই মতবিরোধ থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। জানা গেছে, বারাদারের বিশ্বাস, এই কৃতিত্ব কূটনীতিরই পাওয়া উচিত যার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা; অপরদিকে হাক্কানি গোষ্ঠীর সদস্যরা ও তাদের সমর্থকদের বক্তব্য, লড়াইয়ের মাধ্যমেই এই জয় এসেছে। সোমবার বারদারের বলে কথিত একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করা হয়, তাতে তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা জানান, ‘আমি ভ্রমণের জন্য দূরে আছি।

এই মুহূর্তে আমি যেখানেই থাকি না কেন আমরা সবাই ভালো আছি।’ তালেবানের বেশ কয়েকটি দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এই অডিও রেকর্ডিংয়ের সত্যাসত্য যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। কোনো ধরনের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটেনি এবং বারাদার নিরাপদ আছেন, তালেবানের পক্ষ থেকে বরাবর এ দাবি করা হলেও তিনি বর্তমানে কী করছেন তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বিবৃতি দিয়েছে তারা। একজন মুখপাত্র বলেছেন, বারাদার তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য কান্দাহার গেছেন। কিন্তু পরে বিবিসি পশতুকে বলেছেন, ‘তিনি ক্লান্ত তাই বিশ্রাম নিতে চাচ্ছেন।’

তালেবানের কথায় অনেকের মনেই সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে। কারণ এর আগে তারা তাদের গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর কথা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন রেখেছিল। ওই পুরো সময়জুড়ে তারা ওমরের নাম দিয়ে একের পর এক বিবৃতি প্রকাশ করে। তালেবান কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বারাদার কাবুলে ফিরে ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক হওয়ার কথা অস্বীকার করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ