ইউক্রেনের দম্পতি হানা ও আন্দ্রি বেরেজাইনেটস প্রথম যেদিন জানতে পেরেছিলেন একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন, সেদিন তাঁদের আনন্দের সীমা ছিল না। কিন্তু যেদিন সন্তানের জন্ম হলো, সেদিনই যুদ্ধ শুরু হলো। চারপাশে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। পৃথিবীতে এসেই প্রথম বোমার শব্দ শুনেছে হানা ও আন্দ্রির তিন কন্যাসন্তান।
হানা প্রথমবার আলট্রাসাউন্ডের পরেই জানতে পেরেছিলেন, তিনি সন্তানের মা হতে চলেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় চিকিৎসক বলেছেন, তাঁরা যমজ সন্তানের মা-বাবা হচ্ছেন। এই আনন্দ নিয়ে তৃতীয় দফা চেকআপে গেলে চিকিৎসক তাঁদের অবাক করে দেন।
জানান, দুটি নয়, হানা আসলে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। ইউক্রেনকাস্ট পডকাস্টকে হানা রসিকতা করে বলেছেন, ‘এরপর আমরা চতুর্থ দফায় চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পেয়েছিলাম। তবে খুব আনন্দিত ছিলাম। আমরা সত্যি সন্তান চেয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কথা শুনেছেন, আমাদের একসঙ্গে তিন সন্তান দিয়েছেন।’
গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের জন্য চেরনিহিভের একটি প্রসূতি হাসপাতালে যান হানা। পরের দিন সকালে অস্ত্রোপচারের জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে খবর ছড়িয়ে পড়ে। হানার ভাই সামরিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনিও হানাকে একই বার্তা দেন, কিন্তু হানা তা বিশ্বাস করেননি।
ভাই তাঁকে বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাঁকে কোথায় পাঠানো হবে, তা তিনি জানেন না। তিনি হানাকে চেরনিহিভ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু হানা চেরনিহিভ ছাড়তে পারেননি। তাঁর অস্ত্রোপচারের সময় ছিল সকাল ৯টায়। হাসপাতালের কর্মীরা গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্মের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, যা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না হানা। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এটি দূরে কোথাও, অন্য কোনোখানে ঘটবে। কিন্তু আমাদের জীবনে ঘটবে, তা ভাবতে পারিনি।’
চেরনিহিভ ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় বেলারুশ সীমান্তে অবস্থিত। সেখান থেকেই রাশিয়ার সৈন্যরা হামলা শুরু করেছিল। অবিরাম গোলাবর্ষণ হয়েছিল। রাশিয়া শহরটি দখল করেনি। তবে শহরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হানা বলেন, সন্তান জন্মের পর সন্ধ্যায় একটু বিছানা থেকে উঠতে সক্ষম হন তিনি। এ সময় তাঁকে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়। তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতিতে বাইরে যেতে হয়েছিল। নার্স বাচ্চাদের উষ্ণ কম্বলে জড়িয়ে দিয়েছিল। ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নবজাতকের সঙ্গে শতাধিক মানুষ ছিল। হাসপাতালের কর্মীরা সেখানে ২০টি নবজাতকের প্রসব করিয়েছেন।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ