বার্তাসংস্থা আনাদোলু সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন গড়ে ১৬০ জন শিশু নিহত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই তথ্য সামনে এনেছে। এছাড়া গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে চালানো ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই প্রায় ৭ হাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৬০ শিশু নিহত হচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মঙ্গলবার জানিয়েছে। জেনেভায় জাতিসংঘের এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তা ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, ‘(ফিলিস্তিনি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৬০ শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে।’
এই পরিস্থিতিতে গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমাতে চলমান সংঘাতে মানবিক বিরতি কার্যকর করা ‘জরুরি প্রয়োজন’ বলে জানান লিন্ডমেয়ার।
তিনি বলেন, ‘গাজার হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, এবং যারা বেঁচে আছেন তারাও ট্রমা, নানা রোগ এবং খাবার ও পানির অভাবে ভুগছেন। বেঁচে থাকার জন্য এসব মানুষের পানি, জ্বালানি, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার নিরাপদ সরবরাহ প্রয়োজন।’
গাজা উপত্যকার উত্তরের হাসপাতালগুলোর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডব্লিউএইচও কেবলমাত্র ‘একবারই’ হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে।
গাজার হাসপাতালগুলোর নিচে হামাসের টানেলের কারণে সেগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে ইসরায়েল যে দাবি করেছে সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন: ‘ হাসপাতালের নিচে কী আছে তা আমরা যাচাই করতে পারি না। আমরা যা যাচাই করতে পারি তা হাসপাতালে এবং মাটির ওপরে যা আছে সেগুলো। হাসপাতালগুলোতে জরুরিভাবে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১০ হাজার ৩২৮ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ২৩৭ শিশু এবং ২ হাজার ৭১৯ জন নারী রয়েছেন।ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজা ফিলিস্তিনি শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া গাজায় ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির (ইউএনডব্লিউআরএ)-এর মতে, গত এক মাস ধরে চলা বর্বর আগ্রাসনে গাজার মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এমনকি ইউএনআরডব্লিউএ-এর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৪ গুণ বেশি মানুষ অবস্থান করছেন। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি করা হচ্ছে বলেও সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ