ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে হামলা বদলে দেয় বিশ্বকে 

প্রকাশনার সময়: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:২৫

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত শহর নিউইয়র্কে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি ভবনে বিমান নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদার জঙ্গিরা। এতে ধ্বংস হয় পাশের আরেকটি ছোট ভবনও। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে অসংখ্য মানুষ। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়েও প্রাণ হারান অনেকে।

এ হামলার শিকার হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন। এদিনের হামলায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার মানুষ।

নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে আসে সাঁজোয়া যান। হামলার আশঙ্কায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সারাদিন বিভিন্ন অজানা স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এই হামলাকে ‘আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ হামলা’ হিসেবে আখ্যা দেয়। ৯/১১ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে যেমন মার্কিন আইন কঠোর হয়, অন্যদিকে তেমনি ঢেলে সাজানো হয় মার্কিন আমলাতন্ত্র। গঠিত হয় নতুন বাহিনী, নতুন মন্ত্রণালয়।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ একতাবদ্ধ হয় পশ্চিমা বিশ্ব। আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহী তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করে তারা। আফগান যুদ্ধ শুরুর পর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে ইরাকেও হামলা হয়। এরপর দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) এবং সেই সূত্রে আরো যুদ্ধ।

ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর চারটি বিমান ছিনতাই করে আল কায়দার ১৯ জঙ্গি। হিস্ট্রি চ্যানেল তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, সৌদি আরবে পলাতক হিসেবে নথিভুক্ত ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে পরিচালিত সংগঠন আল কায়েদা এ হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতির কারণ দেখিয়ে তারা এ হামলা চালায়। বছরখানেক আগেই সংশ্লিষ্ট হামলাকারীদের কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানেই বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেয় তারা। বাকিরা হামলার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিরা লুকিয়ে ছুরি নিয়ে উঠেছিল বিমানে।

সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ মডেলের একটি বিমান আঘাত হানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১১০ তলাবিশিষ্ট নর্থ বিল্ডিংয়ের ৮০তম তলায়। বিমানটিতে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল থাকায় খুব দ্রুতই ভবনে আগুন ধরে যায়। নর্থ বিল্ডিংয়ে আঘাতের মাত্র ১৮ মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী জঙ্গিদের ছিনতাই করা আরেকটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ বিল্ডিংয়ের ৬০তম তলায় আঘাত হানে। এটিও একটি দূরপাল্লার বোয়িং ৭৬৭ বিমান।

এ বিমানটি ছিল ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল ১০টার দিকে সাউথ বিল্ডিং এবং সাড়ে ১০টার দিকে নর্থ বিল্ডিং পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পুড়তে থাকা জেট ফুয়েলের প্রচণ্ড তাপে গলে যায় ভবন দুটির ইস্পাতের কাঠামো। ফলে একটির ওপর একটি তলা ধসে পড়ে পুরো ভবনটিকেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। টুইন টাওয়ার ধসে পড়ার আগ পর্যন্ত মাত্র ছয়জন ব্যক্তি নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। এ হামলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ আহত হন।

যাদের অনেকেই গুরুতরভাবে আঘাত পান। মোট দুই হাজার ৭৬৩ জন টুইন টাওয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতায় গিয়ে প্রাণ হারান ৩৪৩ ফায়ার ব্রিগেড ও চিকিৎসা কর্মী, নিউইয়র্ক পুলিশের ২৩ জন সদস্য এবং পোর্ট অথরিটি পুলিশের ২৩ জন সদস্য।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ