মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, মক্কায় বেশ কয়েকবার বন্যা হলেও তাতে সাঁতার কাটার মতো পানি ছিল না। তাই বৃষ্টির মধ্যে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে দেখা গেলেও বন্যাকবলিত কাবাঘর সাঁতরে তাওয়াফের দৃশ্য নিশ্চয়ই বিরল। তবে সর্বশেষ ১৯৪১ সালে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সেই সময় শায়খ আলি আল-আওয়াদি নামে একজন সাঁতরে তাওয়াফ করেছেন।
সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়া সূত্রে জানা যায়, তখন সাত দিনের অবিরত বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় মক্কা নগরী। পবিত্র মসজিদুল হারামের প্রায় ছয় ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কাবাঘর তাওয়াফ করেন বাহরাইনের ১২ বছর বয়সি সাঁতারু আলি আল-আওয়াদি। পরবর্তী সময়ে তার তাওয়াফ করার ছবি প্রকাশিত পায়। ছবিতে তাকে মাকামে ইবরাহিম থেকে দেড় মিটার দূরত্বে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। আর তার বন্ধুরা কাবার দরজায় বসে রয়েছেন।
২০১৩ সালে কুয়েতের আল রাই টিভিকে স্মৃতিচারণা করে আল-আওয়াদি বলেছিলেন, ‘তখন আমি মক্কার একটি স্কুলে পড়ি। লাগাতার ৭ দিনের বৃষ্টিতে মক্কায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বন্যার পানিতে অনেক মানুষ মারা যায়। এমনকি বাড়িঘর, যানবাহন ও গবাদি পশু ভেসে যায়। সে সময় আমার দুই বন্ধু হানিফ ও মুহাম্মদ আল-তাইয়িব এবং শিক্ষক আব্দুল রউফের সঙ্গে আমি মসজিদুল হারামে যাই। পুরো কাবা প্রাঙ্গণ পানির নিচে ডুবে আছে। তখন আমি পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করি। পুরো কাবা প্রাঙ্গণ পানির নিচে ডুবে আছে। তখন আমি পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করি।’
সাঁতরে তাওয়াফ করার চিন্তা প্রসঙ্গে আল-আওয়াদি আরও বলেন, ‘মূলত আমি দক্ষ সাঁতারু ছিলাম। তাই প্রথমেই সাঁতরে তাওয়াফ করার চিন্তা আসে। আমরা চারজন পানিতে সাঁতার শুরু করি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আমাদের থামাতে চেষ্টা করে। পুলিশের শঙ্কা ছিল, আমরা সাঁতরে হাজরে আসওয়াদ চুরি করতে পারি। পুলিশকে শুধুমাত্র সাতবার তাওয়াফ করার কথা বলে আশ্বস্ত করি। পুলিশ গুলি করে কি না আমি সেই ভয়ে ছিলাম। পরে জানতে পারি, পুলিশের বন্দুকে গুলিই ছিল না। তবে আমার মনে আনন্দের অন্ত ছিল না। কারণ সাঁতরে তাওয়াফ করার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই বিরল। এদিকে আমার দুই বন্ধু কিছুক্ষণ সাঁতরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কাবাঘরের দরজায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।’
জানা যায়, মসজিদুল হারামের জাদুঘর ও বিভিন্ন পুরনো ছবির দোকানে সাঁতরে তাওয়াফ করার দুর্লভ ছবিটি পাওয়া যায়। আল আওয়াদির ছেলে আব্দুল মজিদ অনেক বছর আগে বাবার দুর্লভ ছবিটি কিনে বাবাকে উপহার দেন। ২০১৫ সালে আল-আওয়াদি ৮৬ বছর বয়সে মারা যান।
মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী থেকে জানা যায় যে, সর্বপ্রথম একজন সাহাবি সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেন। তার নাম আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)।
এছাড়াও আরও একজনের নাম জানা যায় যিনি সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেছেন। তিনি হলেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ বদর আল-দীন ইবনে জামআ। তিনি প্রত্যেকবার কাবা প্রদক্ষিণের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেছেন।
কাবা তাওয়াফকারীদের জন্য সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ মক্কায় অনেক বন্যা দেখা গেলেও সাঁতার কেটে তাওয়াফ করার মতো পরিস্থিতি হয়না। ঐতিহাসিকগণ বলেন, এখন পর্যন্ত দুইবার মক্কায় এমন বন্যা হয়েছে যার ফলে কাবা শরীফে সাঁতরে তাওয়াফ করা গেছে। প্রথমটি মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগে আর দ্বিতীয়টি ৭৭ বছর আগে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ