ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে আফগান সাংবাদিকদের খোলা চিঠি

প্রকাশনার সময়: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০২:১২

আফগানিস্তানের গণমাধ্যম কর্মীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এক খোলা চিঠিতে তাদের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরেছেন। আকুতি জানিয়েছেন তাদের রক্ষা করার। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করে ওই খোলা চিঠিতে সাংবাদিকরা পেশার স্বাধীনতার পাশাপাশি তাদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়েছেন। শনিবার আফগানিস্তানের ১৫০ গণমাধ্যম কর্মীর স্বাক্ষরিত ওই খোলা চিঠিটি প্রকাশ হয়। আফগানিস্তানের শীর্ষ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টলো নিউজের খবর।

চিঠিতে সাংবাদিকরা বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদের পাশাপাশি আমাদের পরিবার ও বাড়িঘর হুমকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এবং দাতা দেশগুলোকে আমাদের জীবন ও পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার দ্রুত আহ্বান জানাই’।

আফগানিস্তানের সাংবাদিক আহমেদ নাভিদ কাওশ বলেন, ‘এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ব শুধু চেয়ে চেয়ে অবস্থা না দেখে, তাদের উচিত আমাদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসা’।

ওপর সাংবাদিক রফিউল্লাহ নিকজাদ বলেন, ‘আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছি। জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী। বিশ্বকে অবশ্যই আমাদের আওয়াজ শুনতে হবে’।

উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবান। ওই দিন আশরাফ গনি সরকারেরও পতন হয়। তালেবানের দখলদারিত্ব কায়েম হওয়ার পর দেশটিতে গণমাধ্যম কর্মীরা প্রধানত নারী সাংবাদিকরা স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না। দেশটিতে উগ্রবাদী শাসন জারি হওয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের ভবিষ্যতও রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন অসংখ্য গণমাধ্যম কর্মী। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় সব সংবাদমাধ্যম।

সাংবাদিক নাজিদা আহমদী দেশটিতে অসংখ্য নারী রিপোর্টারদের মধ্যে একজন, যিনি তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে আর সাংবাদিকতা করছেন না।

আহমদী জানান, তার পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। এখন তার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের অন্নসংস্থান কিভাবে করবেন— তা তিনি জানেন না।

নাজিদা আহমদী বলেন, ‘অসংখ্য সাংবাদিকের ভাগ্য আমার জানা নেই। তালেবানদের উচিত নারী মিডিয়া কর্মীদের কাজ করতে দেওয়া— কারণ তাদের অধিকাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী’।

আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে চাওয়া আফগানদের ঢল নামে। এরিমধ্যে ২৬ আগস্ট বিমানবন্দরটিতে হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন তিনজন সাংবাদিক।

ইতিমধ্যে আফগান সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত করছেন এবং তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।

আফগানিস্তানের বেসরকারি বহু সংবাদমাধ্যমের মালিক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালেবানের হাতে গনি সরকারের পতনের পর তথ্য আদান-প্রদানের স্বাধীনতা ও সুযোগ সম্পূর্ণভাবে সীমিত করা হয়েছে। কোনো সরকারি অফিস বা সূত্র সংবাদমাধ্যমের কাজে সহায়তা করছে না।

কাবুল নিউজের প্রধান সম্পাদক এহসানুল্লাহ শাহাক বলেন, ‘দেশে গণমাধ্যমের অবস্থা উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতি সাংবাদিকদের জন্য বাধার সৃষ্টি করেছে’।

উল্লেখ্য যে, তালেবানের অন্যতম মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি এক ঘোষণায় বলেছেন, ইসলামী আইন মেনে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখে গণমাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। তবে আফগান সাংবাদিকরা তালেবানের কথার সঙ্গে বাস্তব চিত্রের কোনো মিল দেখছেন না।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ