ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তালেবানদের অর্থের উৎস কী?

প্রকাশনার সময়: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪৫ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪৮

সম্প্রতি আফগানিস্তান দখল করার ফলে বিশ্বে ফের আলোচনায় আসেন তালেবান গোষ্ঠী। তালেবানরা প্রথম আফগানিস্তান শাসন করেছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শেষঅবধি, মার্কিন বাহিনীর হাতে উৎখাত হওয়ার আগ পর্যন্ত।

এরপর থেকে শুরু করে গত ২০ বছরের সংঘর্ষ এবং হাজার হাজার যোদ্ধার মৃত্যু সত্ত্বেও সম্প্রতি গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব মতে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে আনুমানিক ৭০ হাজার থেকে ১ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা এক দশক আগে মাত্র ৩০ হাজার ছিল।

বিদ্রোহের এই তীব্র মাত্রা বজায় রাখার জন্য তাদের আফগানিস্তানের ভেতরের এবং বাইরের উৎস থেকে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাব মতে ২০১১ সাল থেকেই তালেবানের বার্ষিক আয় প্রায় ৪০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল।

কিন্তু বিবিসির তদন্ত অনুসারে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে তালেবানের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়ে বছরে ১৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু তালেবানরা এত টাকা কোথা থেকে পায়? আফগানিস্তানে এবং বিদেশে করা বিবিসির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তালেবানরা একটি অত্যাধুনিক আর্থিক নেটওয়ার্ক এবং কর ব্যবস্থা চালু করেছে।

তারা বেশ কয়েকটি আয়ের উৎস তৈরি করেছে। তাদের আয়ের প্রধান প্রধান উৎসগুলি হলো:

১. বিদেশি অনুদান

বেশ কয়েকজন আফগান এবং মার্কিন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান, ইরান এবং রাশিয়া সহ কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে তালেবানদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করছিলেন। তবে ওই দেশগুলো এই অভিযোগ বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে।

যা হোক, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতার সহ বেশ কিছু উপসাগরীয় দেশের প্রচুর বেসরকারি নাগরিক তালেবানদের ব্যক্তিগতভাবে বিশাল পরিমাণ টাকা অনুদান দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুদানের পরিমাণ বছরে ৫০ কোটি ডলার হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয় যে, ২০০৮ সালে তালেবানরা বিদেশি উৎস থেকে, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলার পেয়েছে।

২. মাদক ব্যবসা

তালেবানরা দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানের আফিম চাষিদের কাছ থেকে কর তুলছে। আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী দেশ। আফিম থেকেই হেরোইনের মতো মারাত্মক মাদক তৈরি করা হয়।

আফগানিস্তানের কৃষকেরা বছরে ১৫০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার মূল্যমানের আফিম উৎপাদন করে।

আফগান সরকারের কর্মকর্তাদের মতে, আফিম চাষিদের কাছ থেকে ১০% হারে কর সংগ্রহ করে তালেবানরা।

আফিমকে হেরোইনে রূপান্তরিত করা ল্যাবরেটরি থেকে, পাশাপাশি অবৈধ মাদক পাচারকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও কর আদায় করা হয়।

অবৈধ মাদক অর্থনীতি থেকে তালেবানের বার্ষিক আয় আনুমানিক ১০ থেকে ৪০ কোটি ডলার।

আফগান রিকনস্ট্রাকশনের (সিগার) ২০১৮ সালের বিশেষ মহাপরিদর্শক মার্কিন কমান্ডার জেনারেল জন নিকলসন এক রিপোর্টে বলেছেন, তালেবানদের বার্ষিক আয়ের ৬০% আসে মাদক ব্যবসা থেকে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই পরিসংখ্যান ঠিক নয়। তালেবানরা প্রায়শই মাদক ব্যবসায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন কিছু সময়ের জন্য আফিম ও পপি চাষ নিষিদ্ধ করে গর্বও প্রকাশ করেছিল।

৩. বিশাল এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ

তালেবানরা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার ওপর দিয়ে চলাচলকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও কর আদায় করে। ২০১৮ সালে ব্যবসায়ীদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে তালেবানরা ঘোষণা দেয় যে, তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জ্বালানি ও নির্মাণ সামগ্রী সহ সব পণ্যের ওপর কর দিতে হবে।

আফগান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, তালেবানরা এখন দেশের সমস্ত প্রধান বাণিজ্য রুট, সেই সঙ্গে সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণ করছে। আমদানি ও রপ্তানি থেকে আয়ের আরও সম্ভাব্য উৎস তৈরি করেছে।

গত দুই দশকে, পশ্চিমা অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণও অনিচ্ছাকৃতভাবে তালেবানদের পকেটে চলে গেছে।

প্রথমত, তালেবানরা রাস্তাঘাট, স্কুল এবং ক্লিনিকসহ উন্নয়ন ও অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর কর আরোপ করেছে, যেগুলোর বেশির ভাগই পশ্চিমাদের অর্থায়নে হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ধারণা করা হয় যে, তালেবানরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীকে পণ্য সরবরাহকারী ট্রাক চালকদের কাছ থেকেও বছরে কয়েক কোটি ডলার ট্যাক্স হিসাবে আদায় করেছে।

আফগান সরকারের বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা থেকেও তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে বলে মনে করা হয়।

আফগানিস্তানের বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান বিবিসিকে ২০১৮ সালে বলেছিলেন যে, তালেবানরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিল থেকে বছরে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে।

এবং যুদ্ধ থেকেও তাদের আয় হয়। প্রতিবার যখন তালেবানরা একটি সামরিক চৌকি বা একটি শহুরে কেন্দ্র দখল করে, তারা কোষাগার খালি করে ফেলে এবং প্রচুর অস্ত্র, সেই সঙ্গে গাড়ি এবং সাঁজোয়া যানও জব্দ করে।

৪. খনি এবং খনিজ সম্পদ

আফগানিস্তানে প্রচুর খনিজ সম্পদ এবং মূল্যবান পাথর রয়েছে। এর বেশির ভাগই বছরের পর বছর যুদ্ধের ফলে শোষিত। আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, আফগানিস্তানের খনি শিল্প থেকে বছরে আনুমানিক ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব।

খনি থেকে বেশির ভাগ উত্তোলনই হয় ছোট আকারে এবং এর বেশির ভাগই অবৈধভাবে করা হয়।

তালেবানরা খনির স্থানগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এবং আইনি ও বেআইনি খনি কার্যক্রম থেকে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশ্লেষণাত্মক সহায়তা ও নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দল বলেছে, তালেবানরা দক্ষিণ হেলমান্দ প্রদেশের ২৫ থেকে ৩০টি অবৈধ খনির অপারেশন থেকে বছরে ১ কোটি ডলারের বেশি করে আয় করেছে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ