ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
বোমায় নিহত বেড়ে ১১০ 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা তালেবানের 

প্রকাশনার সময়: ২৮ আগস্ট ২০২১, ০০:১২

আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তালেবান। পশ্চিমা মদদপুষ্ট ঘানি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের ১৩ দিনের মাথায় এ সরকার গঠন করা হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছে সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি। দেশটির সব জাতি ও গোত্রের নেতাদের সমন্বয়ে তালেবানের দ্বিতীয় মেয়াদের এ সরকার গঠিত হবে।

এদিকে তালেবানের সঙ্গে তুরস্কের প্রথম বৈঠক হয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের (ইসলামিক স্টেট) ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৩ মার্কিন সেনা ও তালেবানের ২৮ সদস্যও রয়েছে। আর আহত হয়েছে প্রায় হাজার জন। হতাহতের এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের অ্যাবি ফটকের কাছে প্রাণঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তবে এ হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তালেবানকে দোষারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারা তালেবানের নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন, তার ডজনখানেক নাম ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কতদিন হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি।

তালেবান সূত্রে আরো জানা যায়, এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে আমির-উল মুমিনিনদের নিয়ে (কমান্ডার অব দ্য ফেইথফুল)। তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান পরিচালনা করবে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিল পরবর্তীকালে সরকার গঠন ও মন্ত্রির দায়িত্ব পেতে পারেন।

কাউন্সিলের শীর্ষ এ নেতারা বিচারিক, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, তথ্য এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন।

তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার বর্তমানে রাজধানী কাবুলে অবস্থান করছেন। এদিকে নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনায় বসতে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব কান্দাহার থেকে ফিরেছেন।

মাত্র ৪ কোটি জনসংখ্যার আফগানিস্তানে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী রয়েছে। এর প্রতিটি গোষ্ঠীই কোনো না কোনোভাবে কেন্দ্রীয় রাজনীতির দ্বন্দ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দেশটির সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হচ্ছে পশতুনরা। এরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ ভাগ। সাধারণ সুন্নি মুসলিমরা প্রধানত পশতুন ভাষায় কথা বলে এবং ১৮ শতকের পর থেকে তারা আফগান রাজনীতিতে সক্রিয় অবদান রেখে আসছে। তবে নতুন সরকারে তাজিক ও উজবেক গোষ্ঠীর কাউকে নতুন মুখ হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

আল জাজিরার অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, প্রথমবারের মতো তালেবানের সঙ্গে তুরস্কের বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনার কাজ করতে তালেবানের দেয়া প্রস্তাব এখনো পর্যালোচনা করছেন তারা।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাংবাদিকদের সামনে আরো বলেন, কাবুলে তালেবানের সঙ্গে আমরা প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছি। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়। প্রয়োজনে আরো বৈঠকে বসতেও রাজি আছে তুরস্ক। কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা এমন তথ্য জানিয়েছে।

বিবিসি বলেছে, নিহতদের মধ্যে ১৩ মার্কিন সৈন্য এবং তালেবানেরও ২৮ সদস্য রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, বিস্ফোরণ ঘটেছে বিমানবন্দর লাগোয়া ব্যারন শিবিরের ভেতরের জটলা থেকে। যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছেন, তারাই ব্যারন শিবিরে জড়ো হন। আরো হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। ফলে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে দেশটির সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও কাবুলের বিমানবন্দরের অ্যাবি ফটকের কাছে প্রাণঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। এ হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তালেবানকে দোষারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রয়টার্স জানায়, আইএসের আমাক বার্তা সংস্থা বৃহস্পতিবার তাদের এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসলামিক এই দলটির এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী কাবুল বিমানবন্দরের কাছে ‘ব্যারন ক্যাম্প’-এ মার্কিন সেনাবাহিনী ও তাদের হয়ে কাজ করা আফগান এবং দোভাষীদের ভিড়ে ঢুকে যেতে সক্ষম হয়েছে। এরপরই তাদের মধ্যে বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায় সে।

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা এমন হামলার আশঙ্কা জানিয়ে বলেন, ইসলামিক স্টেটের খোরাসান গ্রুপ (আইএসআইএস-কে) এর পেছনে থাকতে পারে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা এও বলেন, আঞ্চলিক আইএস জঙ্গিরাও এ হামলার পেছনে আছে বলে ধারণা করছেন তারা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুলে বিমানবন্দরের কাছে ব্যারন হোটেলের ফটকে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে গোলাগুলিও হয়। তার পরপরই বিমানবন্দরের অ্যাবি ফটকের কাছে ভিড়ের মধ্যে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তালেবান সদস্যরাও বিস্ফোরণে আহত হন।

আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন বাইডেন কাবুলে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট। এতে কাবুল বিমানবন্দরে হামলা নিয়ে কথা বলবেন তিনি। বাইডেনের ভাষণের পর নিয়মিত সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি।

বৃহস্পতিবার কাবুলে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৮ মার্কিন সেনাসদস্য। হামলার জন্য জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকে দায়ী করেছে পেন্টাগন। আইএসের পক্ষ থেকেও হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে।

এদিকে আফগানিস্তানে এখনো হাজারখানেক মার্কিন নাগরিক রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্টকমের শীর্ষ জেনারেল কেনেথ ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ