ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

যে হীরা হিটলার চুরি করেছিলেন!

প্রকাশনার সময়: ২২ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৫

কখনও ভারতের নবাবের দখলে কখনও বা ইতালির রাজপরিবারের মুকুটে শোভা পেয়েছে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা। ইতিহাসের কানাঘুষা রয়েছে- লোভে পড়ে নাকি অ্যাডলফ হিটলার এই হীরাটি চুরি করে নিয়েছিলেন। বর্তমানে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা কোন দেশে বা কার কাছে রয়েছে তা অজানা।

কোটি টাকা মূল্যের এই হীরা নাকি কালের নিয়মে হাতবদল হতে হতে হারিয়েই গেছে। ‘ফ্লোরেনটাইন’ হীরার সাক্ষী রয়েছে বিশ্ব ইতিহাসের। রাজার মুকুট থেকে ব্রোচের শোভা বাড়িয়ে এসেছে এই হীরা। ইতিহাসবিদদের মতে, এই হীরার ওজন ১৩৭ ক্যারেটের কাছাকাছি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি টাকা। হালকা হলুদ বর্ণের ‘ফ্লোরেনটাইন’ হীরার মধ্যে ধরা দেয় সবুজ রঙের খেলা। ইতিহাসবিদদের বেশিভাগের দাবি—এই হীরা এমনই দেখতে ছিল যে কেউ কেউ তাকে কাচ ভেবেও ভুল করতেন।

ইতিহাসবিদদের মতে, ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা প্রথম দেখা যায় ‘ডিউক অব বার্গান্ডি চার্লস দ্য বোল্ড’-এর মুকুটে। গহনা নির্মাতা লোডেউইক ভ্যান বার্কেন এই হীরা কেটে রাজার মুকুটে বসিয়েছিলেন। ইতিহাসবিদরা কেউ কেউ মনে করেন, ১৪৭৬ সালের ২২ জুন মোরাটের যুদ্ধ চলাকালীন চার্লসের মুকুট থেকে নাকি ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে যায়। সেই হীরা আর খুঁজে পাননি চার্লস। যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই চিরতরে হারিয়ে যায় হীরাটি।

আদতে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা হারায়নি। যুদ্ধক্ষেত্রে সেই হীরা খুঁজে পেয়েছিলেন এক সৈন্য। তিনি হীরাটি দেখে ভেবেছিলেন যে, এ কোনো রঙিন কাচের টুকরো। কিন্তু দেখতে অসাধারণ হওয়ার কারণে তা বিক্রি করে দেন তিনি। হাতবদল হতে হতে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা সুইজারল্যান্ড হয়ে ইতালিতে ঘুরে আসে। ইতালির লুডোভিকো স্ফোরজা হীরাটি দেখে তার আসল মূল্য নির্ধারণ করেন। তিনি বুঝতে পারেন, এটি কোনো কাচের টুকরো নয়। এটি আসলে মহামূল্যবান হীরা। ফ্লোরেন্টাইন হীরাফ্লোরেন্সের মেডিসি রাজপরিবারকে দেন লুডোভিকো। মেডিসি বংশের রাজা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাদের বংশের শেষ পুরুষ উত্তরাধিকারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা না পর্যন্ত এই হীরা তাদের মুকুটে শোভা পাবে। ১৭৪৩ সাল পর্যন্ত ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা মেডিসি বংশের দখলে থাকে। বংশের শেষ রাজার মৃত্যুর পর মেডিসি বংশের সব গহনাগাটি তাদের এক নিকটাত্মীয়ের দখলে চলে যায়। সেই তালিকায় ছিল মুকুটে থাকা হীরাটিও। ফ্লোরেন্সের পর অস্ট্রিয়ার রাজপরিবারের মুকুটে শোভা পেতে থাকে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা। ফ্রান্সিস স্টিভেন যখন সিংহাসনে বসেছিলেন তখন সেই হীরা তার মুকুটে শোভা পেয়েছিল। ১৯১৮ সালে তাদের বংশের বিনাশ হয়।

তার পর আবার শুরু হয় হীরার হাতবদল। হাতবদল হতে হতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি হীরার ব্রোচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকের মতে, ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি মুকুট থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং তার ওপর কারুকার্য করে হীরার ব্রোচ হিসেবে ব্যবহূত হয়। কিন্তু এই হীরাই যে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরা তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন যে, অস্ট্রিয়া থেকে ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি আমেরিকার হাত ঘুরে ভিয়েনায় গিয়ে পৌঁছায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হীরাটি হিটলারের নজরে আসে। লোভে পড়ে হীরাটি দখল করেন তিনি। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব আমেরিকার ট্রেজার রুম আবার অন্য নথি দিয়েছে। তাদের মতে, ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি দক্ষিণ আমেরিকায় ছিল। সেখানে বারবার হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছিল হীরার আকৃতিও। তার পর তা আবার আমেরিকায় ফিরে আসে। ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি আমেরিকা থেকে হাতবদল হয়ে জেনেভায় ফিরে আসে। ১৯৮১ সালে নাকি জেনেভায় কম দামে এই হীরার মতো দেখতে অবিকল একটি হীরা বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু এই হীরাটি ‘ফ্লোরেন্টাইন’ কিনা, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে বহু শতকের ইতিহাস বহন করা ‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরাটি শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যায়। এর বর্তমান ঠিকানা কোথায়, সে বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না।

‘ফ্লোরেন্টাইন’ হীরার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের ইতিহাসও। দক্ষিণ ভারতে যখন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজত্ব চলছিল তখন তাদের সংগ্রহে ছিল এই হীরাটি। পরে নাকি এই হীরা ইতালির এক ব্যবসায়ীর হাতে আসে। তবে এ বিষয়ে ইতিহাসের পাতায় কোনো উল্লেখ নেই। কোনো দস্তাবেজ পাওয়া যায়নি। আনন্দবাজার।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ