ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তালেবান সাম্রাজ্যে নতুন আতঙ্ক মাসুদ!

প্রকাশনার সময়: ২৩ আগস্ট ২০২১, ১৬:৩০

গত ১৫ আগস্ট দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আফগান বাহিনীর এক প্রকার বিনা প্রতিরোধে কাবুল দখলে নেয় তালেবান। এরপর দেশটিতে সরকার গঠনের নিমিত্তে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা তালেবান নেতারা দেশে ফিরতেও শুরু করেছেন। তালেবান দেশটিতে সরকার গঠনের নিমিত্তে তোড়ছোড় শুরু করেছে বলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।

ঠিক এই সময়েই তালেবান সামনে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বিলাতফেরত আফগান যুবক আহমেদ মাসুদ। তাই স্বাভাবিক কারণেই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা।

ইতিমধ্যে তালেবানের কাছ থেকে উত্তর কাবুলের বাগলান প্রদেশের তিনটি জেলার নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা বলে খবর প্রকাশ করেছে দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট। এরপরই আলোচনার কেন্দবিন্দে চলে আসেন মাসুদ।

জানা যায়, তালেবান সাম্রাজ্যে হঠাৎ নতুন আতঙ্ক হয়ে আবির্ভূত হওয়া এই মাসুদ শাহ আহমেদ মাসুদের ছেলে।

শাহ আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে পঞ্জশিরে যোদ্ধারা আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনী, এর পর নব্বইয়ের দশকে তালেবানকে ঠেকিয়েছিলে। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।

কমিউনিস্টবিরোধী যুদ্ধে অসমসাহসিকতার জন্য তাকে ‘পঞ্জশিরের সিংহ’ নামে ডাকা হয়। আফগানদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবেও তার নাম উচ্চারিত হয়। শাহ আহমদ মাসুদ তালেবানের পূর্বের শাসনামলে আল কায়েদার ছদ্মবেশী অনুচরের হাতে নিহত হন বলে জানা গেছে।

মাসুদ জানান, বর্তমানে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে যোদ্ধারা এসে পঞ্জশিরে ঘাঁটি গেড়েছেন। তালেবানের বিরুদ্ধে শুধু পঞ্জশির হাতিয়ার তোলেনি, আফগানিস্তানের আরও বিভিন্ন জনজাতি এই যুদ্ধে নাম লিখিয়েছে। তাজিক, উজবেক, হাজারা থেকে পস্তুন, সকল জনজাতি তালেবান বিরোধিতায় নেমেছে। তবে তিনি এও দাবি করেন যে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আলোচনাই একমাত্র উপায়।

দুবাই ভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে মাসুদ বলেন, ‘এমন কোনও সরকারে আমার আপত্তি নেই যেখানে তালেবানও অংশ নিচ্ছে। তবে তালিবান যদি সর্বগ্রাসী শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করে, তবে আন্তর্জাতিক মহলের সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত হবে না। কাবুলের সরকারে আফগানিস্তানে বসবাসরত সকল জনজাতির অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’

মাসুদের স্পষ্ট বক্তব্য, পঞ্জশির আত্মসমর্পণ করবে না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা তালেবানকে প্রতিরোধ করবে। সেই সাথে বিশ্ববাসীর সাহায্যও চান মাসুদ। যদিও মাসুদ বলেন, ‘তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে রক্তপাত চান না। তালিবানের সঙ্গে আলোচনা চলছে শান্তিপূর্ণ মিটমাটের ।’

অন্যদিকে প্রতিরোধ বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য ৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে তালেবান। ৪ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামার হুশিয়ারী দিয়েছে কাবুল বিজেতারা।

আবার বিদ্রোহীরা তালেবানকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সরকারে তাদের জায়গা দিতে আহ্বানও জানিয়েছেন। তবে তালেবান নারাজ।

এরই মাঝে রবিবার(২২ আগস্ট) মাসুদ বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে না নিলে যুদ্ধ অনিবার্য।’ তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে আরও বলেন, ‘বিদ্রোহী যোদ্ধারা শুধুমাত্র পঞ্জশিরের জন্যে লড়ছে না, তারা গোটা আফগানিস্তানের জন্য লড়ছে।’

আহমদ মাসুদ আরও বলেন, ‘আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করেছি, তালেবানকেও মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’

তিনি জানান, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন। ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নেওয়া মাসুদ মনে করেন, ‘শুধু আফগানিস্তান নয়, বিশ্ব শান্তির জন্যও বিপজ্জনক তালেবান।’

উল্লেখ্য, আফগান রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর পঞ্জশির। কাবুলের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় এর অবস্থান। ভৌগলিক অবস্থান এই এলাকাকে কৌশলগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। উত্তর দিকে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। পঞ্জশির নদীর ওপর তৈরি শরু পথই একমাত্র ভরসা। দেড় লক্ষ জনসংখ্যার এই এলাকা তাজিক জাতিগোষ্ঠীর। তালিবানরা পাশতুল। তালেবান দখলের আগে পঞ্জশির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্বায়ত্ব শাসন দাবি করেছিল। ন্যাটোর কাছেও পঞ্জশির ছিল নিরাপদ এলাকা। একটা সময় পঞ্জশির চিন ও তাজিকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিল। নিজের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে বর্তমানে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে এই অঞ্চলটি।

আর এই উপত্যকায় বসে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। তার সঙ্গে আছেন গনি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল বিসমিল্লাহ মোহাম্মদী ও আফগানিস্তানের প্রয়াত মোজাহিদীন কমান্ডার শাহ আহমদ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ।

নয়া শতাব্দী/জেআই/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ