ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মহামারিতে পেরুর ৯৩ হাজার শিশু এতিম

প্রকাশনার সময়: ২২ আগস্ট ২০২১, ০৫:৫৫

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বহু শিশু অভিভাবক হারিয়েছে। এতে দারিদ্র্য আর হতাশার মধ্যে বসবাস করছে তারা। লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে মহামারি শুরুর পর গত দেড় বছরে ৯৩ হাজার শিশু একজন করে অভিভাবক হারিয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। পুরো বিশ্বে অভিভাবক হারানো শিশুদের সংখ্যা ১৬ লাখ।

এসব শিশুর অনাথ হওয়ার বিষয়টিকে ‘গোপন মহামারি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন গবেষকরা। রাহুর গ্রাসের মতো করোনার ভয়ংকর রূপ পরবর্তী প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। করোনার কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু বেশ কঠিন সংকটের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের ভাসমান শ্রমিক, আবাসন সংকট আর দারিদ্র্যর মধ্যে করোনা আরো নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যা সারাবিশ্বের মাথাপিছু হিসাবে সর্বোচ্চ।

ল্যানসেটের গবেষণা বলছে, গত এপ্রিল থেকে পর্যন্ত কেবল পেরুতেই ৯৩ হাজার শিশু অভিভাবক হারিয়েছে। এদের মধ্যে একশ’ জনে একজন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বয়স্কদের চেয়ে কম আক্রান্ত হওয়ায় শিশুদের ওপর করোনা মহামারির প্রভাব অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। যদিও পেরুতে করোনায় এক হাজার শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পেরুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ইউরি কুটিপ বলেন, আমরা যদি বাবা-মা বা অন্য কোনো অভিভাবক শূন্যের নেতিবাচক প্রভাবটা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হিসেব করি তাহলে এটি দাঁড়ায় যে, ওই পরিবার আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সম্প্রদায় বা পারিবারিক কাঠামোও ভেঙে যাচ্ছে। এসব ঘটনা যেমন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে।

করোনা ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন জারি করার কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে, যার কারণে শিশুরা হতাশায় ভুগছে। পেরুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, রাজধানী লিমায় তিনজনের মধ্যে একজন শিশু মানসিক স্বাস্থ্যের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

পেরুতে নিযুক্ত সেভ দ্য চিলড্রেনের কোভিড রেসপন্সের (এসসিপি) সমন্বয়কারী রোক্সানা পিংগো বলেন, হিসাব করে দেখা যায় , পেরুতে করোনা আক্রান্ত হয়ে যে এক হাজার শিশু মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগই হতাশার মধ্যে ছিল।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত মার্চে পেরু সরকার ‘অরফান পেনশন’ চালু করে। এর আওতায় দায়িত্ব নেয়া ব্যক্তিকে একজন এতিম শিশু যে মা অথবা বাবা অথবা ২ জনকেই হারিয়েছে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকছে। তারা প্রতি মাসে দুইশ’ পেরুভিয়ান করে পাচ্ছেন। যা একজন শিশুর বয়স ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত চালু থাকবে।

গত মার্চে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোটা বিশ্বে স্কুলের হিসেবে যত শিশু নিখোঁজ রয়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ বলছে, শিক্ষা বৈষম্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রজন্মের সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ