ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তালেবানের নাগালের বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ

প্রকাশনার সময়: ২১ আগস্ট ২০২১, ০৮:২৫ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২১, ০৮:৪৮

সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন, তালেবান যেন বিদ্যুৎগতিতে আফগানিস্তানকে কব্জা করে ফেলেছে। তারপরও, সশস্ত্র গোষ্ঠীটি আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সিংহভাগের নাগাল পাবে না।

সরকারি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি জানায়, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও অন্যান্য সম্পদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক- ডা আফগানিস্তান ব্যাংকের (ডিএবি) অধীনে রয়েছে। কিন্তু, বেশিরভাগ সম্পদ রাখা হয়েছে বিদেশে। ব্যাংকের গভর্নর আজমল আহমেদি নিজেও তালেবানের নাগালের বাইরে। তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

গভর্নর আহমেদি বুধবার (১৮ আগস্ট) এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, "তালেবান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকায়- তারা এসব সম্পদের নাগাল পাবে না। কারণ বিদেশী সরকারগুলো এখন আফগানিস্তানের সম্পদ ফ্রিজ করবে।"

তবে আফগানিস্তানে থাকা রিজার্ভের যৎসামান্য বা দশমিক ১ থেকে দুই শতাংশ তহবিল তালেবানের হাতে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত শনিবার তালেবান সরকারি কোষাগার, জনসেবা অবকাঠামো ও সরকারি ভবনগুলোকে জাতীয় সম্পত্তি বলে ঘোষণা করার সময় এগুলো সর্বতোভাবে রক্ষার আহবান জানায়।

অনলাইনে প্রকাশিত ডিএবির সর্বশেষ আর্থিক বিবৃতি অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির রিজার্ভে মোট সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলার; এরমধ্যে স্বর্ণ মজুদ ১৩০ কোটি ডলার এবং ২১ জুন নাগাদ বিনিময় হার অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের মূল্যমান ৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। গেল সপ্তাহ নাগাদ সম্পূর্ণ রিজার্ভের অঙ্ক ৯০০ কোটি ডলার ছিল বলে জানিয়েছেন আহমাদি।

বিদেশে থাকা সিংহভাগ সম্পদ :

বিশ্বের আর্থিক খাতের সিংহভাগ আজো নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমা ব্যাংকিং ব্যবস্থা। উচ্চ মুনাফা ও নিরাপত্তার কারণে উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিউইয়র্কে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বা যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে রাখে।

ডিএবি'র সংশোধিত বিবৃতি অনুসারে, ফেডারেল রিজার্ভের ভল্টে এক লাখ কোটি আফগানির বেশি মূল্যের স্বর্ণের বার রাখা আছে, সে সময়ে এর মূল্য ছিল ১৩২ কোটি ডলার।

এছাড়া, আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির মোট বিনিয়োগের মূল্যমান ছিল ৬১০ কোটি ডলার। জুন প্রতিবেদনে এসব বিনিয়োগের বিস্তারিত অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে অর্থবছর শেষের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সিংহভাগ বিনিয়োগ করা হয় মার্কিন সরকারের ট্রেজারি বন্ড ও বিল ক্রয় মাধ্যমে।

ডিএবি'র পক্ষে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি) এসব বিনিয়োগ সম্পন্ন করে।

এছাড়া, ছোটখাট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টকে (বিআইএস) ব্যবহার করেছে কাবুল। তুরস্ক ভিত্তিক ইকোনমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও বৈদেশিক সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যম ছিল।

টুইট বার্তায় আহমাদি আরো জানান, "আন্তর্জাতিক মান অনুসারে বেশিরভাগ সম্পদ নিরাপদ রয়েছে। যার প্রধান অংশই হচ্ছে ট্রেজারি বন্ড ও স্বর্ণ মজুদ।"

বিশ্বব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিংহভাগ সম্পদ ফেডারেল রিজার্ভ ও বিআইএসে জমা রাখার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি।

আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষিত সম্পদ সম্পর্কে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে যোগাযোগ করে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি। কিন্তু ওই কর্মকর্তা সাফ সাফ জানিয়ে দেন, ফেডারেল রিজার্ভ বিদেশী গ্রাহক অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং সেখানে থাকা সম্পদের বিবরণও গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করে না। তবে বিশেষ কোন ঘটনায় যদি বিদেশী কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষিত সম্পদের মালিকানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়- সে সম্পর্কিত দিকনির্দেশনার জন্য মার্কিন সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হয়।

এব্যাপারে জো বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন; "যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কোনো সম্পদ তালেবানের পাওয়ার সুযোগ নেই।"

এদিকে ৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের সম্পূর্ণটাই মার্কিন মুদ্রায় রাখা হয়েছিল। আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ডিএবি) প্রধান কার্যালয়, শাখা অফিস এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রাখা ছিল এসব অর্থ। তবে তালেবান এখন এসব স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে।

আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থবছর শেষের বিবৃতি অনুসারে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অবস্থিত তাদের ভল্টে ১৬ কোটি ডলারেরও কম পরিমাণ স্বর্ণের বার ও রুপোর কয়েন রক্ষিত ছিল।

ভল্টে আরো ছিল আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ, দুই হাজার বছর পুরনো স্বর্ণালঙ্কার ও কয়েন- এই প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে ব্যাক্ট্রিয়ান ট্রেজার বলা হয়।

ইউনেস্কো সূত্রে আরো জানা যায়, প্রায় ২১ হাজার প্রত্নসম্পদ চিরতরে হারিয়ে গেছে বলে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেজমেন্টে তৈরি এক গোপন ভল্ট থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। মূলত, তালেবানদের হাত থেকে বাঁচাতেই এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলেন তৎকালীন কর্মকর্তা।

গেল জানুয়ারিতে ব্যাক্ট্রিয়ান ট্রেজারকেও বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেন আফগান আইনপ্রনেতারা। স্থানীয় গণমাধ্যম টোলো নিউজ তাদের বরাতে জানায়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে, এগুলো চুরি হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি বলে এমপি'রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

তালেবান আইএমএফ- এর এসডিআর তহবিল পাবে না :

গেল জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ৯৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের সম্পদ থাকার প্রাক্কালন করেছিল আইএমএফ। যা দিয়ে ১৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারতো কাবুল। অবশ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে কোন দেশের হাতে ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সম্পদ থাকার নিয়ম রয়েছে।

তবে আইএমএফ- এর ৬৫ হাজার কোটি ডলারের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) তহবিলে আফগানিস্তানের অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত অর্থ প্রদান বকেয়া রয়েছে। আইএমএফ- এর ১৯০টি সদস্য দেশ এর সদস্য।

ডলার, ইউরো, স্টার্লিং এবং ইয়েন বিনিময়ের মাধ্যমে তহবিলটি এসডিআর সহযোগিতা দিচ্ছে, যা মহামারি প্রভাবিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর পড়তি রিজার্ভের ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে চালু করে আইএমএফ। এখানে সদস্য হিসাবে আফগানিস্তানের দেওয়ার কথা ছিল সাড়ে ৪৫ কোটি ডলার সমমূল্যের আফগানি মুদ্রা। বিনিময়ে ডলার, ইউরো বা ইয়েন পাওয়ার কথা ছিল দেশটির।

তালেবান এসডিআর তহবিলের অর্থ হাতে পেলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তা মেনে নেবে না। তবে এসডিআর বরাদ্দ পাওয়া সব দেশের সরকার এটি চাইলেই হাতে পায় না। সূত্র: সিনএনবিসি।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ