জ্বরকে আমরা অনেক সময়ই গুরুত্ব দেই না। এই গুরুত্ব না দেয়া অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। শারীরিক নানা জটিলতা থেকেই জ্বর হয়ে থাকে।
জ্বরের অনেক ধরন থাকে। জ্বরকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাল জ্বর এবং প্যারাসাইটিক জ্বরে ভাগ করা হয়।
বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এই দুটি জ্বরের মধ্যে পার্থক্য আছে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যায়, রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকে, চিকুনগুনিয়ায় এসব থাকে না। এই দুটি জ্বরের প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ডা. তানভীর আহমেদ।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। বেশিরভাগ ডেঙ্গুজ্বর ছয়-সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে ঝুঁকি থাকে।
লক্ষণ
* প্লাটিলেট কমে যায়। শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া ও চোখ ব্যথা, চোখ থেকে পানি পড়া, অরুচি বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।
* বিভিন্ন স্থানে হামের মতো র্যাশ হতে পারে।
* হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু হলে দাঁত ও মাড়ির গোড়া থেকে, নাক দিয়ে বা বমির সঙ্গে, পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। গায়ে রক্ত জমে ছিটা ছিটা দাগ থাকতে পারে।
চিকিৎসা
* রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
* যথেষ্ট পরিমাণ পানি বা তরল খাবার খেতে হবে।
* জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ ছাড়া ব্যথানাশক অ্যাসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।
* রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
* কারো ডেঙ্গুজ্বর হলে মশারি ব্যবহার করে রোগীকে আলাদা রাখুন। এতে অন্যরাও রক্ষা পাবে।
চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই ভাইরাসজনিত একটি অসুখ চিকুনগুনিয়া। এটি ছড়ায় স্ত্রী জাতীয় এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস মশার কামড়ের মাধ্যমে। চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের ১০ বা তারও বেশি জয়েন্টে আক্রমণ করতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
লক্ষণ
* চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গুজ্বরের মতোই, তবে দেহের তাপমাত্রা একটু বেশি (প্রায়ই ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত) থাকে। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া থাকে এবং এক সময় নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
* হাত বা পায়ের আঙ্গুুল, গোড়ালি, কবজি, মেরুদ- বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার সঙ্গে তা ফুলেও যেতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও ব্যথা থাকতে পারে।
* তীব্র মাথাব্যথা, মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দেয়।
* জ্বর কমে যাওয়ার পর ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের মধ্যে ব্যথা চলে যায়। বাকি ৩০ শতাংশের ব্যথা বেশ কিছুদিন থাকে।
* ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যায়, রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকে, চিকুনগুনিয়ায় এসব থাকে না।
চিকিৎসা
* এডিস মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয় বলে এ থেকে বাঁচতে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস ও মশা নির্মূল করা উচিত।
* রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি, ফলের জুস বা অন্যান্য তরল খেতে দিতে হবে।
* সংক্রমিত অবস্থায় সব ধরনের সামাজিকতা এড়িয়ে চলুন।
* চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে বাড়িতেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এ রোগের নির্ধারিত কোনো
চিকিৎসা নেই।
* সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এতে জ্বরের পাশাপাশি ব্যথাও কমে যায়।
* ব্যথা বেশি হলে এনএসএইড ছাড়া সাময়িকভাবে ট্রামাডল গ্রুপের ওষুধ দেয়া যেতে পারে।
* গলাব্যথা থাকলে লবণ ও গরম পানি দিয়ে ঘন ঘন গার্গল করতে হবে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ