চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) হিট স্ট্রোকে সারাদেশে শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি এই মৌসুমে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশের ইতিহাসে এর আগে একদিনে হিট স্ট্রোকে এত মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড নেই। এদিকে রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে; যা অব্যাহত থাকছে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত।
চিকিৎসকরা বলেছেন, এরকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
কিন্তু হিট স্ট্রোক কী? কোন কোন কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে? হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া থেকে কীভাবে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে- তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে এই সংকটকে ঘিরে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
তীব্র গরমে কী হয় মানুষের শরীরে?
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো খুলে যায়।
এর জের ধরে রক্ত চাপ কমে যায় যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃদপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এসব কারণে মৃদু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া, চুলকানি এবং পা ফুলে যাওয়া যা রক্তনালী উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়, গুরুতর ক্ষেত্রে দেহে এ-দুটো জিনিসের মধ্যে যে ভারসাম্য আছে তাতেও পরিবর্তন ঘটে।
এসব কিছু একসাথে মিলিয়ে গরমে শরীর পরিশ্রান্ত হয়ে যেতে পারে এবং তার লক্ষণগুলো হচ্ছে:
হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো
দেহের প্রতিক্রিয়া কেন এমন হয়?
আমরা যেখানেই থাকি না কেন, - তুষার-ঝড়ই হোক কিম্বা প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেই হোক - আমাদের শরীর সবসময়ই তার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে চেষ্টা করে। কারণ এই তাপমাত্রার মধ্যেই আমাদের দেহ ঠিকমত কাজ করতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া যখন গরম হয়ে যায়, তখন দেহের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার জন্য আমাদের শরীরকে অনেক কাজ করতে হয়। শরীর থেকে তাপ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চামড়ার কাছাকাছি যেসব রক্তনালী আছে সেগুলো খুলে যায় এবং দেহে ঘাম হতে শুরু করে। ওই ঘাম যখন জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তখন নাটকীয়ভাবে আশপাশের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়, কিন্তু এর ফলে ত্বক ঠান্ডা হয়ে আসে।
কীভাবে নিরাপদ থাকতে পারি?
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এবিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে:
কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে কী করতে হবে
এরকম পরিস্থিতিতে কাউকে যদি আধা ঘণ্টার মধ্যে ঠান্ডা করা যায়, তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ব্রিটেনে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বা এনএইচএস এবিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে:
ঝুঁকি বেশি যাদের
বয়স্ক মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের মতো অসুখে ভুগছেন, গরমের কারণে তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তীব্র গরম তাদের শরীরে যে ধরনের চাপ তৈরি করে তারা সেটা সামাল দিতে ব্যর্থ হতে পারেন। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের শরীরের পানি খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। এছাড়াও এই রোগের কারণে রক্তনালীতে পরিবর্তন ঘটতে পারে যার ফলে শরীরে ঘাম হওয়ার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে।
শিশুদের মধ্যেও এই ঝুঁকি বেশি
যারা ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা হয়তো গরমের বিষয়ে অসচেতন থাকতে পারেন এবং এবিষয়ে কিছু করতেও তারা অক্ষম। যাদের বাড়িঘর নেই তারা অনেক বেশি সময় ধরে সূর্যের নিচে থাকার কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। যারা ভবনের সবচেয়ে উপরের ফ্ল্যাটে থাকেন তাদেরও বেশি তাপ সহ্য করতে হয়।
গরমের কারণে কি মৃত্যু হতে পারে?
প্রতি বছরই গরমে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় ২০২২ সালে ইউরোপে হিট ওয়েভে ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে গরম-জনিত হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণে। বেশিরভাগ সময় শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে গিয়েই এসব ঘটে থাকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ