বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতিশক্তি না বেড়ে, ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। আর সে কারণেই কোনো কিছু সহজেই ভুলে যাই। ক্রমেই ভুলে যাওয়াকে বলা হয় ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম।
এসময় যদি বিভিন্ন ধরণেই পুষ্টিকর খাবারগুলো খাই, তাহলে স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ার অনেকটাই সুযোগ থাকতে পারে। তাছাড়া মস্তিষ্কে স্মরণশক্তি ধরে রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও হতে পারে একমাত্র অবলম্বন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার-
বর্তমান যুগে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যই অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। অযথা মানসিক চাপ, উদ্বেগের কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিচের পুষ্টিকর খাবারগুলো অর্ন্তভূক্ত রাখলে লোপ পাওয়া বুদ্ধি খুলে যাবে।
ব্রকলি: ব্রকলি একটি শীতকালীন সবজি। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, ফাইবার এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। যা হৃদরোগ, পলিউরিয়া এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রকলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, কে এবং সি সমৃদ্ধ খাবার, যা আমাদের শরীরের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ব্রকলি গ্লুকোসিনোলেটস (Glucosinolates)-এর ভালো উৎস। যা নিউরোট্রান্সমিটার, অ্যাসেটাইলকোলাইন ভেঙে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা পরিচালনা করে দীর্ঘসময় স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
টমেটো: টমেটোতে ভিটামিন সি, বি৩, বি৬, বি৭, এ, কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ লাইকোপিন রয়েছে। এই ভিটামিনগুলো আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন সালাদে টমেটো খেতে পারেন।
পালং শাক: পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও পালং শাক বেশ উপকারী। পালং শাক আয়রনে পরিপূর্ণ। এই সবজি খাওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেন পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে শরীরে রক্তশূন্যতার প্রভাব থাকলে তা সহজেই পূরণ করতে পারে পালং শাক। পাতাবহুল এই সবজিটি খাওয়ার ফলে আমাদের নানাভাবে উপকার হয়। শুধু তাই নয়, পালংশাকের এসব ভিটামিন আমাদের লোপ পাওয়া মস্তিষ্কে প্রভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
ডিম: প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ডিম খায়। শুধুমাত্র একটি ডিমে ১৪৩ ক্যালরি এনার্জি থাকে। অন্যান্য উপাদানগুলোর মধ্যে ০.৭২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১২.৫৬ গ্রাম প্রোটিন, ৯.৫১ গ্রাম ফ্যাট। আরও রয়েছে ১৯৮ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৩৮ মি.গ্রা. পটাসিয়াম, ১.২৯ মি.গ্রা. জিংক।
ডিমের এই উপাদানগুলো, বিশেষ করে পুষ্টিগুণ আমাদের স্মৃতিশক্তি পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া ডিমের কুসুমে কোলিন নামক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। যা কোষে সংকেত পৌঁছাতে সাহায্য করে। আর সে জন্যই অল্প সময়ের মধ্যেই কমে যাওয়া স্মৃতি স্বল্প সময়ের মধ্যে উন্নত করতে সাহায্য করে।
কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের সমস্যাসহ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আর সে কারণেই কুমড়ার বীজ আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও কুমড়ার বীজ থেকে আরো ভিটামিন বি ও ট্রিপ্টোফেন পাওয়া যায়।
ডার্ক চকলেট: হার্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন ডার্ক চকলেট খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। ডার্ক চকোলেট একটি দুর্দান্ত স্ট্রেস বুস্টার। এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে খুবই কার্যকরী। এমনকি অল্প পরিমাণ ডার্ক চকোলেট মস্তিষ্কে ডোপামিন (dopamine) নামে পরিচিত একটি সুখী হরমোন নিঃসরণ করে।
ডার্ক চকলেটে ৭০ শতাংশ কোকোয়া অর্ন্তভূক্ত। এটা ধমনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বুদ্ধি বাড়াতে গ্রিন-টি: গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন, মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই চা নিয়মিত পান করলে আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে দ্রুত শক্তিশালী করবে।
গ্রীন টি সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্ন করার পাশাপাশি শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গ্রিন টি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন টি কিডনি রোগের জন্যও বিশেষ উপকারী।
শুধু তাই নয়, গ্রীন টি এগুলোর পাশাপাশি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের দুশ্চিন্তা অল্প সময়ের মধ্যে কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এই উপাদানগুলো উপস্থিতির ফলে নিউরোট্রান্সমিটারের ক্রিয়াকলাপ বাড়াতে সাহায্য করে এবং উদ্বেগ, অতিরিক্ত মেজাজ কমায়। সেইসঙ্গে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে।
কফি: কফিতে ক্যাফেইন নামক একটি উত্তেজক উপাদান থাকে। বিশেষ করে ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মি.গ্রা. ক্যাফেইন থাকে। কফি মানুষের ওপর একটি চনমনে প্রভাব ফেলে এবং ক্যাফেইনের কারণে এটি একটি উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। কফি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত একধরণের গরম পানীয়।
কফির এই ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া ক্যাফেইন আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মন ভালো রাখার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
বাদাম: পুষ্টিতে ভরপুর বাদামে প্রধানত ভিটামিন ই, বি-কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন জিংক ও ম্যাঙ্গানিজ, কপার, সেলেনিয়াম রয়েছে। এছাড়া রয়েছে- ২৮ গ্রাম বাদামে ১৭৩ ক্যালরি, প্রোটিন ৫ গ্রাম, চর্বি ১৬ গ্রাম, মনোস্যাচুরেটেড চর্বি ৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ৩ গ্রাম। বাদামের এই ভিটামিনগুলো বৃদ্ধ বয়সেও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিকেল বেলার নাস্তায় বাদাম রাখতে পারেন।
স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে তৈলাক্ত মাছ: তৈলাক্ত মাছ বিশেষ করে, ইলিশ, গুরজাওলি, আইড়, ম্যাকারেল, ভেটকি, পমফ্রেট, বোয়াল, চিতল, রুই ও কাতলা ইত্যাদি। এসব তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, আয়োডিন, ভিটামিন ডি, ফসফরাস ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ আমাদের হারানো স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য সাহায্য করে।
তাই এসব সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
ডালিম: ডালিম ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি আছে। যেমন- ভিটামিন কে, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৯ । তাহলে বুঝুন, কেন এই ফল নিয়মিত খাওয়া জরুরি।
ডালিম ফল খাওয়ার ফলে শরীরের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ডালিম ফল খেলে ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক থাকে, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে। দুপুরে খাবারের আগে বা পরে ডালিমের শরবত খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ