গরমের মধ্যে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি প্রাণ জুড়ালেও দেহের জন্য ক্ষতিকর। গরমে প্রশান্তি দিতে পারে ঠাণ্ডা পানি। যুক্তরাষ্টের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ অনুযায়ী, অনেকক্ষণ গরমের মধ্যে থাকার পর ‘হিট স্ট্রোক’ ও পানিশূন্যতার ধাক্কা কাটাতে শীতল পানীয় বা পানি খুবই কার্যকর।
তবে গরম থেকে এসে হঠাৎ বরফ শীতল পানি পান করলে নানান স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বরফ ঠাণ্ডা পানি পান মাথা ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। ঘন ঘন মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দিলে গরমকালে বরফ ঠাণ্ডা পানির বদলে সাধারণ তাপমাত্রার পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২০০১ সালে ‘সেফালালজিয়া জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণায় ৬৯৯ জন নারীর ওপর গবেষণা চালানো হয়। এই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বেস্টলাইফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, এদের মধ্যে ৫১ জন ৫ আউন্স বরফ পানি স্ট্র দিয়ে পান করার পরে ব্যথা হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। গবেষকরা একে বরফ পানি পানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে চিহ্নিত করেছেন।
২০১৯ সালে ‘কারেন্ট নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স রিপোর্ট’য়ে দেখা গেছে, বরফের চেয়েও বরফ ঠাণ্ডা পানি ব্যথা বাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখে
গবেষকদের ভাষায়, “বরফের চেয়ে বরফ ঠাণ্ডা পানি কম সময়ে ব্যথাকে বেশি প্ররোচিত করে।” মাথা ব্যথা কম বেশি সবারই হয়ে থাকে। তবে যাদের মাইগ্রেইনের সমস্যা আছে তাদের মাঝে এর প্রবণতা বেশি।
‘সেফালালজিয়া’র সমীক্ষা অনুসারে, যে নারীদের বার মাস আগে একবার মাইগ্রেইনের ব্যথা হয়েছিল বরফ ঠাণ্ডা পানি পানে তাদের এই ব্যথা দুইবার দেখা দেয়।
স্ট্র দিয়ে বরফ ঠাণ্ডা পানি বা পানীয় গ্রহণ করা আরও খারাপ ফলাফল বয়ে আনে। মাথা ব্যাথা এড়াতে চান অথচ বরফ ছাড়া পানি পানও করতে পারেন না। তাহলে অন্তত চেষ্টা করতে হবে স্ট্র ছাড়া পান করা। এতে মাথা ব্যথা কম হবে।
২০১২ সালের ‘এফএএসএবি’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে আইসক্রিমের কারণে মাথা ব্যথার বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বরফ ঠাণ্ডা পানি পান করতে স্ট্র ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
“মুখের ভেতরে তালুতে ঠাণ্ডার সংস্পর্শে মস্তিষ্কের সেরিব্রাল ধমনীতে রক্ত প্রবাহ হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মস্তিষ্ক হিম বা ‘ব্রেইন ফ্রিজ’ হওয়ার অনুভূতি দেয়।” বলেন গবেষণার লেখক ও রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি, ফিজিওলজি এবং নিউরোসায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জর্জ সেরাডোর।
তালুতে সরাসরি ঠাণ্ডার প্রয়োগ কমানো মাথা ব্যথার স্থায়ীত্ব ও ‘ব্রেইন ফ্রিজ’ ভাব কমাতে সহায়তা করে।
বেশি পরিমাণে পানি পান মাথা ব্যথার সমস্যা দূর করে বরফ ঠাণ্ডা পানি পান, মাথা ব্যাথার তীব্রতা বাড়ায় ঠিকই। তাই গরমের সময় শীতল নয় বরং স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করা ভালো।
‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউরোলজি’তে ২০০৫ সালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ১৮ জন মাইগ্রেইনে আক্রান্ত রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা দৈনিক ১.৫ লিটার পানি পান বাড়িয়েছিলেন দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের মাথা ব্যথার তীব্রতা হ্রাস পেয়েছিল।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ