প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে এসে কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিদায়ী ২০২২ সালের পুরোটা সময় ব্যস্ততার সঙ্গে কেটেছে দলটির। চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও শেষটায় ছিল উত্তেজনা ভরপুর। এই সময়ে মাঠের সফলতাও যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ব্যর্থতাও। বিশেষ করে- বছরের শেষ অর্ধেকটা রাজপথে নেতাকর্মীরা ছিল বেশি সক্রিয়। দলটির আলোচিত পদক্ষেপ ছিল প্রায় তিন মাস ধরে গণসমাবেশে বড় জমায়েত করে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে কঠিন বার্তা দেয়া। সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বার্তা দেয়া। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ২৭ দফা রূপরেখা প্রকাশ করা। চার বছর পর ৬ সংসদ সদস্যের পদত্যাগ করা। দলটি ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ১০ গণসমাবেশ করা। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ঢাকার ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দেয়ার বিষয়। চমক ছিল দীর্ঘ ২৩ বছরে ধরে একসঙ্গে চলা জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ভাঙন। ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার’ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ৩৬ দলের সঙ্গে সংলাপ করা। অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাকর্মীদের আটকের ঘটনা। এ রকম নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল বিএনপি।
বছরজুড়ে রাজপথে সক্রিয় থাকলেও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে পাঠাতে ফের ব্যর্থ হয়েছে দলটি। তবে রাজনৈতিক লড়াই পাশাপাশি আইনিভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে দলটির শীর্ষ নেতারা। ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তৃতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠেছিল ঝড়।
সারা দেশে সাংগঠনিক জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল কমিটি গঠনে ব্যস্ত সময় পার করে দলটি। নতুন কমিটি পেয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস ও জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী দল। প্রায় ৩০টির মতো জেলা কমিটি দেয়া হয়েছে। তবে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি আর কমিটি বাণিজ্যের কারণে বেশির ভাগ কমিটি থেকে ত্যাগী, পরীক্ষিত আর যোগ্য ও আন্দোলনমুখী নেতারা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি— যোগ্য-পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের বিপরীতে আন্দোলনবিমুখ, চাটুকার, তেলবাজ, অযোগ্য নেতারাই বিভিন্ন কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন। কমিটি গঠন নিয়ে দলটির তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাদের মতে— বিদেশে চিকিৎসার অভাবে দলের সর্বোচ্চ শীর্ষনেতা মৃত্যুপথযাত্রী। এখনো যদি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা না করেন তাহলে আর করবেনটা কবে? দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর এক বছর। এখন হাডলাইন কর্মসূচি না দিলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা যাবে না বলেও মত তাদের।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া কুমিল্লার মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারসহ একাধিক নেতাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করে বিএনপি। বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত পায়নি আলোর দেখা। তবে বহিষ্কৃত নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে বিভাগীয় গণসমাবেশ হাজির হন।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ: বছরের শুরুতে রাজনীতিতে উত্তাপ নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য উত্তাপ ছাড়ায় রাজনৈতিক মহলে। সরকারি দল বলে, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে ৩.৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অপরদিকে বিএনপি এ অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে নাকচ করে দিয়েছে। সরকারই ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রেখেছে বলে পাল্টা অভিযোগ করে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েবসাইটে লবিস্ট নিয়োগের ২৫১ ফাইল পাওয়া যায়। যার শুরুটা হয় ১৯৮২ সালে চায়ের প্রসারের জন্য। এরপর ১৯৮৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লবিস্ট নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে এই ধারা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ২০০৪ সালে অ্যালকাড্যাল আন্ড ফ্যা নামের একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ। ২০০৫ থেকে আওয়ামী লীগ ব্যয় করেছিল ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ঠিক তেমনি তথ্য মেলে ২০১৮ সালে এক লাখ ৬০ হাজার ডলারে ব্লুস্টার স্ট্যাটেজিস্টসহ একাধিক লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। মার্কিন তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যানুযায়ী— গত আট বছরে সরকার লবিস্ট বাবদ খরচ করেছে ২৪ লাখ ডলার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সরকার লবিস্ট নিয়োগ বিষয়টি স্বীকার করে।
খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি, বিদেশে পাঠানো ও মুক্তির দাবি: দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালে করোনা বেড়ে গেলে মানবিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। কিন্তু মুক্তি পেলেও শর্ত থাকায় দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
বছরের শুরুতেই হাসপাতালে থাকলেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর প্রকোপ বাড়ায় খালেদা জিয়াকে ফের ফিরোজায় নেয়া হয়। এরই মধ্যে ১০ জুন রাতে ৭৭ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হার্ট অ্যার্টাক করলেও রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বেগম জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। পরে ৯৫ শতাংশ ব্লকটি পরানো হয় রিং। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবি জানায় বিএনপি। এই দাবিতে বারবার রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। চলতি বছরেও পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আবেদন করা হয়। তাতে ফলও আসেনি।
৬ সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ: একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নিয়ে নির্বাচনে ছয়জন বিজয়ী হন। পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। শপথ নেয়ার পর থেকেই পদত্যাগ করার কথা বললেও তারা তা করেননি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। পরের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত নারী আসনে রুমিন ফারহানা পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর ওইসব আসনে ১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর দেশের বাইরে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হা-অর-রশিদ পদত্যাগপত্র জমা দেন ২২ ডিসেম্বর।
নিহত ৭ নেতাকর্মী: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জনসম্পৃক্ত একাধিক ইস্যু নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ভোলায় আবদুর রহিম নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহত। এরপরই জনসম্পৃক্ত ও নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে দলটি। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান, ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূর আলম, মুন্সীগঞ্জে শহীদুল ইসলাম শাওন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন, ঢাকায় মকবুল হোসেন নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী এবং সর্বশেষ পঞ্চগড়ে বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ আরেফিন (৫০)। যশোরে বিএনপি নেতা আবদুল আলিম ও সিলেটে জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছে।
১০ বিভাগে সমাবেশ: সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে দলটি। পর্যায়ক্রমে ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় ও ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে। শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচিত ১০ ডিসেম্বর: ঢাকার বাইরের সমাবেশ শেষে ঢাকায় সমাবেশের প্রায় দেড় মাস আগে দলটির নেতা আমানউল্লাহ আমানের এক বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে। ফলে ১০ ডিসেম্বর যতই ঘনিয়ে আসতে থাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই বাড়তে থাকে উত্তেজনা। বিশেষ করে কোথায় সমাবেশ হবে এ নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চলতে থাকে দফায় দফায় আলোচনা। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা যে কোনো মাঠে করার কথা বলা হয়। তবে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় থাকে বিএনপি। এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই ৭ ডিসেম্বর বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মকবুল হোসেন নামের এক নেতার মৃত্যু এবং অনেকে আহত হন। সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা ১০ ডিসেম্বরে সমাবেশ নিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন ওঠে—কী হতে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর। বিএনপি কি ঢাকায় সমাবেশ করতে পারবে, ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা কী থাকবে, রাজধানীতে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে কি না? এ অবস্থায় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। শেষ পর্যন্ত সমাবেশ থেকে সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করে দলটি। সমাবেশের আগেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেকে আটক হন।
গোলাপবাগ থেকে ১০ দফা: এগুলো হলো— গণআন্দোলনের ১০ দফার খসড়ায় সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন; খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহার; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবার সব খাতে দর বাড়ানোর গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কমিশন গঠন; গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলন ও সমমনাদের সঙ্গে সংলাপ: ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুগপৎ আন্দোলন করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলতি বছরের ২৪ মে প্রথম ধাপে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এরপর ২ অক্টোবর দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত সংলাপে বসে দলটি। দুই ধাপে প্রায় ৩৬টি দলের সঙ্গে সংলাপ করে। বৈঠকে সরকার পতনে ‘যুগপৎ আন্দোলন’ ঐকমত্যে পৌঁছায় দলগুলো। এরপর ২৪ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সারা দেশে গণমিছিল করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে বলে জানায়। যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে সমমনা ৩৬ দলের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ও করে। যদিও জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য বৈঠক হয়নি, তবে জামায়াতও বিএনপির কর্মসূচিতে থাকার ঘোষণা দেয়।
২০ দলীয় জোট ভাঙল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের অংশ হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ভেঙে গেছে। বহুদিন এই জোট ছিল অকার্যকর। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে জানিয়ে দেন, এখন থেকে কেউ যেন ২০-দলীয় জোটের নাম ব্যবহার না করে। এর উদ্দেশ্য- দলগুলো যাতে যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়। একসঙ্গে থাকার এক দশক পর এই জোট ভেঙে যাওয়ার পটভূমিতে ২০-দলীয় জোটে থাকা দলগুলো আলাদা প্ল্যাটফরম গড়তে উদ্যোগী হয়। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পাশে থাকা দলগুলোর নেতারা বিএনপির কাছ থেকে এমন আচরণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করছেন।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ২৭ দফার রূপরেখা: রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ১৯ ডিসেম্বর ২৭ রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির এই রূপরেখা আলোচনার জন্ম দেয়। এতে ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বর্তমান ‘অবৈধ আওয়ামী লীগ’ সরকারের গৃহীত সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত ও সংশোধন করা, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনাসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ