কাতারের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মরুভূমির চিত্র। কাতার এমনই এক মরুভূমির দেশ, যেখানে চারদিকে শুধু বালু আর বালু। প্রাণী এবং উদ্ভিদের সংখ্যাও যৎসামান্য। এমন বালুময় দেশে ‘মস্ত বড় এক গোলাপ ফুল ফুটেছে’ শুনলে আপনার অনুভূতি কেমন হতে পারে? আপনার অনুভূতি যা-ই হোক না কেন, এটাই সত্য যে, কাতারে গোলাপ ফুটেছে। তবে এটা বাগানে ফুটে থাকা আর ১০টি গোলাপ ফুলের মতো নয়। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত এই গোলাপ এতটাই বড় যে এর প্রতিটি পাপড়িতে ফুটে উঠেছে কাতারের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আর সংস্কৃতির নানা চিহ্ন।
কাতার শুধু তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য পৃথিবীতে পরিচিত তা নয়, চলতি ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতার যে নির্মাণযজ্ঞ ও রূপান্তর প্রক্রিয়া চালিয়েছে তারই এক নিদর্শন মরুভূমির গোলাপ। প্রকৃতিকভাবে একটি গোলাপ যেভাবে মরুভূমিতে পাপড়ি মেলে দেয় ঠিক সেইভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কাতারের ন্যাশনাল মিউজিয়াম ‘ডেজার্ট রোজ’। এই ডেজার্ট রোজের জন্যও কাতারকে আলাদাভাবে চেনে পৃথিবী। এ গোলাপকে স্যান্ড রোজ (বালুর গোলাপ) এবং রোজ রক (গোলাপ পাথর) নামেও ডাকা হয়। এটি কাতারের বসবাসের এলাকা থেকে অনেক দূরে মরুভূমির বুকে পাওয়া যায়।
ডেজার্ট রোজের সামনে দর্শনার্থীরা।
ডেজার্ট রোজ আসলে কোনো গোলাপ ফুল নয়। কাতারের অনুর্বর বালু আর জিপসামের মিশ্রণে যে পাথর তৈরি হয় সে পাথরগুলো পাশাপাশি মিলে গিয়ে গোলাপের পাপড়ির আকার ধারণ করে। আর সব পাপড়ি মিলে যে আকার দাঁড়ায় তা দেখতে গোলাপ ফুলের মতো। পুরো ব্যাপারটিই ঘটে প্রাকৃতিকভাবে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এর পাপড়ি। যেহেতু বালুতে পাওয়া যায় তাই পাপড়িগুলোর চারপাশও বালুময় থাকে। বালু সরালে এর প্রকৃত সৌন্দর্য চোখে পড়ে। পাপড়িগুলো আলো প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোজ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। মরুভূমির এরকম গোলাপের আদলে জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে বলে একে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা ‘মরুভূমির গোলাপ’ বলা হয়।
কাতারের রাজধানী দোহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাগরঘেঁষা পথ ধরে শহরের কেন্দ্রের দিকে যেতে যেতে চোখে পড়ে এই মুগ্ধকর ভবন। এটি ৫৩ হাজার হাজার বর্গফুটজুড়ে বিস্তৃত। এই জাদুঘরের নকশাশৈলী এবং কাঠামো মরুভূমির রহস্যের প্রতীক। মরুভূমির গোলাপে ব্লেডের মতো পাপড়ি থাকে, এটিও ঠিক তাই। মরুভূমির গোলাপ ভবনটি সেই দেশের ভৌত, মানবিক এবং অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রতিচ্ছবি।
জাদুঘরের মূল প্রবেশপথে ২ হাজার ৯৫০ ফুট (৯০০ মিটার) লম্বা হ্রদের ওপর রয়েছে ১১৪টি ঝরনার ভাস্কর্য। ভেতরে ৪ হাজার ৯২০ ফুটেরও (১৫০০ মিটার) বেশি গ্যালারির জায়গা আছে। আরও আছে ১৫ লাখ মুক্তা দিয়ে অলঙ্কৃত করা ১৯ শতকের গালিচা, রাজমুকুটসহ অনেক দুর্লভ জিনিস। বাইরে থেকে এটি দেখতে অনেকটা শূন্যে রাখা একগুচ্ছ পিরিচের মতো। ৩ হাজার ৬০০ রকম আদল ও আকৃতির ৭৬ হাজার প্যানেল দিয়ে সাজানো হয়েছে চোখধাঁধানো এই স্থাপত্যের বহু বক্ররেখার ছাদ। ৫ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর এটি নির্মাণে লেগেছে প্রায় এক দশক। এর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার (৩ হাজার ৬৬৫ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা)।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ