বারোস আইল্যান্ড সব সুন্দর স্থানের মধ্যে অন্যতম। প্রায় আড়াই হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম পর্যটক প্রিয় স্থান মালদ্বীপের বারোস আইল্যান্ড। অপরূপ সুন্দর এই দ্বীপ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। আকাশের নীল আর সাগরের নীল পানি মিলে যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে নিরুপমা বারোস আইল্যান্ড।
মালদ্বীপ একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র ২.৩ মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র ১.৫ মিটার। এক জল ডুবুডুবু নীল দেশের নাম মালদ্বীপ।
ছোট-বড় সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত নীলচে পানির এই দেশ। সব দ্বীপই অপার সৌন্দর্য বহন করে সমুদ্রের বুকে স্থান করে নিয়েছে। আর প্রতিটি দ্বীপই যেন স্বপ্নের রঙ মাখিয়ে সাজানো।
সকালের স্নিগ্ধ আলোয় ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় রুমে বসে।
গোটা পৃথিবীর পর্যটকদের বিলাস যাপনের অন্যতম লক্ষ্য এই দেশ। বিশেষ করে কপোত-কপোতিদের জন্য ঘন নীল আর শ্যাওলা সবুজ ঢেউ খেলানো ভারত মহাসাগরের বুকে দোল খাওয়া এই অনিন্দ্য সুন্দর ভূখণ্ডের কোনো তুলনাই নেই। মালদ্বীপের হাজারও দ্বীপের মধ্যে বারোস অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ। পর্যটকদের সমুদ্রবিলাসের জন্য ও নিরালায় সময় কাটানোর সমস্ত আয়োজন রয়েছে এখানে। কাচের মতো স্বচ্ছ নীল পানির এই বারোস আইল্যান্ড।
মালদ্বীপ প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত বিলাসবহুল রিসোর্ট বারোস আইল্যান্ড। এখানে রয়েছে সমুদ্রের পানির ওপর বিশেষভাবে নির্মিত বাড়ি। এসব বাড়িতে থাকার কারণে পর্যটকরা সমুদ্রের বিভিন্ন রঙের মাছ ও প্রাণী খুব কাছ থেকে দেখতে পারেন, শুনতে পারেন সামুদ্রিক পাখির ডাক। সমুদ্রের স্বচ্ছ পানির ভেতরে কোরাল রিফ, উত্তাল সাগরের ঢেউ, কচ্ছপ ও নানা ধরনের রঙ্গিন মাছ সবকিছু পর্যটকদের মনে অন্যরকম আনন্দ দেয়। সমুদ্রসৈকতে থাকতে চাইলে আছে বিশেষভাবে নির্মিত বাড়ি।
সন্ধ্যা রাতের লাল-শুভ্র আলোয় স্বর্গীয় সুন্দরেরা নেমে আসে বারোস দ্বীপের প্রতিটি রুমে।
সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে অবস্থিত বিশেষভাবে নির্মিত বাড়িগুলো কাঠের সেতু দিয়ে সেগুলোকে সৈকতের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে। কিছু কিছু বাড়িতে কাঠের সংযুক্ত সেতু থাকে না, সেক্ষেত্রে পর্যটকরা ছোট নৌকায় করে সমুদ্রের বুকে নির্মিত বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। এখানকার পানির উপরে বিচ, চালা দেওয়া বাগানবাড়ি ও ব্যক্তিগত পুলগুলো খুব নান্দনিকতায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
বারোস আইল্যান্ড নামের একতলা বিচ বাংলো দিয়ে ছিমছাম সাজানো দ্বীপটিতে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, সুইমিংপুল, ফুটবল মাঠ, কিংবা সুভ্যেনির শপ, যেখান সামুদ্রিক কাঁচামাল দিয়ে বানানো সুভ্যেনির সংগ্রহ করে নিতে পারেন পর্যটকরা। এ ছাড়া অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য সমুদ্রের পানার মতো সবুজ পানিতে স্নোরকেলিং কিংবা ডাইভিংয়ের সুযোগ রয়েছে। বারোস আইল্যান্ডে স্নোরকেলিং করার সুবর্ণ সুযোগ কোনো পর্যটকই হাতছাড়া করতে চান না।
সমস্ত নীলের মাঝে বসে নীলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন ছুটে যায় বারোস দ্বীপে।
স্বচ্ছ পরিষ্কার পানির গভীরে সামুদ্রিক প্রাণীকুলের জীবন, কোরাল, মাছদের চলাফেরা ও সৌন্দর্য দেখার জন্য সৌন্দর্যপ্রেমীরা স্নোরকেলিং ভালোবাসেন। বারোস দ্বীপে এমনকি যাদের পানিভীতি আছে তাদের জন্যও প্রাথমিক ডাইভ কোর্সের ব্যবস্থা আছে। আগে থেকেই ডাইভিং জানেন এমন পর্যটকরা সুযোগ পান আইল্যান্ডের লেগুনে ডাইভ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের।
ছোট এই দ্বীপটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা; ওয়াটার স্কাইং, ওয়াটার বোর্ডিং, উইন্ড সার্ফিং এবং ক্যানোইং। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকরা এর যেকোনো সুযোগই লুফে নেন। পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পছন্দের তালিকায় থাকে অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ রাইডগুলো। আবার ইচ্ছে হলে দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের পাশের সাইট হাউসে গিয়ে কোরাল রিফ দেখে আসতে পারেন। একটু শান্ত ও নিরিবিলি সময় কাটাতে পর্যটকরা ভিড় জমায় এই আইল্যান্ডে।
একেবারে ছোট্ট একটি দ্বীপ বারোস, কিন্তু আয়োজনের যেন কমতি নেই। প্রকৃতি তো উদার হাতে আপন মনে শত রঙে সাজিয়ে দিয়েছে আর সেই রঙিন সময়কে উপভোগ করার জন্য রয়েছে অসাধারণ কিছু ব্যবস্থা। পর্যটকরা এসব উপভোগ করেন নিজেদের আর মরমে প্রকৃতিকে মিশিয়ে নেন।
বারোস আইল্যান্ডে রয়েছে সমুদ্র বিলাস করার সবচেয়ে সুন্দর ব্যবস্থা।
জীবন থমকে দাঁড়ায় এখানে। বাড়ে বেঁচে থাকার নতুন প্রত্যাশা।
বারোস আইল্যান্ডের কাছাকাছি রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি দ্বীপ। হাতে সময় নিয়ে গেলে সেখান থেকেও ঘুরে আসা যায়। সামুদ্রিক বেলাভূমি পেছনে রেখে, সকালের চিকচিকে রোদে পিঠ পেতে ঝিলমিলে বালুকণায় পা মেখে ছোট বিচ বাংলোর সামনে পেতে রাখা কাঠের বেঞ্চে বসে সামুদ্রিক খাবার খাওয়া। কিংবা ছোট বাগানওয়ালা রেস্তোরাঁয় বসে দুপুরের খাবার সেরে পাশের সবুজ ঘাসের বাগানে শুয়ে বসে বিকালের ক্লান্তি দূর করা ঢুলু ঢুলু চোখে অনেকটা আমাদের ‘ভাতঘুম’-এর আমেজ আর সঙ্গে সামুদ্রিক নোনা বাতাস। ঠিক ওই সময়টায় হয়তো মাথার উপরে প্রাচীন কোনো গাছ থেকে উড়ে আসা বুনো সামুদ্রিক পাখির উড়ে যাওয়া দেখে তার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করা।
আবার সন্ধে সন্ধে সময়টাতে অপরিচিত ছোট ছোট পোকাদের মোহময় কলরবের সঙ্গে যখন পানির রং গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় তখন বিষণ্ন সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে বালুকাবেলায় খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া, রাতের বেলায় অন্ধকারের মতো কালো পানির সঙ্গে তীরে এসে আছড়ে পড়া মাছের খেলা দেখা। কিংবা রাত আরেকটু ভারী হলে নিজেকে অন্ধকারে মিশিয়ে দিয়ে একাকার হয়ে যাওয়া। খানিকটা যেন এমন; নিজেও যে প্রকৃতির একটা অংশ সেটা অনুভব করতেই যেন যেতে হয় বারোস আইল্যান্ডে। ম্যারিন সেন্টারে সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে জানারও সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক দ্বীপ বারোস।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ