ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গোটা শহর এক পরিবার! শুধু প্রেমে পড়া ‘বারণ’

প্রকাশনার সময়: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৩:৩০

ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত একটা গোটা শহর একই ছাদের তলায় থাকে। থলে হাতে একই বাজারে যায়, একই মুদির দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনে, রোগ হলে চিকিৎসাও করাতে যায় একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, আবার পছন্দের পাব-ক্যাফে-রেস্তরাঁও একটিই। আর এই দোকান, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মল, রেস্তরাঁ— সব রয়েছে একই ছাদের তলায়। মায় ওই ছাদের নিচেই রয়েছে, একটি পুরোদস্তুর থানা, একটি পোস্ট অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, এমনকি সরকারি দফতরও। প্রশাসনিক কাজের জন্য বড় একটা বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় না কাউকে। অনেকের অফিসও ওই ছাদের নিচেই। এমনকি, মনোরঞ্জনের জন্য একটি ক্লাবও রয়েছে এই বাড়িতে। নিত্যদিনের প্রার্থনার জন্যও আবাসিকদের বাইরে যেতে হয় না। শহরের সবাই খ্রিস্টের উপাসক। তাদের জন্য একটি গির্জা রয়েছে ওই ছাদেরই নিচে। এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে, বাকি আর রইল কী! সত্যি বাকি কিছু নেই প্রায়। থাকার উপায়ও নেই। গোটা শহরে ওই একটিমাত্র বাসযোগ্য বহুতল। তাই গোটা শহরটা সব কিছু নিয়ে ঢুকে পড়েছে ওই বহুতলেই।

শহরটির নাম হুইটিয়ার। আমেরিকার আলাস্কার এক চিলতে জনপদ যার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ থাকেন শহরের একটিই বহুতলে। ছবির মতো দেখতে শহর। চারপাশে সবুজালি, উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড়ের গায়ে, মাথায় পুরু বরফের পরত। আর তাদের উপত্যকায় জেগে রয়েছে একটি মাত্র বহুতল। ধবধবে সাদা ১৪তলা ভবনের গায়ে বাদামি রঙের পোঁচ। বাড়িটির নাম বাগিচ টাওয়ার। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে বিশাল কোনো হোটেল বুঝি। আসলে এই বাড়িতে এককালে ছিল সেনাবাহিনীর ব্যারাক।

বাগিচ টাওয়ারের বয়স প্রায় ৮০। হুইটিয়ার শহরেরও বয়স প্রায় তার কাছাকাছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনা বাংকার তৈরি করা হয়েছিল এই অঞ্চলে। সেই সেনাদের প্রয়োজনীয়তার জোগান দিতেই তৈরি হয় একের পর এক সুবিধা— জলের সংযোগ, বিদ্যুৎ, রেলপথ, এমনকি একটি স্টেশনও। যুদ্ধ শেষ হলে সেনাদের ছেড়ে যাওয়া শিবিরে এসব সুযোগ-সুবিধার আনুকূল্যে গড়ে উঠতে শুরু করে জনপদ। যা কালক্রমে বদলে যায় একটি সম্পূর্ণ শহরে। হঠাৎ গড়ে ওঠা এই জনপদ এত দিন আড়ালেই ছিল। সম্প্রতি তার কথা প্রকাশ্যে আসে একটি টিকটক ভিডিওর দৌলতে। হুইটিয়ার শহরের বাসিন্দা এক তরুণী জেনেসা ওই ভিডিও করেছিলেন, যেখানে তিনি ওই শহরে নিজেদের জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। ভিডিওটি যারাই দেখেছেন তারাই শহরটি নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন জেনেসাকে। সেই সব প্রশ্নের যে সব জবাব দিয়েছেন তিনি, তা শুনে আরও চমকে গিয়েছেন তারা।

শহরের বর্ণনা দিয়ে ওই ভিডিওয় ভেনেসা বলেছেন, ‘এমন শহরও আছে, যেখানে শহরবাসী সবাই একটি বাড়িতে থাকেন। আমি সেই শহরের বা বলা ভালো সেই বাড়িরই বাসিন্দা।’ এরপর নিজের ঘর আর ঘর থেকে শহরের বাকি অংশের ছবিও দেখিয়েছেন ভেনেসা। জানিয়েছেন, এই বাড়ির ভেতরেই একটি গির্জা, দোকান, বাজার, প্রশাসনিক দফতর, পোস্ট অফিস রয়েছে। শহরে একটি স্কুল রয়েছে। সেটি অবশ্য বাগিচ টাওয়ারের বাইরে। ঠিক রাস্তা পেরিয়ে উল্টো দিকেই। তবে সেই স্কুলে যাওয়ার জন্যও বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় না পড়ুয়াদের। ভেনেসা জানিয়েছেন, ‘বাড়ির একতলায় একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। সেই সুড়ঙ্গ বেয়ে সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় স্কুলবাড়িতে।’ সব মিলিয়ে ৩১৮ বাসিন্দা এই বাগিচ টাওয়ারের। শহরের জনসংখ্যাও তার কাছাকাছিই। ভেনেসা জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালে একবার বেশ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল এই শহরে। তার পরে অনেকেই শহর ছেড়ে চলে যান। কিন্তু একটি শহরে একটি মাত্র বাড়ি! এটি বেশ অদ্ভুত না? কারণ জানিয়ে ভেনেসা বলেছেন, শহরে আরও একটি বাড়ি আছে। তবে সেটি বাসযোগ্য নয়। পরিত্যক্তও। আর বাড়ি বানানোর সুযোগও নেই এই শহরে। কেননা শহরের প্রায় পুরোটাই রেলের সম্পত্তি। যদি জমিই না পাওয়া যায়, তবে বাড়ি হবে কোথায়! তাই বাগিচ টাওয়ারই ভরসা হুইটিয়ারের বাসিন্দাদের। সবাই ওই বহুতলেই একসঙ্গে থাকেন। যেন একটি একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সবাই।

ভেনেসার ভিডিও দেখে অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, এক ছাদের তলায় সব সময় থাকতে একঘেয়েমি আসে না তাদের? একটু অন্য রকম মনোরঞ্জন চাইলে তারা কী করেন? ভেনেসা জানান, বাগিচের বাইরে শহরের একটি হ্রদে বোটিং করার ব্যবস্থা আছে। বরফে মোড়া শহরটিতে স্কি করারও সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু ভেনেসার দুঃখ একটাই— এই শহরে প্রেম করার সুযোগ নেই একেবারেই। ডেটে যাওয়াও এক রকম ‘স্বপ্ন’ই।

বাগিচ টাওয়ারের বাসিন্দা ওই তরুণী জানাচ্ছেন, শহরে তার সমবয়সি বাসিন্দা রয়েছেন বড় জোর ২০ জন। প্রায় প্রত্যেক বয়সের মানুষেরই সংখ্যা প্রায় ওই রকম। তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু তার ঠিক ওপরের ফ্লোরেই থাকেন।

ভেনেসা বলেছেন, ‘বাকি যাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে পারত, তাদের সঙ্গে ছোট থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমাদের মধ্যে বন্ধু বা ভাই-বোনের মতো সম্পর্ক। তাই তাদের প্রেমিক হিসেবে ভাবতে খুব অদ্ভুত লাগে।’ আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ