ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাস্তায় চা বেচে বছরে আয় ৫ কোটি টাকা

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৫২

বাড়ি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিজনেসে ডিগ্রি হাসিল করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে বিদেশের রাস্তায় চা বিক্রি করা শুরু করেন অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণ। সেই চাওয়ালার আয় শুনলে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হতে পারে। চায়ের দোকান দেয়ার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মুনাফা দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। একটি মাত্র চায়ের দোকান থেকেই ওই তরুণের আয় এখন বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলার বাসিন্দা সঞ্জিৎ কোন্ডার এ হেন কাহিনিতে শোরগোল পড়ে গেছে সমাজমাধ্যমে। করপোরেট জগতের মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিয়েছেন এই ২২ বছরের তরুণ। তাতে সফল হয়েছেন বললেও কম বলা হয়। সমাজমাধ্যমে অবশ্য তিনি পরিচিত সঞ্জিৎ কোন্ডা হাউস নামে।

নেল্লোর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের এক নামজাদা কলেজে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সঞ্জিৎ। তবে স্নাতক স্তরের সেই কোর্স শেষ করেননি তিনি। তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সঞ্জিৎ।

ডিগ্রিলাভের আশা ছেড়ে নিজের স্টার্টআপ খোলার চেষ্টা করেন সঞ্জিৎ। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়তে এখানে (মেলবোর্নে) এসেছিলাম। তবে কোর্স শেষ করতে পারিনি। পড়াশোনা ছাড়ার পর নিজের স্টার্টআপ শুরু করতে চেয়েছিলাম।’

সাহসে ভর করেই সুদূর মেলবোর্নে নিজের স্টার্টআপ খুলে বসেন সঞ্জিৎ। শহরের খোলা রাস্তায় একটি চায়ের দোকান খোলেন তিনি।

মেলবোর্নের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি)-এর এলিজাবেথ স্ট্রিটের ব্যস্ত রাস্তায় সঞ্জিতের চায়ের দোকানে আজকাল ভিড় উপচে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রা তো বটেই, ভিড় জমাচ্ছেন অজিরাও। সঞ্জিতের দোকানে গিয়ে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন গুটি কয়েক লাতিন আমেরিকানও।

নিজের দোকানের গালভরা নামও রেখেছেন সঞ্জিৎ ‘ড্রপআউট চায়েওয়ালা’। এলিজাবেথ স্ট্রিটে ঘুরতে এসে পর্যটকরাও সেখানে উঁকি-ঝুঁকি মারছেন। সেখানকার ভারতীয়দের প্রিয় আড্ডাখানা হিসাবেও নাম কামাচ্ছে সঞ্জিতের চায়ের দোকান।

সব ছেড়ে-ছুড়ে হঠাৎ চায়ের দোকান দিতে গেলেন কেন? তার মা-বাবাই বা এ খবর শুনে কী বলেছিলেন? সংবাদ মাধ্যমের এ হেন প্রশ্নের জবাবে সঞ্জিৎ বলেছেন, ‘পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার কথা জানতে পেরে গোড়ার দিকে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মা-বাবা। আমি যে নিজের ব্যবসা করার চেষ্টা করছি, তা জেনে কিছুটা চিন্তায়ও পড়েছিলেন।’

মেলবোর্নের রাস্তায় যে সঞ্জিৎ চায়ের দোকান খুলতে চান, তা জেনে আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তার মা-বাবা। একে তো ওই শহর বেশি পরিচিত কফিপ্রেমীদের জন্য। তার ওপর, সঞ্জিতের মতো আনকোরা তরুণের দেশীয় চায়ের স্বাদ চাখতে কত জন চাখবেন, তা নিয়েও চিন্তায় পড়েছিলেন তারা। যদিও সঞ্জিৎ বলেন, ‘মেলবোর্ন কফি ক্যাপিটাল হলেও এখানেই চায়ের জয়েন্ট খোলার কথা ভেবে নিয়েছিলাম!’

‘গ্লোবাল টাইমস’ নামে চীনের এক দৈনিক সংবাদপত্র দাবি— মেলবোর্ন নয়, সাংহাইকেই বিশ্বের ‘কফি ক্যাপিটাল’ বলা হয়। সে শহরে ৭,৮৫৭টি কফি শপ রয়েছে বলে দাবি তাদের।

মেলবোর্নে এই চায়ের দোকান খোলার পেছনে যে পরোক্ষে হলেও তার মায়ের হাত রয়েছে, তা জানিয়েছেন সঞ্জিৎ। ওই শহরে তার কাছে ঘুরতে গিয়ে শত খুঁজেও নাকি ঘরের চায়ের স্বাদ পাননি সঞ্জিতের মা-বাবা। সে সময়ই ওই শহরের রাস্তায় একটা চায়ের দোকান খোলার কথা ভেবে নেন সঞ্জিৎ।

ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে সঞ্জিৎ বলেছেন, ‘মেলবোর্নে ঘুরতে এসে আমাদের ঘরের মতো চায়ের স্বাদ পেতে ঘাম ঝরে গিয়েছিল মা-বাবার। সে সময়ই এখানে চায়ের দোকান খোলার কথা মনে হয়েছিল।’

চায়ের দোকানের এ হেন নাম কেন? সংবাদ মাধ্যমের কাছে সঞ্জিৎ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই চায়ের প্রতি টান ছিল। ফলে এই নাম দেয়ার কথা মনে এসেছিল।’ দোকানের নামের সঙ্গে যে তার পড়াশোনা ছাড়ার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে!

সঞ্জিতের বিষয় ভাবনার ওপর ভরসা রেখেছিলেন আসরার নামে এক অনাবাসী ভারতীয়। তার দোকানের যাবতীয় খরচপাতি তিনিই জুগিয়েছেন। সে ভরসার ফসলও ফলেছে। সঞ্জিৎ বলেন, ‘আমার মনে হয়, পরের মাসে আমাদের মুনাফা ৫.২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আয়কর এবং অন্যান্য খরচাপাতির পর হাতে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার মুনাফা থাকবে।’

ডিগ্রিহীন চাওয়ালার সাফল্যে যারপরনাই খুশি সঞ্জিতের মা-বাবা। সঞ্জিৎ বলেন, ‘যেভাবে শুরু করেছিলাম আর এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, তাতে আমাকে নিয়ে মা-বাবা গর্বের অন্ত নেই।’

সঞ্জিৎ জানান, তার চায়ের দোকানের ‘বম্বে কাটিং চা’ ভারতীয়দের মধ্যে সুপারহিট। বিদেশিরা আবার ‘মসলা চা’ বা পকোড়া বেশ তারিয়ে তারিয়ে খান। খদ্দের টানতে এ বার ‘চায়পুচিনো’ নামে এক পাঁচমেশালি চা তৈরি করছেন সঞ্জিৎ। এ যেন খানিকটা ক্যাপুচিনোর চায়ের সংস্করণ! নিজের দোকানে কি তার মতো ডিগ্রিহীনদের কাজ দেবেন? সঞ্জিতের সাফ জবাব, ‘ডিগ্রি নয়, কাজের প্রতি টান রয়েছে এমন কঠোর পরিশ্রমীদেরই কাজে রাখতে চাই।’ সঞ্জিতের স্বপ্ন, ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি শহরে তার অন্তত একটি চায়ের দোকান থাকবে। সেই সঙ্গে সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে ডিগ্রিও হাসিল করতে চান তিনি। আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ