ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৮৬তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েও বাঁচল যে তরুণী

প্রকাশনার সময়: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩০

আজ থেকে ৪২ বছর আগে ডিসেম্বরের এক রাতে নিজেকে শেষ করে দেয়ার জন্য অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন এলভিটা অ্যাডামস। ৮৬তলা থেকে ঝাঁপও দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। কীভাবে তা সম্ভব হলো? আত্মহত্যা করতে অসফল হলেও রাতারাতি শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন আমেরিকার ব্রঙ্কসের ওই বাসিন্দা। সংবাদমাধ্যমের দাবি— অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেয়ার পরে ২৯ বছরের এলভিটাই একমাত্র যিনি প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন। আত্মহত্যার পথ কেন বেছে নিয়েছিলেন এলভিটা? আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে সে কাহিনিই শোনা গিয়েছিল। যা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭৯ সালের ২ ডিসেম্বরের রাতে। মাস কয়েক হলো চাকরি খুঁইয়েছেন এলভিটা। সরকারি অনুদানের সামান্য অর্থে সংসার চলত না। প্রতি মাসে ১০০ ডলারের ওয়েলফেয়ার চেক হাতে পেলেও তা যথেষ্ট নয়। ১০ বছরের শিশুপুত্রের মুখে অন্ন জোগাবেন কীভাবে, সে চিন্তায় দিনরাত এক হয়ে যেত এলভিটার।

বাড়িভাড়া বাকি থাকায় প্রায়শই বাড়ির মালিকের হুমকি শুনতে হতো এলভিটাকে। ভাড়া না মেটালে শিশুপুত্রসহ তাকে বাড়িছাড়া করার হুমকিও দিতেন। সংসারের অনটনে অবসাদে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন এলভিটা।

ডিসেম্বরের ওই শীতের সন্ধ্যায় হাজারও চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন এলভিটা। ব্রঙ্কস থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কের মিডটাউন ম্যানহাটনের অভিজাত এলাকায়। সে প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টার পথ। শনিবারের সেই সন্ধ্যায় এ রাস্তা-সে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এলভিটা গিয়ে পৌঁছান অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে। এলোমেলোভাবে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ান বিল্ডিংয়ের প্রবেশদ্বারে।

সে রাতেই অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা। পরে অবশ্য তার দাবি ছিল— আলোয় ভরা ম্যানহাটনে দেখতেই ব্রঙ্কস থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘কী সুন্দর (আলো)! আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।’ যদিও আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের পাল্টা দাবি— আত্মঘাতী হতেই ওই বিল্ডিংয়ের ৮৬তলায় উঠেছিলেন এলভিটা।

ম্যানহাটনের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে মোট ১০২তলা রয়েছে। উচ্চতায় যা ১,২৫০ ফুট। এর ৮৬তলায় রয়েছে অবজারভেটরি ডেক। যেখান থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা।

যদিও এলভিটাই প্রথম নন। ১৯৩১ সালের এই বিল্ডিং থেকে আরও ৩০ জন ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছিল। বস্তুত, ১৯৩১ সালে এই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে এক ব্যক্তি এর ৫৮তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। এলভিটার মতোই ৮৬তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ইভলিন ম্যাকহেল নামে এক তরুণী। তবে তা ছিল ১৯৪৭ সালের ১ মে। ৫৮তলা থেকে ঝাঁপ দেয়ার পর অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করানো একটি লিমুজিনের ছাদে গিয়ে পড়েন ইভলিন। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় ও পার থেকে ছুটে এসে নিথর দেহটির ছবি তুলেছিলেন রবার্ট ওয়াইসল নামে ফোটোগ্রাফির এক পড়ুয়া। লিমুজিনের ওপর গ্লাভস ও মুক্তোর মালা পরে যেন ঘুমিয়ে ছিলেন ইভলিন। আমেরিকার একটি নামজাদা পত্রিকা একে ‘সবচেয়ে সুন্দর আত্মহত্যা’ বলে তকমা দিয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সে ছবিতে মোহিত হয়েছিলেন অনেকে। ইভলিনের মতো খ্যাতি পেয়েছিলেন এলভিটাও। তবে অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়ে একমাত্র মানুষ হিসাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার জন্য।

২ ডিসেম্বর, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের অবজারভেটরি ডেকে পৌঁছেছিলেন এলভিটা। এর আগেও সেখান থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন অনেকে। ফলে সেখানে ৮ ফুটের কাঁটাতারের বেড়া দেয়া ছিল।

সংবাদমাধ্যমের দাবি— সাধারণত অবজারভেটরি ডেকে জনা চারেক নিরাপত্তারক্ষী পাহারা দেন। তবে ঘটনার দিন নাকি সেখানে কেউ ছিলেন না। রক্ষীহীন ৮৬তলায় পৌঁছে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এলভিটা। তারপর? ঝাঁপ দিলেও একেবারে নিচে পড়েননি এলভিটা। উল্টে তিনি গিয়ে পড়েন নিচের তলার অর্থাৎ ৮৫তলার একটি ৩ ফুটের কার্নিশের ওপর। ২০ ফুট নিচের ওই কার্নিশে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন এলভিটা। তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এলভিটার গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন জর্জ রাইস নামে বিল্ডিংয়ের এক রক্ষী। যদিও অনেকের দাবি— তার নাম ছিল ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক। নাম যা-ই হোক না কেন, এলভিটাকে উদ্ধার করেছিলেন ওই রক্ষী। তিনিই আহত এলভিটাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন।

ঘটনাটিকে আশ্চর্যজনক বলে আখ্যা দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, হাওয়ার ধাক্কায় এলভিটা গিয়ে পড়েছিলেন নিচের তলার কার্নিশে। তবে তা কীভাবে সম্ভব? সে রাতে নাকি প্রতি ঘণ্টায় ৩৭ থেকে ৬১ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া বইছিল। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি— অত উঁচুতে হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার পৌঁছতে পারে।

এলভিটা যে আত্মহত্যা করতেই অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন, তেমনই দাবি করেছিল পুলিশ। তাদের দাবি, সে কারণেই অবজারভেটরি ডেকের কাঁটাতারের বেড়া টপকেছিলেন এলভিটা। ঘটনার পর হাসপাতালের বিছানায় কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে চোখ মেলেছিলেন এলভিটা। সেখানকার হাড় ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। যদিও তখনও বুঝতে পারেননি, কীভাবে বেঁচে গেলেন তিনি? আনন্দবাজার।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ