ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নীল আলোর আগ্নেয়গিরি

প্রকাশনার সময়: ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭:১২

সক্রিয় হোক বা সুপ্ত; আগুনের পাহাড়ের কথা শুনলেই মনে আসে উজ্জ্বল লালচে গলিত লাভা আর কালো কালো ধোঁয়ার কথা। আগ্নেয়গিরি থেকে নীল ধোঁয়া বেরচ্ছে এমন কথা শুনতে অদ্ভুতই লাগে!

নীল আলোর আগ্নেয়গিরি! পৃথিবীর হরেক বিস্ময়ের মধ্যে এটাও এক বিস্ময়কর ঘটনা। এই আগ্নেয়গিরি থেকে নীল রঙের ধোঁয়াই শুধু বের হয় না, যে লাভা বের হয় তার রংও আশ্চর্যজনক নীল!

কাওয়াহ ইজেন এমনি বিস্ময়কর নীল আগুনের আগ্নেয়গিরি। বিশ্বের বৃহত্তম এই নীল আগ্নেয়গিরির অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার জাভা অঞ্চলে। নীল ধোঁয়ায় মোহময়ী তার রূপ। দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় ছোট বড় একাধিক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ভরা। তার বেশির ভাগই রয়েছে জাভাতে। আগ্নেয়গিরির এক বিশাল অগ্নুৎপাতের ফলেই জাভার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেন এমন নীলচে ধোঁয়া? নীল রঙা লাভা কেন বের হয় কাওয়াহ ইজেন থেকে? কী আছে ওই আগুন পাহাড়ের ভিতর? এই আগ্নেয়গিরি থেকে সালফার বাষ্প বের হয়- এভাবেই বিজ্ঞানীরা এ নীল আলোর ব্যাখ্যা দেন। আর সেটি বাতাসে মেশার আগে এই নীলাভ আলো তৈরি হয়।

বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা করে আরও জানিয়েছেন, ওই নির্দিষ্ট আগ্নেয় পর্বতের মধ্যে রয়েছে অ্যাকটিভ সলফাতারা। এটি একটি বিশেষ ধরনের আগ্নেয় বাষ্প। এই আগ্নেয়গিরি থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তাতে সালফারের মাত্রা থাকে খুব বেশি। ভূগর্ভের বাইরে অক্সিজেনওয়ালা বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে যখনই আসে এই গ্যাস, তার রঙ নীলচে হয়ে যায়। নীল আগুনের হলকাও কখনও কখনও বেরতে দেখা যায়।

কিছু কিছু গ্যাস জ্বলতে জ্বলতে তরল সালফারে পরিণত হয়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তা যখন নেমে আসে তখনও দেখা যায় নীল লাভা। এই নীল রং সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় সূর্যাস্তের পর। পর্যটকেরা তখনই প্রকৃতির এই মোহময়ী রূপ দেখতে যান।

এই আগ্নেয়গিরিসংলগ্ন এক কিলোমিটার জুড়ে হ্রদের ওপর দিয়ে যখন ধোঁয়া উড়ে যায়, তখন তা আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।

আর এ নীল আলোর খেলা দেখতে চায় অন্ধকার। রাতের আঁধারে এই মোহনীয় দৃশ্য দেখতে অন্যরকম সুন্দর। এ জন্য পাহাড়ি পথের কষ্ট মেনে নিতে হবে।

১৮ হাজার দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ৪০০ আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এর মধ্যে ১২৭টি জীবন্ত। এজন্য পর্যটকরা বলেন, ইন্দোনেশিয়া যেন আগ্নেয়গিরি বা দ্বীপের দেশ।

নীল আলোর এই আগ্নেয়গিরি দেখতে ভাঙতে হয় ক্রমে ওপরে ওঠা ১০ হাজার ফুট পাহাড়ি পথ। এ জন্য ভারী জ্যাকেট, মাথায় বাঁধা টর্চলাইট, ধোঁয়া থেকে বাঁচার মাস্কসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অভিযাত্রা করতে হয়। পূর্ব জাভা অঞ্চলের বানিওয়াঙ্গি থেকে প্রথমে শক্তিশালী ইঞ্জিনের প্রাডো গাড়িতে করে পাহাড়ি পথে ছুটতে লাগে দুই ঘণ্টা। এরপর হাঁটা শুরু। তিন কিলোমিটার ওই পাহাড়ি বাঁকা পথ মাড়িয়ে তবেই কাওয়াহ ইজেন আগ্নেয়গিরির দেখা মেলে।

জানা যায়, কাওয়াহ ইজেন আগ্নেয়গিরির লাভামুখ ১০০টি। ২০০২ সালে এটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্ন্যুত্পাত হয়েছিল। এরপরই এর বিভিন্ন অংশ থেকে অনবরত সালফার বের হচ্ছে। এই সালফারের অংশ স্থানীয় লোকজন প্রতি রাতে সংগ্রহ করে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। তারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ মার্কিন ডলারের সমান আয় করতে পারেন।

প্যারিসের এক ফটোগ্রাফার অলিভিয়ার গ্রুনওয়াল্ড কাওয়া ইয়েন আগ্নেয়গিরি নিয়ে অনেক দিন ধরেই ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, নীল রঙের এই লাভা আদতে লাভা নয়। এই রং তৈরি হয় যখন সালফিউরিক গ্যাস আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন অংশ থেকে বেরিয়ে অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে। এরপর হাওয়ার সঙ্গে মিশে এই নীল রঙের আগুন তৈরি করে। যা দেখতে সত্যি অসাধারণ। এই তরল সালফার আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে যখন নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে, তখন সেটিকে দেখে মনে হয় যেন লাভার উদগিরণ হচ্ছে। সূর্যাস্তের পরেই এই নীল রং সবচেয়ে ভালো দেখা যায় বলে জানিয়েছেন অলিভিয়ার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ