দাঁড়াশ সাপ কৃষকের নীরব বন্ধু। সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত এই সাপের প্রধান খাবার ইঁদুর। মূলত ইঁদুর খেয়েই এই সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি কৃষকের বন্ধু হিসেবে আড়ালে থেকে কাজ করে।
কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই সাপ দেখতে খুবই সুন্দর। এদের ইংরেজি নাম র্যাট স্নেনেক (Rat Snake)। কোন কোন এলাকায় এই সাপকে দারাজ সাপও বলা হয়।দাঁড়াশ সাপ সর্বোচ্চ ৩৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের গায়ের রঙ হালকা বাদামী, হলুদ বাদামী কিংবা জলপাই বাদামীও হয়ে থাকে। মাথায় কোনো ফণা থাকে না এবং গোখরা সাপের থেকে বেশ সরু।
দাঁড়াশ সাপ গাছ বেয়ে উঠতে দক্ষ। এরা সাঁতার কাটতে, ডুব দিতে এবং দ্রুত ছুটতে পারে। এই প্রজাতির সাপ প্রায় ১ ডজন আঠালো ডিম পারে এবং দুই মাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
দাঁড়াশ সাপ মূলত কৃষি জমিতে থাকে। এই সাপ যে জমিতে থাকে তার আশেপাশে প্রায় ৩ একর এলাকা জুড়ে তার বিচরণ থাকে। এছাড়াও এই জায়গায় খুঁজে খুঁজে ইঁদুর শিকার করে যার ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসল হানী ঘটে তা থেকে রক্ষা মিলে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি বছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে ধান ও গমের।
কিন্তু ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য দাঁড়াশ সাপটি যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাই এই সাপকে রক্ষা করতে পারলে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার ফসলের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ যে টাকা ইঁদুর নিধনে খরচ করে সে টাকাও রক্ষা করা সম্ভব।
কিন্তু কৃষকের উপকারী এই সাপকে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা থেকে মেরে ফেলা হচ্ছে, দাঁড়াশ সাপ দেখতে অনেকটা বড় এবং কোবরার মত। তাই মানুষ না জেনেই একে বিষাক্ত ভাবে। সাপ নিয়ে আমাদের দেশে প্রচুর মিথ্যা কল্পকাহীনি প্রচলিত আছে ।
মানুষের ধারনা দাঁড়াশ সাপের কোমরে বা লেজে কাঁটা আছে, সেই কাটা দিয়ে আঘাত করলে মানুষ মারা যায় এবং দাঁড়াশ সাপ রাতে গাভীর বান থেকে দুধ চুষে খেয়ে থাকে। কিন্তু এর সবই ভুল ধারনা।
দাঁড়াশ সাপের কোমর বা লেজে, শরীরের কোথাও এমন কোনো কাঁটা নেই। বাস্তবে সাপটি খুব নিরীহ তবে রেগে গেলে বা ভয় পেয়েও যদি কাউকে কামড় দেয় কিছু হবেনা কারণ এটি নির্বিষ সাপ।
এছাড়াও এই সাপের দুধ চুষে খাওয়ার ক্ষমতাও নেই। সাপের জিহ্বা বিভক্ত হওয়ায় সাপ কোনো কিছুই চুষে খেতে পারেনা।এদের অন্যতম প্রধান এবং পছন্দের খাবার ইঁদুর। তাই এরা ফসলি জমির আশেপাশেই থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। যার মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ সাপ নির্বিষ অর্থাৎ বিষমুক্ত। তবু সাপ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের অযাচিত ভয় অজ্ঞতার কারণে আমরা এই প্রাণীটিকে দেখলে প্রাণঘাতী মনে করে মেরে ফেলি। কিন্তু উন্নত বিশ্ব সাপকে কাজ লাগাচ্ছে নতুন এক অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে।
নয়া শতাব্দী/ এডি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ