ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে

প্রকাশনার সময়: ৩০ জুলাই ২০২২, ১৩:৪৪

দেশে-বিদেশ ভ্রমণের প্রথম শর্ত হল আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে। অনেকেরই বিদেশ ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও পাসপোর্ট না থাকায় সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয় না।

পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া জটিল ভেবে অনেকে আবার পাসপোর্ট করতেও চান না। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল মনে হলেও আসলে এত জটিল কিছু নয়। আর এখন তো ইলেকট্রনিকস পাসপোর্টের বা ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

আর তাই ই-পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া অফিশিয়ালভাবে শুরু হওয়ায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ নেই। অবশ্য অনেকেই হয়তো জানেন না যে ই-পাসপোর্ট এবং পূর্বের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য কি।

চলুন জেনে নেই, কীভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন এবং এর প্রক্রিয়াগুলোই বা কী?

ই-পাসপোর্ট কি

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ই-পাসপোর্ট হল একটি ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। চিপটিতে সমস্ত বায়োমেট্রিক তথ্য থাকবে, যা পাসপোর্ট ধারকের প্রমাণীকরণের জন্য ব্যবহার করা হবে।

ই পাসপোর্টে একটি ইলেক্টনিক চিপ, অ্যান্টেনা ও একটি মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করা হয়। পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিপে সংরক্ষিত থাকে।

ই-পাসপোর্টে নেওয়া বায়োমেট্রিক তথ্য হল ছবি, আঙুলের ছাপ এবং আইরিস। ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল সিস্টেম (ই-বর্ডার) পাসপোর্ট চিপের বায়োমেট্রিক তথ্যকে বাহ্যিক বৈধতার সাথে তুলনা করে।

এছাড়াও ই-পাসপোর্টে বিশেষ নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। পাসপোর্ট চিপের তথ্য পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ( Public Key Infrastructure) এর মাধ্যমে যাচাই করা হয়। তাই প্রতারণা করা কঠিন।

এমআরপি ও ই-পাসপোর্টের পার্থক্য

সাধারণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের বইয়ে প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা থাকে। সেখানে ই-পাসপোর্টে একটি পিভিসি (PVC) কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপির তুলনা করা যেতে পারে ব্যাংকের চেক বইয়ের সাথে। চেকবই যেভাবে স্বাক্ষর যাচাইবাছাই করে ব্যাংক কর্মকর্তারা অনুমোদন করে টাকা প্রদান করেন। একই ভাবে ইমিগ্রেশনের এমআরপি যাচাই বাছাই করে পাসপোর্টে সিল দিয়ে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়।

অন্যদিকে, ই পাসপোর্টকে তুলনা করা যেতে পারে এটিএম কার্ডের সাথে। এটিএম কার্ড দিয়ে যে কেউ নিজে থেকেই টাকা তুলতে পারেন। তেমনিভাবে, ই পাসপোর্ট দিয়ে ইলেক্ট্রনিক গেইট দিয়ে নিজে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। তবে পরবর্তী ধাপে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারাই পাসপোর্টে আগমণ অথবা বর্হিগমন সিল দেবেন।

ই পাসপোর্টের মেয়াদ, ফি ও পৃষ্ঠাসংখ্যা

বাংলাদেশ সরকার আপাতত ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট বিতরণ করছে। ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টে ৪৮ পৃষ্ঠা ও ৬৪ পৃষ্টার পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। যারা ঘন ঘন ভ্রমণ করেন তাদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট উপযোগী হবে।

উল্লেখ্য যে, পূর্বের সাধারণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। তবে ই পাসপোর্টে জনগণের ভোগান্তি ও সুবিধার কথা চিন্তা করে ১০ বছর মেয়াদী করা হয়।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা

ই-পাসপোর্টের বড় সুবিধা হলো যে, খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ই-গেইট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করবেন তাই তাদের বাড়তি ঝামেলা বা লাইনে দাড়াতে হবে না।

এছাড়াও ভ্রমণকারীরা ই-গেইট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করার কারণে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে।

যখন একজন ভ্রমণকারী ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন, সঙ্গে সঙ্গে সেটি কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি-পিকেডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে।

ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। তারপর যাচাই করা হবে পাসপোর্ট ধারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন।

তবে কোন গরমিল থাকলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করবেন। কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে। এখানে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ ধরণের পাসপোর্ট জাল করা সহজ নয়।

ই-পাসপোর্টের ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারীর সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন।

ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন যেভাবে

ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে প্রথমে (www.epassport.gov.bd) এই ওয়েবসাইটে লগ ইন করতে হবে। ওয়েবসাইটে ঢুকে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে (Directly to online application) ক্লিক করতে হবে।

প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করে ক্লিক করতে হবে। পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে।

এছাড়াও যদি অধিদফতরের অনুমোদিত পাঁচ ব্যাংকের যে কোনো একটিতে টাকা জমা দিয়ে সেই জমা স্লিপের নম্বর এখানে দিতে হবে। এরপর ফাইল সাবমিট করতে হবে। এর ফলে আপনার তথ্যগুলো পাসপোর্টের কার্যালয়ের সার্ভারে চলে যাবে। পরবর্তী ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।

শেষ ধাপে ই-পাসপোর্ট প্রস্তুতের পর আবেদনকারীকে জানানো হবে৷ আবেদনকারী নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়ে ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করবেন।

কাগজের ফরম জমা

পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্টের কাগজের ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দিলেও মিলবে ই-পাসপোর্ট। কাগজের ফরমে আবেদনকারীর ৮৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হবে। এমআরপি থেকে এই ফরম কিছুটা আলাদা। এই ফরমে পাসপোর্টের মেয়াদ (৫ বছর অথবা ১০ বছর) ও পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা (৪৮ অথবা ৬৪) ইত্যাদি তথ্য জানতে চাওয়া হবে।

এছাড়াও দুদিনের মধ্যে অতি জরুরি পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে আগেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আনতে হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফরমে প্রি-পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সময় জমা দিতে হবে ক্লিয়ারেন্সের কপি।

একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ই-পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্ট কার্ড এবং ছবি জমা দিতে হবে।

এছাড়াও ১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৭৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫০০০ টাকা, জরুরি ফি ৭০০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৯০০০ টাকা।

এছাড়া বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৭৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭০০০ টাকা, জরুরি ফি ৯০০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২০০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

এখন থেকে কোনো দালালদের দিয়ে এসব কাজ না করিয়ে নিজেই নিজের পাসপোর্টটি তৈরি করে ফেলুন। এতে অর্থও বাচবে ভোগান্তিও কমবে।

ই-পাসপোর্টে কি ভিসা নিতে হবে

পূর্বের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এর মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও ভিসা নিতে হবে। বিভিন্ন দেশের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি বা অনলাইনে ভিসার শর্ত পূরণ করেই ভিসা নিতে হবে।

ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপরে তারা বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে।

নয়া শতাব্দী/ এডি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ