পাকিস্তানের ‘কে-টু’ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ‘কে-টু’ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে এ কৃতিত্ব গড়েছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ৮ হাজার ৬১১ মিটার উঁচু ‘কে-টু’ পর্বতারোহীদের কাছে ‘হিংস্র পর্বত’ হিসেবে পরিচিত। অনেক পর্বতারোহীদের বিবেচনায় ‘কে-টু’ এভারেস্টের চেয়েও দুর্গম।
ওয়াসফিয়া নাজরীন এলিট এক্সপেডের একটি চৌকস টিমের সাথে ‘কে-টু’ জয় করেছেন। এলিট এক্সপেড তাদের ১ লক্ষ ৭২ হাজার ফলোয়ারের ইনস্ট্রাগ্রাম একাউন্টে ‘কে-টু’ বিজয়ের তথ্য নিশ্চিত করে। এক পোস্টে তারা জানান, শতভাগ সাফল্যের হার। অসাধারণ এই মৌসুম। ‘কে-টু’ অভিযানে আমাদের অবিশ্বাস্য দলটি তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে। এলিট এক্সপেড তোমাদের জন্য এরচেয়ে গৌরবান্বিত হতে পারে না। আমাদের দল, আপনাদের প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম ও পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকার এই ধৈর্যকে সম্মান জানাচ্ছি।
ওয়াসফিয়া নাজরীন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে গত ১৭ জুলাই রাতে বেজ ক্যাম্প থেকে ‘কে-টু’ চূড়ার উদ্দেশে যাত্রার কথা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সুখবর আসার কথা জানিয়ে ঐ পোস্টে ওয়াসফিয়া তার সঙ্গে থাকা অন্য পর্বতারোহীদের নাম জানান৷ দুর্গম এ অভিযানে নেতৃত্ব প্রদান করেন নেপালি পর্বতারোহী মিংমা তেনজি শেরপা৷
‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসফিয়া নাজরীন পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কিলিমানজারোয় আরোহণের মধ্য দিয়ে শুরু করেন এবং ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ওশেনিয়া অঞ্চলের কারস্তেনস পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে এ অভিযান সম্পন্ন করেন। তিনি ২০১২ সালের ২৬ মে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে বাংলাদেশের কনিষ্ঠতম ও দ্বিতীয় নারী হিসেবে পা রাখেন।
পর্বতারোহণ ছাড়াও তিনি সমাজকর্ম ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। পর্বতারোহণে পূর্ণকালীন হওয়ার আগে কর্মজীবনে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় যুক্ত ছিলেন। তিব্বতে তিনি বেশ কিছুদিন মানবাধিকার নিয়েও কাজ করেছেন। ওয়াসফিয়ার জন্ম ১৯৮২ সালে ঢাকায়। তিনি স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক মনোবিজ্ঞান ও স্টুডিও আর্ট বিষয়ে পড়াশোনা করেন। স্কটল্যান্ডেও তিনি কিছুদিন পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে তিনি যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবিষয়ক ইস্যুতে ছিলেন সক্রিয়।
ওয়াসফিয়া নাজরীন ২০১৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অন্যতম বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পান। তাছাড়াও ২০১৬ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির উদীয়মান সেরা অভিযাত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রথম কোনো নারী হিসেবে জিওগ্রাফির এ দুটি খেতাব জয় করেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ