শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, উন্নত বিশ্বের সব দেশেই শিশু জন্মের পরই নিবন্ধন করা হয়।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, শিশুর জন্মগ্রহণের পর জন্ম-নিবন্ধীকরণ করার কথা বলা হয়েছে। যদি না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা ও স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান ও জন্ম সনদ প্রদান করা।
তাই শিশুর জন্মের পর গুরুত্বের সাথে জন্ম নিবন্ধন করা উচিৎ। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন করা কেন জরুরি এবং কীভাবে ও কোথায় জন্ম নিবন্ধন করতে হবে তা অনেকেরই অজানা। সেই সাথে জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন করতে হবে সেই সম্পর্কেও অনেকে জানেন না।
আমাদের আজকের প্রতিবেদনে আমরা এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।
জন্ম নিবন্ধন করা কেন জরুরি?
জন্ম সনদ হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।
কোন কোন কাজে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়-
* পাসপোর্ট ইস্যু
* বিবাহ নিবন্ধন
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
* সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান
* ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
* ভোটার তালিকা প্রণয়ন
* জমি রেজিষ্ট্রেশন
* ব্যাংক হিসাব খোলা
* আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি
* গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
* ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি
* ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি
* বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি
* গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন
* ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি
* বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ
* শিশু শ্রম প্রতিরোধ ও
* জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি।জন্ম নিবন্ধ তৈরিতে কী কী লাগবে
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স পাঁচ বছরের মধ্যে হলে-
* তথ্য সংগ্রহকারীর প্রত্যয়ন
* অথবা ইপিআই কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি।
* অথবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি।
* অথবা নিবন্ধকের যে রকম প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি।
অথবা, তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোনো এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স পাঁচ বছরের বেশি হলে-
* বয়স প্রমাণের জন্য এমবিবিএস ডাক্তারের ও জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর/সদস্যের প্রত্যয়ন।
* অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক বা তৎকর্তৃক মনোনীত শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন।
* অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য ইপিআই কার্ড বা পাসপোর্ট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি।
* তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোনো এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।
জন্ম তথ্য প্রদান করবেন কারা?
শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন। এ ছাড়াও
যারা কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের নিকট তথ্য প্রেরণ করতে পারবেন--
* ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সচিব
* গ্রাম পুলিশ
* সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর
* ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী
* স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী
* কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা
* নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী
* জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি
* পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;
* নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।জন্ম নিবন্ধন করার পদ্ধতি
বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের শুরুতেই সশরীরে ফরম পূরণ করে নিবন্ধ করতে হতো। যা এখনো চালু আছে। তবে চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে আবেদনকারীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধনের ফরম তুলে তা পূরণ করতে হবে।
ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এরপর ফরমটি ঠিকানা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অফিস বা সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনে জমা দিতে হবে।
এরপর সেখান থেকে জন্ম সনদ প্রদানের একটি নির্দিষ্ট তারিখ লিখে কুপন দেবে। নির্দিষ্ট তারিখে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কুপন দেখিয়ে স্বাক্ষর করে তবেই নিতে পারবেন জন্ম সনদ। তবে তা হাতে পাওয়ার পর অবশ্যই সব তথ্য ও অফিসারদের স্বাক্ষর ঠিক আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন তৈরির ফি কত?
২০১০ সালে জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের সুবিধা ছিল। তবে এরপর থেকে নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে ফি আদায় করা হয়। দেশে আবেদনের ক্ষেত্রে- শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে, ৪৫ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, শিশু জন্মের ৫ বছর পর ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
অন্যদিকে বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রে- শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে, ৪৫ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ১ মার্কিন ডলার, শিশু জন্মের ৫ বছর পর ১ মার্কিন ডলার।
জন্ম নিবন্ধন কোথায় করবেন?
ব্যক্তির জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা অথবা বর্তমানে বসবাস করছেন এমন যে কোনো স্থানের নিবন্ধকের কাছে জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন-
* ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য
* পৌরসভার মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর
* সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর
* ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা
* বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসারগণ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসমূহে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রধান কার্যালয়ে ও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে পুরোনো পৌরসভা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ জন্ম নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
অনেকেই সশরীরে হাজির হয়ে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। আবার অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে ফরম পূরণ করেন। তবে জন্ম সনদ করার সময় অসতর্ক কিংবা অসচেতন থাকায় ভুল হয়ে যায়।
দেখা যায়, কারও নামের বানানে ভুল আছে কিংবা বাবা-মায়ের বানান ঠিক নেই। আবার জন্ম তারিখ, মাস বা সাল ভুল আছে ইত্যাদি হতে পারে। পরবর্তীতে এই ভুল সংশোধনের জন্য আবার অনেক ঝামেলা পোহাতে।
কোথায় গিয়ে ও কীভাবে জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করবেন, এ বিষয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ১০-১৫ কার্যদিনের মধ্যেই আপনি সঠিক সনদটি হাতে পাবেন।
এক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র সঙ্গে রাখবেন
* আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন (যা অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে)
* পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন (যা অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে)
* শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ/টিকা সনদ অথবা তথ্য প্রমাণের জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো সনদ।জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই
* আপনার মাতা/পিতার নাম সংশোধন করতে হলে তাদের জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধনটির তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
* দ্বিতীয় পর্যায়ে, যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন করার সময় মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রথমে দিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের নাম সংশোধন করার পরে, আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রিত হলে সেখানে মাতা/পিতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে।
* ৩য় পর্যায়ে যদি, জন্ম নিবন্ধন করার সময় আপনার মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না দেন, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বরের সঙ্গে মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ তৈরি করতে হবে।
মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ করার পরে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে, সেখানে আপনি মাতা/পিতার সংশোধিত নাম দেখতে পাবেন।
* ৪র্থ পর্যায়ে, যদি আপনার মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে। এ ছাড়াও আপনার জন্ম তারিখ যদি ০১/০১/২০০১ এর আগে হয়, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের আবেদনে মাতা/পিতার নামও সংশোধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার মাতা/পিতা যদি মৃত হয় তাহলে তাদের মৃত্যুর কোনো প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে না।
* ৫ম পর্যায়ে, মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকলে কিংবা মাতা/পিতা মৃত হলে ও আপনার জন্ম তারিখ যদি ০১/০১/২০০১ এর পরে হয়, তাহলে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করলে মাতা/পিতার নাম সংশোধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও মৃত পিতা/মাতার মৃত্যুর প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন যেভাবে
ধাপ-১: জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন অনলাইন আবেদন করার জন্য এই লিংকে প্রবেশ করুন (http://bdris.gov.bd/br/correction)। এরপর পোর্টালের জন্ম তথ্য সংশোধন ফরমে প্রথমে যার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান, তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রবেশ করুন।
এখানে প্রথমে আপনার অনলাইন নিবন্ধন নম্বরের ১৭ ডিজিট প্রবেশ করুন। এরপর জন্ম তারিখ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে নির্বাচন করে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন। তথ্য সঠিক থাকলে নিচে নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্য প্রদর্শন করবে।
প্রর্দশিত তথ্যের পাশে থাকা নির্বাচন করুন একশন বাটনে ক্লিক করুন। আপনি কি নিশ্চিত?' মেসেজ প্রদর্শন করবে। সেখানে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অবশ্যই নিবন্ধিত ব্যক্তির জন্ম সনদটি অনলাইনে থাকতে হবে। জন্ম সনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ সংখ্যার হতে হবে। অন্যথায় জন্ম সনদ অনলাইন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ধাপ-২: এই ধাপে আপনার যে ইউনিয়ন বা পৌরসভার অধীনে জন্ম নিবন্ধনটি করা হয়েছে সে ঠিকানা নির্বাচন করুন। এখানে প্রথমে দেশ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে যে দেশ থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে, সে দেশ নির্বাচন করুন।
বাংলাদেশ নির্বাচন করলে বিভাগ অপশন থেকে বিভাগ ও ছবিতে প্রর্দশিত আবশ্যিক তথ্যগুলো নির্বাচন করুন। সব তথ্য নির্বাচন হয়ে গেলে পরর্বতী বাটনে ক্লিক করুন। এই ধাপে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ-৩: আপনার জন্ম নিবন্ধনে তথ্য সংশোধনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে আপনি তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এন্ট্রি করবেন।
প্রথমে বিষয়ের ড্রপ ডাউন মেনু থেকে সংশোধনের বিষয় নির্বাচন করুন। আপনি চাইলে যেসব বিষয় সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন তাহল-
ক. নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে), খ. পিতা ও মাতার নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে), গ. জন্ম তারিখ, ঘ. জাতীয়তা, ঙ. লিঙ্গ, ও চ. জাতীয় পরিচয়পত্র।
আপনার যে তথ্যটি সংশোধন করার প্রয়োজন তা নির্বাচন করার পর সংশোধিত তথ্য বক্সটি সক্রিয় হবে। এখানে আপনার সঠিক তথ্যটি প্রদান করে সংশোধনের কারণ হিসেবে ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তা নির্বাচন করুন।
একাধিক তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন হলে আরও তথ্য সংযোজন করুন বাটনে ক্লিক করে সংশোধনের প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিন।
ধাপ-৪ : ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এন্ট্রি করার পর আপনার জন্ম স্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিন।
দেশ, বিভাগ, ডাকঘর (বাংলায় ও ইংরেজিতে), গ্রাম / পাড়া / মহল্লা (বাংলায় ও ইংরেজিতে), বাসা ও সড়ক ( নাম, নম্বর ) সঠিকভাবে এন্ট্রি করুন।
নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্যাদি সংশোধনের জন্য যিনি আবেদন করছে তার তথ্য প্রদান করুন। আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক নির্বাচন করুন ও আবেদনকারীর নাম, আবেদনকারীর ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল প্রদান করুন।
সংশোধনের আবেদনকারী পিতা-মাতা ব্যতিত অন্য কেউ হলে তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করুন। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদনের স্বপক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করার জন্য সবুজ চিহ্নিত সংযোজন বাটনে ক্লিক করুন;
আপনার প্রত্যাশিত ফাইলটি নির্বাচন করে অপেন বাটনে ক্লিক করুন। আপনার নির্বাচিত ফাইলটি প্রিভিউ দেখাবে ও এর পাশে থাকা ফাইল টাইপ ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার সংযুক্তির ধরন নির্বাচন করে আপলোড করার জন্য স্টার্ট বাটনে ক্লিক করুন।
আবেদন ফি
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ফি চালান অথবা অনলাইন ফি পরিশোধ পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিশোধ করতে হবে।
আপনি যদি অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান তাহলে ফি আদায় বাটনে ক্লিক করুন।
চালানের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে থাকলে- চালান নং, চালান জমা দেয়ার তারিখ, চালান পরিশোধের মাধ্যম, ব্যাংক, জেলা ও ব্যাংক ব্রাঞ্চ সঠিকভাবে এন্ট্রি করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
সাকসেস বা সফল ম্যাসেজ আসলে বুঝতে হবে, আবেদনপত্রটি সফল ভাবে সাবমিট করা হয়েছে।আবেদন দাখিল হওয়ার পর প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে, আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কাছে (ইউনিয়ন বা পৌরসভায়) দাখিল করুন।
এরপর নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। নিবন্ধন সঠিক হওয়ার পর আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনটি হাতে পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধন না করলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন-
* স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রদর্শন করতে হয়। অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকার ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না।
* শিশুরা যদি কখনো কিশোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, সেক্ষেত্রে বিচার শুরুর আগেই তার বয়স প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* পড়াশোনা, জীবিকা, ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যেতে প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের। আর পাসপোর্টের আবেদন ফরমের সঙ্গে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে হয়।
* ভোটার আবেদন ফরমের সঙ্গেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা যায় না।
* সরকারি চাকরি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরির ক্ষেত্রেও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হয়।
* বিয়ের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিয়ের সময় বয়স প্রমাণের জন্য এটি ভূমিকা পালন করে।
* এমনকি সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। এই সনদ না থাকলে এক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
* সরকারি বা বেসরকারি সব ধরনের সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পেতে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
* অনেকেই ১৮ বছরের পরপরই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তখন আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় নয় বরং জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে।
জন্ম নিবন্ধন আইনের বিধান অনুযায়ী এই বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা ব্যক্তি অনধিক ৫০০ টাকা অথবা অনধিক ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
নয়া শতাব্দী/ এডি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ