ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেমব্রিজে ফিরল চুরি যাওয়া ডারউইনের নোটবই

প্রকাশনার সময়: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫৯

যোগ্যতম হারিয়ে যায় না। চলে যায় না বিলুপ্তির গ্রাসে। বরং যোগ্যতমই টিকে থাকে। প্রায় দুইশ’ বছর আগে বিবর্তনবাদের প্রবক্তা কিংবদন্তি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বলে যাওয়া সেই তথ্যের হারিয়ে যাওয়া নথি দুই দশক পরে ফিরে এল স্বস্থানে।

টানা ২১ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পর কলম দিয়ে লেখা ও আঁকায় পূর্ণ ডারউইনের দুইটি নোটবুক, কিছু লেখা ফিরে এল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে। রহস্যজনকভাবে। কে ফিরিয়ে দিলেন, কোন পথ ধরে এসে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন সভ্যতার প্রায় দুইশ’ বছরের প্রাচীন সেই সম্পদ, জানা যায়নি এখনো পর্যন্ত। তবে যিনিই ফেরত দিয়ে যান, ২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ডারউইনের সেই নোটবুক আর লেখাগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যেন তিনি ফের প্রমাণ করে দিলেন, যোগ্যতমই টিকে থাকার এই নথি যোগ্যতমের মতোই হারিয়ে যায় না। যেতে পারে না। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ‘যেমন ছিল তেমন’ অবস্থায় ডারউইনের সেই সব লেখালেখি গ্রন্থাগার ভবনের বাগানে একটি গোলাপি রঙের প্যাকেটে ভরে কেউ রেখে গেছেন। যিনি সভ্যতার সেই সম্পদকে আড়াল থেকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন, তিনি কিন্তু প্রমাণ দিয়েছেন তার রসিকতাবোধেরও। ফেরত দিতে গিয়ে তিনি সঙ্গে রেখে গেছেন বাদামি রঙা একটি খাম। যার ওপরে লেখা ছিল, ‘লাইব্রেরিয়ান/হ্যাপি ইস্টার/এক্স’।

‘হারিয়ে যাওয়া ডারউইন’-কে ২১ বছর পর অবিকৃতভাবে তার নিজস্ব ঠাঁই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরাতে গিয়ে গ্রন্থাগারিককে ইস্টারের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন কেউ, যার পরিচয় এখনো রহস্যাবৃত।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, যেখানে সেগুলো রাখা ছিল তার আশপাশে কোনো সিসিটিভি লাগানো নেই। তাই জানা সম্ভব হয়নি, কে সেগুলো রেখে গেছেন।

পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণ এক থেকে কীভাবে বহু হয়েছে, কীভাবে ধাপে ধাপে শাখা, প্রশাখায় পল্লবিত হয়েছে তা বোঝাতে ১৮৩৭ সালে ডারউইন একটি স্কেচ এঁকেছিলেন। যা ‘ট্রি অব লাইফ’ (প্রাণের বৃক্ষ) নামে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। ২১ বছর আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ভবন থেকে সেটিও নিখোঁজ হয়েছিল। সেটিও ফিরে এসেছে। হারিয়ে যাওয়া ডারউইনের নোটবুক আর লেখাগুলো কেউ রেখে গেছেন ১৮ তলা উঁচু গ্রন্থাগার ভবনের পাঁচ তলায় গ্রন্থাগারিকের কার্যালয়ের অদূরে। প্রয়োজন হয় না বলে যেখানে কোনো সিসিটিভি বসাননি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। ২১ বছর আগে সেখানেই ছিল ‘ডারউইন-নথি’।

২০০১ সালেই গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ প্রথম জানতে পারে, ডারউইনের ওই নোটবুকগুলো খোয়া গেছে। তখন ভাবা হয়েছিল, গ্রন্থাগারের ১০ লাখেরও বেশি বইয়ের তাকের কোথাও না কোথাও হয়তো সেগুলো রয়েছে। ভালোভাবে খুঁজে দেখলে পাওয়া যাবে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। তার পর ২০১৭ সালে গ্রন্থাগার ভবনের দায়িত্ব পান জেসিকা গার্ডনার। তিনিই প্রথম পুলিশকে লিখিতভাবে জানান, ওইসব মূল্যবান সম্পদ গ্রন্থাগার থেকে চুরি হয়ে গেছে বলে। তা যাতে বহু হাত ঘুরে বিদেশের বাজারে কোনোভাবে বিক্রি না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয় ইন্টারপোলকেও। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে কেমব্রিজের কনস্ট্যাবুলারিতে ঘোষণা করা হয়, ওই সম্পদগুলো আর গ্রন্থাগারে নেই। সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এর দেড় বছরের মাথায় সেগুলোর প্রত্যাবর্তন ঘটল রহস্যজনকভাবে। গ্রন্থাগারিক গার্ডনার জানিয়েছেন, গ্রন্থাগারে দুই প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন ও স্টিফেন হকিংয়ের যাবতীয় লেখালেখি ও বইগুলো যেখানে রাখা আছে, তারই পাশে রয়েছে ডারউইন আর্কাইভ। সেখানেই আবার রেখে দেয়া হবে হারিয়ে গিয়ে ফিরে আসা ডারউইনের দুইটি নোটবই আর কিছু লেখা ও স্কেচকে। যা জুলাইয়ে ফের হাজির করা হবে গ্রন্থাগারে আসা মানুষের সামনে। আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ