ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

উটের সুন্দরী প্রতিযোগিতা

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৫০

পৃথিবীতে জমকালোভাবে প্রতিবছর মিস ওয়ার্ল্ডস, মিস ইউনিভার্সসহ নানা ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। তবে বিশ্বে অন্যরকম কিছু সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় যা জানলে হয়তো অনেকই অবাক হবেন। এমনই অবাক করা একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা আরব দেশগুলোতে প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়। সেটি হলো উট সুন্দরী প্রতিযোগিতা। আরবদের কাছে উটের কদর অনেক। সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী হিসেবে তারা উটকে বিবেচনা করেন। তাদের মতে, উট বেদুইনদের জন্য ঈশ্বরের উপহার। তারা উটকে এতটাই ভালোবাসেন যে, প্রতিবছর আয়োজন করা হয় উটের সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যেখানে অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার উট। এদের মধ্য থেকেই বেছে নেয়া হয় সবচেয়ে সুন্দর উটকে। ২০০০ সাল থেকে সৌদি আরবে ‘কিং আব্দুল আজিজ ক্যামেল ফেস্টিভাল’ নামে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে উট সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যেখানে দেশটির বাছাই করা সব সুন্দরী উট নিয়ে হাজির হন বড় বড় ব্যবসায়ীরাও। এমনকি উটের সৌন্দর্য বাড়াতে কৃত্রিম উপায় বেছে নিয়ে অনেকে ধরাও খেয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে হওয়া সর্বশেষ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রতিযোগিতাটির আসর বসেছিল। সেখানেই কৃত্রিম উপায়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠার পর প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে অন্তত ৪০টি উট।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, উটের সুন্দরী প্রতিযোগিতা দেশটি অন্যতম একটি উৎসব। যার নামকরণ করা হয়েছে বাদশাহ আব্দুল আজিজের নামে। প্রতিযোগিতার বিচারকরা জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতায় যে ৪০টি উট অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে তাদের বোটক্স ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য আরো অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিযোগিতার পুরস্কারমূল্য ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বেশি প্রাধান্য পায় উট কতটা লম্বা, ঝুলে যাওয়া ঠোঁট, বড় নাক এবং সুঠাম কুঁজ। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, উটগুলোর সৌন্দর্য বাড়াতে যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়েছে তা এর আগে কখনো বিচারকরা দেখেননি। তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে উট এখন একটা ঐতিহ্য। সেই ঐহিত্যের অংশ হিসেবে দেশটিতে নানা ধরনের আয়োজন করা হয়। এমন কি উটের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জন্য দেশটিতে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্প, যারা অপেক্ষায় থাকেন এই প্রতিযোগিতার।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রতিবছরের ডিসেম্বরে আল-ধাফরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সারা উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা ৩০ হাজারেরও বেশি উট এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ক্যামেল বিউটি পেজেন্ট নামক এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো উটের সৌন্দর্য বিবেচনা করা। তবে কীভাবে উটের সৌন্দর্য বিচার করা হয়?

উটের মালিক ও আল-ধাফরা আয়োজক কমিটির সদস্য আলি আল মানসুরির গাল্ফ নিউজকে বলেন, বিচারকরা বড় মাথা, চওড়া ঘাড়, শক্ত কান, চওড়া গালের উট খুঁজে বের করেন। তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে উটের শরীর লম্বা হতে হবে, কুঁজ ও পিঠ বড় হতে হবে। একইসঙ্গে উটের রং ও ভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতা দুইটি পর্যায়ে পরিচালিত হয়। একটি হালকা রঙের আসায়েল জাতের জন্য ও অন্যটি কালো চামড়ার মাজাহিমের জন্য। উটের মালিক খামিস মোহাম্মদ আল শরী বলেন, কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিযুক্ত একটি বিশেষ কমিটি আছে, যারা প্রতিযোগিতার বিচার করেন। তারা সব উটকে এক কলমে বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের মানদণ্ড পূরণকারী সেরা ১০টি উটকে বিজয়ী বলে গণ্য করা হবে। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় উট জয়ী হলেও পুরস্কার ভোগ করেন মালিকরা। স্কাই নিউজ এর খবরে বলা হয়েছে, পুরস্কার হিসেবে সাত লাখ টাকা বা ১৮-৩০ হাজার দিরহামসহ বিলাসবহুল গাড়ি পান তারা। যদিও এটা শুধু টাকার বিষয় নয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া উটমালিক পরিবারগুলোর মধ্যে এটি একটি গর্বের বিষয়। আল ধাফরা উৎসবে উপসাগরের বাইরে থেকেও অংশগ্রহণকারীদের আকর্ষণ করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় তিন লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি উট আছে। এই বলিষ্ঠ প্রাণীগুলো মরুভূমির কঠোর জলবায়ুকে প্রতিহত করতে পারে। এ কারণে উটকে আরবের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে ভাবা হয়। তারা বেদুইনদের জন্য দুধ দেয় ও পরিবহনে সাহায্য করে। বেদুইন সংস্কৃতি উদ্যাপন ও প্রচারের জন্য আল-ধাফরা উৎসব এবার ৭ম বারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর শুরু হবে এই উৎসব। দুই সপ্তাহ চলবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে উটের দৌড়, শালুকি দৌড়, বাজপাখি প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী আমিরাতি বাজারও উৎসবের অন্যতম এক আকর্ষণ।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ