ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ!

প্রকাশনার সময়: ২২ নভেম্বর ২০২১, ২২:২৮ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১, ২২:৪৬

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কেনিয়ার শ্যামবুরু এলাকার উমোজা গ্রাম। বিশ্বব্যাপী নারীদের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত উমোজা। কেননা এ গ্রামে পুরুষদের বসবাস নিষিদ্ধ। কেনিয়ার সার্বজনীন সোয়াহিলি ভাষায় ‘উমোজা’ মানে ঐক্য।

দেশটির রাজধানীর নাইরোবি থেকে ৬ ঘণ্টার দূরত্বের এই গ্রামটির নাম কেনিয়া ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে সারা বিশ্বে। নর্থ-সেন্ট্রাল কেনিয়ার নারী-সর্বস্ব এই গ্রামের কথা জানেন না এমন মানুষ কেনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য উমোজা’র নাম মনে রাখার মতো দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন গ্রামের নারীরা।

১৯৯০ সালে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, বিভিন্নভাবে অবহেলিত ও নির্যাতিত আরো ১৫ নারীকে নিয়ে রেবেকা লোলোসলি নামের এক নারী গড়ে তোলেন উমোজা। পরবর্তীকালে আশেপাশের এলাকা থেকেও সামাজিক ও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীরা একে একে এখানে এসে বসবাস করা শুরু করেন। ২০১৫ সালে এই গ্রামে বসবাসকারী নারীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭-এ।

বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় ২৫০ জন নারী বসবাস করেন। এই গ্রামে বেশিরভাগ নারীই সাম্বুরু আদিবাসী। এ ছাড়াও তুর্কানা এবং অন্যান্য আদিবাসীও আছে কয়েকজন। লোলোসলি তার স্বামী ও বিভিন্ন পুরুষের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন বহুদিন, চেষ্টা করেছেন বিচার চাওয়ার। কিন্তু পরে দেখলেন সেই নির্যাতনকারীরাই ঘুরে বেড়াচ্ছে অবাধে। তাই জেদ থেকেই নারীর এই অভয়ারণ্য উমোজা গড়ে তোলেন। যেখানে শুধু নির্যাতিত নারী ও তার সন্তানদের নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করা হয়। পুরুষের বসবাস নিষিদ্ধ সেখানে। তবে তার মানে এই নয় যে গ্রামে পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামটিতে পুরুষ না থাকলেও সেখানকার নারীরা অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন, সন্তানও জন্ম দিচ্ছেন। ২৭ বছর ধরে গ্রামটিতে ঘটছে এমন ঘটনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা বেশ বেড়েছে। পুরুষশূন্য গ্রামে প্রতি বছর কোনো না কোনো নারী সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ফলে বংশবৃদ্ধিও হচ্ছে। তারা নিজের সঙ্গী নিজেই বেছে নেন। এই গ্রামের নারীরা গ্রাম থেকে বেরিয়ে নিজের পছন্দের পুরুষটিকে খুঁজে নেন এবং ওই ব্যক্তির সন্তান জন্ম দেন। এখানে কোনোরকম সম্পর্ক, বিবাহ, সম্পর্কের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তারা কেউই বিয়ে করেন না।

উমোজা ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তবে কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে নয়। সাহসী নারীরা কীভাবে এমন একটি সমৃদ্ধ সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পারলো সেটিই উমোজার প্রধান দর্শনীয় বৈশিষ্ট্য। গ্রামের দলনেতারা নদী থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ক্যাম্প পরিচালনা করেন। সেখানে পর্যটকরা এসে থাকেন। এদের মধ্যে অনেকেই আশপাশের গ্রামসহ উমোজাতেও ঘুরতে আসেন। বাইরের যে কাউকে উমোজাতে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট একটি ফি প্রদান করতে হয়। নারীরা আশা করেন, পর্যটকরা এসে তাদের হাতে বানানো গহনা কিনবে। অনেকেই নিজেদের পছন্দমতো গহনা বানিয়ে নিয়ে যান উমোজার নারীদের কাছ থেকে। অসাধারণ সব রঙ ও ঢঙের গয়না যেমন একদিকে তুলে ধরেছে আফ্রিকান চিরচেনা ঐতিহ্যকে, তেমনি অন্যদিকে প্রতিটি গয়নার সঙ্গে জড়িয়ে আছে উমোজা নারীদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্পগুলো। এছাড়াও সেখানকার নারীরা কৃষি কাজও করে থাকেন।

উমোজার স্কুলের চিত্রটিও বেশ মনোরঞ্জক বলা চলে। সেখানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হয়, যাতে তারা ভবিষ্যতে অহিংস আর নারীর প্রতি নির্যাতনবিহীন একটি সমাজ তৈরি করতে পারে।

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কেনিয়ায় এসেছিলেন বারাক ওবামা। উমোজা গ্রামে ঘুরে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘বিশ্ব জুড়েই নারীদের দমিয়ে রাখার একটি রীতি রয়েছে। নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করা হয়। এ সমস্ত কু-রীতিনীতি বদলানোর প্রয়োজন। উমোজা গ্রাম হতে পারে তার সুন্দর উদাহরণ।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ