সোনালি আঁশ খ্যাত পাট চাষে আবারও ফিরছে সুদিন। একসময় সোনালি আঁশ যখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন পাট চাষ বন্ধ করেছিল কৃষক। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভালো দাম পাওয়ায় আবারও পাট চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। রাজশাহীতে এবার ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। জমিতে পাট গাছও ভালো হয়েছে। সম্ভাবনাময় এই ফসল ঘরে তোলে সুদিনের আশায় রয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক। বর্তমানে বাজারে পাটের দামও ভালো।
এবার প্রতিমণ পাট দুই হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পাট রফতানি আয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এতে কৃষকরা পাট নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন। পাটের হারানো ঐহিত্য ফিরে পেতে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়াসহ অন্যান্য খাত নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে, তখন আশার আলো দেখাচ্ছে পাট ও পাটজাতীয় পণ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা নয়া শতাব্দীকে বলেন, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা মিলে এবার ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় রাজশাহী অঞ্চলে পাট চাষ বাড়ছে। আবাদ ভালো হয়েছে। গত বছর ১৪ হাজার ১৯৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবারে (২০২১) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ১৪১ হেক্টর বেশী জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার জেলায় প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চাষিরা পাটের ভাল দাম পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ১০০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৫শত ১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পাট চাষে ঝুঁকেছে কৃষক। গত ২ বছর যাবৎ পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক পাট চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। অনেক কৃষকই বলছেন পাট চাষীদের সুদিন ফিরেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতীয় পাট আবাদ বেশি হয়েছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুরের দেবীপুর গ্রামের কৃষক সিদ্দিক জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে বর্তমানে বৃষ্টি হয়ে পাটের আবাদে উপকৃত হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক হাসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট উৎপাদন হয় প্রায় ৮-১০ মণ। বর্তমানে বাজার দর অনুযায়ী সর্বনিম্ন মূল্য ২০-২৫ হাজার টাকা।
এছাড়া বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকার পাটকাঠি পাওয়া যায়। গত বছর ভরা মৌসুমে প্রতি মণ পাট ২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও ক্রমশই পাটের দাম বাড়তে থাকে। গতবছর সর্বশেষ ৪ হাজার টাকা মণ পাট বিক্রি হয়েছে।
ফলে যারা পাটের ভরা মৌসুমে বিক্রি না করে রেখে দিয়েছিলেন, তারা বিঘা প্রতি প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তা মশিউর জানান, রাজশাহীতে পাট চাষীদের সুদিন ফিরেছে। পাট চাষ করে কৃষক এখন অনেক লাভবান হচ্ছেন। এবার আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকলে কৃষকরা ভাল ফলন পাবেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ