ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর তীরঘেষা ছোট্ট একটি গ্রাম গাবতলী। যাকে নৌকার গ্রাম নাম চিনেন স্থানীয় সকলে। ছোট্র গ্রামের ৫৬টি পরিবারের সকল কর্মক্ষম পুরুষ নৌকা তৈরীর কারিগর। গ্রামের সর্বত্রই বাজছে হাতুরি পেটানোর ঠকঠক শব্দ। তৈরি করেন ছোট-বড়-মাঝারি বিভিন্ন প্রকৃতির নৌকা। বিক্রি হয় আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে এই গাবতলী গ্রামের অবস্থান। নৌকা বিক্রির মাধ্যমেই অর্থ উপার্জন করেন এই গ্রামের মানুষজন। আর নৌকাকে সাথে নিয়েই বেচেঁ থাকার স্বপ্ন দেখেন তারা। তবে পুজিঁ পেলে তাদের এই আত্মকর্ম থেকেই হতে পারে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান।
প্রায় এক’শ বছর আগে ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার উপজেলার ত্রিমোহনায় ব্রক্ষপুত্র নদীর পাশেই গড়ে ওঠে ছোট্ট এ গ্রাম। ছিলনা কোন শিক্ষিত পরিবার, রাস্তাঘাট ও শিল্পকারখানা। লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। বর্তমানে নৌকা বানানোর কাজ করে অনেকেই তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। এ কাজের মাধ্যমে গ্রামটিতে উন্নয়নের ছোয়াঁ দিতে যৌথভাবে চেষ্টা করছেন সকলেই। আর পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরা বড়দের এ কাজে সাহায্য করছে।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, ভুলতা-গাউছিয়া থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে ব্রক্ষপুত্র নদীর পাশেই গড়ে ওঠা ছোট্ট এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের কর্তা নৌকার প্রধান কারিগর। বাপদাদার কাছে থেকে রপ্ত করা কৌশলেই চলে নৌকার বানানোর কাজ। চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় এই চার মাস নৌকা বানানোর ধুম লাগে পুরো গ্রামে। এসময় কোন অবসর থাকেনা কারিগরদের। বছরের বাকি সময় জলচৌকি, কাহাইল, সাহাইড, চৌকি, পড়ার টেবিল, কাঠের চেয়ার সহ আসবাবপত্র তৈরি করে।
তিনটি আকৃতির নৌকা বানানো হয় এই গ্রামে। প্রতিটি ছোট নৌকার (৫-৬ হাত) খরচ হয় দুই/আড়াই হাজার টাকা আর বিক্রি হয় তিন/সাড়ে তিন হাজার টাকায়, মাঝারি নৌকা (৭-৮হাত) খরচ হয় চার হাজার টাকা আর বিক্রি হয় পাঁচ/ ছয় হাজার টাকা এবং বড় নৌকা (১০-১১ হাত) বানাতে খরচ হয় ছয়/সাত হাজার টাকা আর বিক্রি হয় এগারো/বারো হাজার টাকা। বছরের চার মাসের উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে নৌকার কারিগরদের সংসার। বছরের বাকী সময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মেটানো হয় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ।
এ গ্রামের কারিগর মিয়া বলেন, বর্ষাকালে গ্রাম এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা। এছাড়াও নদী পাড়াপাড়, পুকুর, খাল-বিল, জলাশয়ে মাছ চাষ ও ধরার কাজে নৌকার বিকল্প নেই।
নৌকার কারিগর হরিহর বিশ্বাস বলেন, কাঠ-হাতুরির ঠকঠক শব্দই আমাদের ভাললাগা। আমরা আনন্দের সঙ্গে কাজটি করি। বর্ষা মৌসুমে নৌকার বেশ চাহিদা থাকে। এসময় আমাদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়।
গাবতলী গ্রামের নৌকার কারিগর রতন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, তার বাবা ৫৪ বছর ধরে নৌকা বানানোর কাজ করছেন। তিনি এখনো কাঠ দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতে পারেন। আর বাবার কাছেই আমার নৌকা তৈরির কাজ শেখা। তবে পুজিঁর সল্পতায় তেমন একটা লাভবান হয়না।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ