বিশ্বের প্রতিটি জাতির রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও নিয়ম কানুন। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু উদ্ভট ও হাস্যকর রীতির প্রচলন রয়েছে যা রীতিমতো অন্য সংস্কৃতিতে অবৈধ এবং অমানবিক। বিশেষ করে এমন সব উদ্ভট রীতি প্রচলিত রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে।
যুগ যুগ ধরে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের যাযাবর উপজাতি ওডাআবে পালন করে আসছে অন্যের বউ চুরি করে পালানোর মতো এমন এক উদ্ভট উৎসব। সেখানে অন্যের বউকে চুরি করা হলেও এতে কোনো শাস্তি নেই। এটি ওডাআবে জাতির কাছে ‘বউ চুরির উৎসব’ নামে পরিচিত।
প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস এলেই বউ চুরির উৎসব পালনের জাকজমকতা শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলে এই উৎসব। উপজাতিরা একে ‘গেরেওল উৎসব’ বলে থাকেন।
এই উৎসবের মূল আকর্ষণই হলো অন্যের বউকে চুরি করে পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শন করা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, যেসব পুরুষ অন্যের বউকে নিয়ে পালায়, তাদের স্ত্রীরা এই উৎসবে অংশ নেন। পাশাপাশি চলে খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান ও হৈ-হুল্লোড়।
এই উৎসবের জন্য ওডাআবে উপজাতির নারীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। কারণ, এই উৎসবে তারা নিজেদের পছন্দমতো পুরুষসঙ্গী বাছাই করে নেন। এই উৎসবের ‘ইয়াকে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীরা তাদের পছন্দের পুরুষকে বেছে নেন।
এই প্রতিযোগিতায় পুরুষরা নারীদেরকে আকৃষ্ট করতে নাচেন। ওডাআবে উপজাতি এই উদ্ভট উৎসবের মাধ্যমে নারী-পুরুষরা একে অন্যের পছন্দসই জীবনসঙ্গীকে নির্বাচন করেন। তারা আগের সম্পর্ক ভেঙে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেন। যা বিভিন্ন ধর্ম ও সামাজিক আইনে অবৈধ।
এছাড়াও ওডাআবে উপজাতির মেয়েরা বিয়ের আগে যার সঙ্গে ইচ্ছে সম্পর্কে যেতে পারে। এসব বিষয় তাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ও বৈধ। আবার বিয়ের পরও তারা যত খুশি স্বামী রাখতে পারেন। এই উপজাতির নারী ও পুরুষ তাদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে গর্ববোধ করে।
এই উৎসবের কয়েকমাস আগে থেকেই পুরুষরা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করা শুরু করে। ওডাআবে পুরুষদের ধারণা, তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে চোখের ধবধবে সাদাভাব, লম্বা নাক ও ঝকঝকে সাদা দাঁতে। তাই রূপচর্চার জন্য সঙ্গে আয়না রাখতে ভুলেন না তারা।
বউ চুরি প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা আগ থেকে সাজগোজ করেন পুরুষরা। মুখে মাখেন লাল মাটি, চোখে লাগান কাজল, ঠোঁটে দেন লাল লিপস্টিক। একইসঙ্গে নাকে সাদা বা হলুদ রেখা টানেন, আবার মাথার চুলে বিনুনি করে পুঁতি ও কড়ি লাগান। মাথায় পড়েন উটপাখির পালক।
এই প্রতিযোগিতায় বিচারক হন এই উপজাতির সেরা তিনজন বিবাহিত নারী। তারাই সেরা পুরুষদেরকে বেছে নেন। আর বাছাইয়ের পর সেরা পুরুষরা তাদের পছন্দসই নারীকে বেছে নিতে পারেন। ওডাআবে সমাজে এই অমানবিক কর্মকাণ্ডই বৈধ বলে বিবেচিত।
এই প্রতিযোগিতার পরেই শুরু হয় বউ চুরি উৎসব। নৃত্য প্রতিযোগিতা চলাকালীন পুরুষরা নাচের মাধ্যমে নারীদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। অনেক নারীই তাদেরকে সঙ্গী হিসেবে পেতে চান। তবে নৃত্যরত পুরুষ যাকে চান তাকে তিনি পরে খুঁজে নেন।
প্রতিযোগিতা শেষে ওই নারীকে ভিড়ের মধ্যে খুঁজে সুযোগ নিয়ে তার কাঁধে টোকা দেন। সেই ডাকে সাড়া দেয় নারীও। এরপর পরস্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান ওই পুরুষ। বউ চুরি করে ধরা না পড়লে ওই নারীর সমাজ স্বীকৃত দ্বিতীয় স্বামী হয়ে যান পুরুষটি।
এদিকে ওই নারীর সংসারে রেখে যাওয়া সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব নেয় তার পরিবার। এই উৎসবটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর মাস নিয়ে তাদের জল্পনা কল্পনা থাকে তুঙ্গে।
সূত্র: গার্ডিয়ান/আপ্যিকান এক্সপেনেন্ট
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ