ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হারিয়ে যাওয়া কিছু পেশা!

প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২২

পেশা মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। আদিমকালে মানুষের পেশা ছিল ‘পশু শিকার’ এরপর এলো কৃষিসহ আরও বহু রকমের পেশা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্যনতুন পেশা, আর সেই সঙ্গে বহু পেশা হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। এবার জেনে নেয়া যাক তেমনই কিছু হারিয়ে যাওয়া পেশা সম্পর্কে কিছু তথ্য। এ সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার কাছে সেই পেশাগুলো উদ্ভট ও হাসির মনেও হতে পারে।

হিউম্যান এলার্ম ঘড়ি: কখনো ভেবে দেখেছেন অ্যালার্ম ঘড়ি না থাকলে আপনাকে কে জাগিয়ে তুলত? তেমনই এক চাকরি ছিল মানুষকে জাগিয়ে তোলার। ১৮ শতকের গ্রেট ব্রিটেনে শিল্প-বিপ্লব শুরু হলে এ পেশার উদ্ভব হয়। সে সময়ে শিল্প-কারখানাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক কাজ করত। এ শ্রমিকদের খুব সকালে কারখানার কাজে যোগ দিতে হতো। আর তাদের খুব ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তোলার জন্য তারা নকার আপার্সদের সাপ্তাহিক বা মাসিক বেতনের বিনিময়ে ভাড়া করা হতো। অ্যালার্ম-ঘড়ি আবিষ্কারের পর তা যখন সহজলভ্য হয়ে যায় এই পেশা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৫০/৬০ এর দশকেও ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় নকার আপার্সদের দেখা যেত।

চিমনি সুইপার: চিমনির প্রথম ব্যবহার ইতালিতে ১৩ শতাব্দীতে পাওয়া যায়। তবে এটি ১৬ শতাব্দীর দিকে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময়ে, অনেকেই প্রায় প্রতিটি ঘরে ফায়ারপ্লেস দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করেছিলেন। প্রথম দিকে চিমনির ব্যবহার শুধু শাসক শ্রেণির মধ্যে প্রচলিত ছিল। কারও বাড়িতে চিমনি থাকার মানে ছিল তারা বিত্তবান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গরিব শ্রমিক শ্রেণির বাড়িতেও চিমনির ব্যবহার শুরু হয়। সব শ্রেণির মানুষের বাড়িতে চিমনির ব্যবহারের কারণ ছিল নগরায়ন এবং শিল্পায়নের দ্রুত বৃদ্ধি। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হতে থাকলে সেই বিল্ডিংগুলোর চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে পড়তে হতো ঝামেলায়। যেহেতু চিমনিগুলোতে কাঠ কয়লা ব্যবহার করা হতো তাই সেগুলো ঘন ঘন ময়লা হয়ে যেত। আর সেই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য পেশাদার চিমনি পরিষ্কারকের প্রয়োজন শুরু হয়। চিমনি সুইপাররা চিমনি পরিষ্কার করার জন্য নিজের সঙ্গে একজন শিশু রাখত। এই শিশুরা ছিল অনাথ। যেহেতু চিমনিগুলো বেশিরভাগই সরু ছিল সেগুলো ঝাড়ু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা যেত না, আর তাই পরিষ্কার করার জন্য মাস্টার সুইপাররা শিশুদেরই চিমনির পাইপে ঢুকিয়ে দিতেন। চিমনির ভিতরে ঢুকে শিশুদের শারীরিক ক্ষতি হতো এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত শতকের শুরুর দিকে চিমনি ঝাড়ু আবিষ্কার হওয়ার পর চিমনি সুইপারদের ব্যবহার কমে যেতে শুরু করে।

ইঁদুর ধরার চাকরি: ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউরোপীয়রা কিছু কর্মী নিয়োগ করেছিল যাদের কাজ ছিল ইঁদুর ধরে মেরে ফেলা, কারণ ইউরোপে তখন ইঁদুরের উপদ্রব ছিল খুবই বেশি। এ ইঁদুরের কারণেই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহামারি ব্ল্যাক ডেথ সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ ইঁদুর প্লেগ জীবাণুু বহন করে। এই ইঁদুর ধরার কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। ইঁদুরের কামড়ে রোগ হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি ছিল। ইঁদুর ধরার জন্য সাধারণত হাত দিয়েই ধরা হতো, অনেকে আবার ইঁদুর ধরার জন্য বেশ কিছু অভিনব পন্থাও আবিষ্কার করেছিলেন। ইঁদুর ধরা ও মারার বিভিন্ন ওষুধ আবিষ্কারের ফলে বতমানে এ পেশার প্রচলন আর নেই।

লেকটর: একটানা কাজ করতে করতে যে কারও মাঝেই একঘেয়েমি চলে আসতে বাধ্য। কিন্তু এটা আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোকসানের বিষয়। এজন্যই একসময় পাশ্চাত্য দুনিয়ার ফ্যাক্টরিগুলোতে লেক্টর হিসেবে একজনকে নিয়োগ দেয়া হতো, যার কাজ থাকত নিয়মিত খবর ও নানা সাহিত্যকর্ম পড়ে শোনানোর মাধ্যমে সহকর্মীদের চাঙ্গা রাখা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ