ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেলফি তোলায় দক্ষ দুই ইঁদুর

প্রকাশনার সময়: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫৭

সেলফি তোলায় বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহের শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই যে এর এমন জনপ্রিয়তা, তাতেও সন্দেহ নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সেলফি তোলায় দক্ষ দুই ইঁদুরের গল্প শুনে নেয়া যাক এবার।

ফরাসি শিল্পী অগুস্তঁ লিনিয়ের পরিচালিত একটি প্রকল্পে দুটি ইঁদুরকে একটি বোতামচালিত ক্যামেরার মাধ্যমে সেলফি তোলার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ইঁদুর দুটি যখন তাদের খাঁচার সঙ্গে সংযুক্ত একটি ক্যামেরা দিয়ে নিজেদের ছবি তুলতে শুরু করে, নিজেকে ‘খুব প্রভাবশালী’ মনে হচ্ছিল বলে জানান অগুস্তঁ।

২০২১ সালে তার স্নাতক অধ্যয়নের অংশ হিসেবে অগুস্তঁ লিনিয়ে ফ্রান্সের যেখানে বাস করতেন, সেখানকার একটি পোষা প্রাণী বিক্রির দোকান থেকে দুটি ইঁদুর কিনে আনেন। তাদের জন্য বড় একটি খাঁচা তৈরি করেন। তারপর এমন একটি কৌশল খাটান, যাতে খাঁচায় বসানো একটি বোতাম চাপ দিলেই ইঁদুররা চিনি পায়। আর ওই বোতামে চাপ দিলেই খাঁচার সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরা তাদের ছবি তুলে ফেলে।

এ প্রক্রিয়ায় আনন্দ, পুরস্কার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ররোচিত হয়ে আসক্তিমূলক আচরণের একটি ফলাফল তৈরি করেন লিনিয়ের। ‘আপনার যখন এ ক্ষমতা থাকবে, এমনকি যখন এটি কোটি কোটি মানুষের ওপর নয় বরং কেবল দুটি ইঁদুরের ওপরে, তারপরও মনে হবে সবকিছু নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসেছেন।’ ইঁদুরের সেলফির বিষয়ে সফল হওয়া প্রসঙ্গে লিনিয়ের বলেন, ‘আর এটি সত্যি এক আশ্চর্য অনুভূতি।’

লিনিয়ে তার খাঁচার নকশা করেন ‘স্কিনার বক্সে’র ওপর ভিত্তি করে। প্রাণীর আচরণ অধ্যয়নের জন্য আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী বিএফ স্কিনার যন্ত্রটি উদ্ভব করেন। লিনিয়ে জানান, ১৯৫০-এর দশকে স্কিনারের করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হন তিনি। এতে প্রাণীদের জটিল কাজ করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

লিনিয়ে নিজের এবং ভাইয়ের নামে ইঁদুর দুটির নাম রাখেন অগুস্তঁ ও আর্থার। লিনিয়ের জানান, তাদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় ইঁদুররা চিনি দেয়া বোতামটি কখনো কখনো স্পর্শ করত। তারপর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে তারা বোতাম টেপার ইতিবাচক প্রভাব বুঝতে শুরু করে। অর্থাৎ এটি টিপলেই যে চিনি পাওয়া যায় তা জেনে যায়।

যখন প্রাণী দুটি বিষয়টি বুঝে যায়, লিনিয়ের এদের সাধারণ একটি খাঁচায় সরিয়ে নেন। উদ্দেশ্য- এদের চিনির বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়া। তারপর তাদের মূল খাঁচায় নিয়ে আসেন। তবে এখন আর প্রতিবার বোতামে চাপ দিলেই চিনি মেলে না। বরং হঠাৎ হঠাৎ চিনি বের হয় বোতামে চাপ দিলে। কিন্তু চিনি পাওয়ার আনন্দটা একপর্যায়ে বোতাম টেপার মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে, তাই চিনি না পেলেও বোতাম টেপা বন্ধ করে না ইঁদুররা। কখনো কখনো মিনিটে একবারের বেশিও ইঁদুরগুলো বোতামে চাপ দিত বলে জানান লিনিয়ের। তাদের এ কাজ অনেকগুলো সেলফির জন্ম দেয়, যার মধ্যে কয়েকটি দেখে মনে হয় একটি পরিষ্কার, সাদা পটভূমিতে ছবি তোলা হয়েছে। অন্যগুলোতে আবার খুব কাছ থেকে তাদের মুখ বা চেহারা ফুটে উঠেছে। সেলফি তোলার বিনিময়ে গবেষণায় এ পুরস্কার দেয়াটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলো ও ডেটিং অ্যাপগুলোর দ্বারা ব্যবহারকারীদের এতে রাখার জন্য ব্যবহূত কৌশলের প্রতিনিধিত্ব করে বলে জানান লিনিয়ের। ‘যতবার তারা (ইঁদুর) বোতামটি চাপ দেয়, তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন থাকে এবং তারপর তারা এটি স্পর্শ করার সঠিক মুহূর্তটি শনাক্ত করে’, বলেন লিনিয়ের, ‘এটাই আমাকে মুগ্ধ করে।’

এখানে জানিয়ে রাখা উচিত, ডোপামিন এমন এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যেটি প্রাণীদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে আনন্দদায়ক অনুভূতিগুলোর পেছনে প্রধান কারণ এটি। কয়েক দিন সেলফি তোলার পরে পোষা ইঁদুরগুলো দক্ষিণ ফ্রান্সের এক শহরে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন লিনিয়ের। পরে সেখানে এগুলো মারা গেলে বাড়ির পেছনের বাগানে মাটিচাপা দেয়া হয়। সিএনএন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ