ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

২০০ বছরের প্রাচীন কোরআন

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৯

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের বো কাপ শহরের এক মসজিদে সংরক্ষিত রয়েছে ২০০ বছরেরও বেশি সময় পুরোনো পবিত্র কোরআন শরিফের একটি অনুলিপি। আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে নির্বাসিত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার এক ইমামের হাতে লেখা কোরআনের অনুলিপিটি ১৯৮০’র দশকে জীর্ণশীর্ণ এক কাগজের ব্যাগের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সংস্কারের কাজের সময় নির্মাণকারীরা বো কাপ শহরের আউয়াল মসজিদের চিলেকোঠায় কোরআনটি খুঁজে পান।

গবেষকদের বিশ্বাস, তুয়ান গুরু (শিক্ষক) নামে পরিচিত ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে কাদি আবদুস সালাম নিজ হাতে কোরআনের এ অনুলিপি লিখেছিলেন। ডাচ উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে শাস্তিস্বরূপ ১৭৮০ সালে ইন্দোনেশিয়ার তিডোর দ্বীপ থেকে রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে তুয়ান গুরুকে কেপটাউনে নির্বাসিত করা হয়। এরপরেই কোনো এক সময়ে তিনি নিজের স্মৃতি থেকে কোরআনের এই অনুলিপিটি রচনা করেন। মসজিদ কমিটির সদস্য ক্যাসেম আবদুল্লাহ তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ধুলোময় ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কেউ ওই চিলেকোঠায় প্রবেশ করেনি।’

নির্মাণকারীরা তুয়ান গুরুর লেখা ধর্মীয় গ্রন্থের একটি বাক্সও খুঁজে পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি। প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা বাদে পুরো কোরআনটি ভালো অবস্থায় ছিল। তবে এটি বাঁধাই করা না থাকায় পৃষ্ঠাগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ফলে ছয় হাজারেরও বেশি আয়াত সম্বলিত কোরআনের পৃষ্ঠাগুলো সঠিক ক্রমান্বয়ে সাজানোই ছিল গবেষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কালো এবং লাল কালিতে আরবি হরফের লিপিগুলো এখনও পর্যন্ত খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে। উদ্ধারের পর কোরআনের সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠাগুলো ক্রমান্বয়ে সাজানো দায়িত্ব পড়ে প্রয়াত মাওলানা ত্বহা করণের ওপর। কেপটাউন ভিত্তিক মুসলিম বিচারিক পরিষদের প্রধান আইনবিদ ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকজন স্থানীয় কোরআন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে পৃষ্ঠাগুলো সাজানো ও কোরআন বাঁধাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করতে তার তিন বছর সময় লেগেছিল। এরপর থেকে জনসাধারণের জন্য আউয়াল মসজিদে প্রদর্শিত হচ্ছে কোরআনের এই কপিটি। ১৭৯৪ সালে তুয়ান গুরুই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ হিসাবে পরিচিত।

চুরি বা যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে বছর দশেক আগে কোরআনের এই কপিটি একটি ফায়ার ও বুলেট-প্রুফ বক্সে সংরক্ষণ করা হয়। অন্তত তিনবার চুরির ব্যর্থ চেষ্টার পর সরক্ষণের ব্যাপারে আরও সচেতন হয়ে উঠে ফায়ার ও বুলেট প্রুফ বক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় সংরক্ষক কমিটি। তুয়ান গুরুর জীবনীকার শফিক মর্টন বিশ্বাস করেন, তুয়ান গুরুর নিজ হাতে লেখা কোরআনের পাঁচটি কপির মধ্যে প্রথমটি তিনি সম্ভবত রোবেন দ্বীপে (যেখানে এক সময় বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন মেন্ডেলাও বন্দি ছিলেন) বন্দি থাকাকালীন লিখতে শুরু করেছিলেন; সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেও তিনি তার এ কাজ অব্যাহত রাখেন। ধারণা করা হয়, তুয়ান গুরুর বয়স যখন ৮০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে তখনই তিনি কোরআনের বেশিরভাগ অনুলিপি রচনা করেন। তার এই অনুলিপি রচনার কৃতিত্ব আরও বেশি উল্লেখযোগ্য, কারণ তুয়ান গুরু আরবি ভাষাভষী ছিলেন না।

মর্টনের মতে, তুয়ান গুরুকে দুইবার রোবেন দ্বীপে কারাবন্দি করা হয়; প্রথমবার ১৭৮০ থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত, যখন তার বয়স ছিল ৬৯ বছর; এবং দ্বিতীয়বার ১৭৮৬ থেকে ১৭৯১ সালের মধ্যে তাকে আবারও কারাবদ্ধ করা হয়। ‘আমি বিশ্বাস করি, তার আশপাশের লোকেদের কোরআন সম্পর্কে জানাতেই তিনি (তুয়ান গুরু) অনুলিপি রচনা করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, কোরআনের একটি অনুলিপি লিখতে পারলে তিনি তার আশপাশের লোকদের কোরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের মর্যাদার শিক্ষাও দিতে পারবেন,’ যোগ করেন মর্টন। দক্ষিণ আফ্রিকার ইসলামিক ইতিহাসের বক্তা ও কোরআন গবেষক শেখ ওয়াইসি মনে করেন, তুয়ান গুরু মুসলিম বন্দি এবং দাসদের মধ্যে ইসলাম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কোরআনের অনুলিপি রচনা করেছিলেন। কারণ সে সময় এটি ছিল ডাচ উপনিবেশ এবং তারা তখন সেখানে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করছিলেন। শেখ ওয়াইসি বলেন, ‘যখন তারা (ডাচ সম্প্রদায়) বাইবেল প্রচার করে মুসলিম ক্রীতদাসদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছিলেন, তখন তুয়ান গুরু কোরআনের লিপি রচনা করে তা বাচ্চাদের শেখানো এবং আয়তগুলো মুখস্ত করানোর উদ্যোগ নেন।’

তুয়ান গুরুর হাতে লেখা কোরআনের পাঁচটি কপির মধ্যে তিনটি এখনও ভালো অবস্থায় আছে। এরমধ্যে একটি আউয়াল মসজিদে এবং বাকি দুটি তার প্রপৌত্রসহ তার পরিবারের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তুয়ান গুরুকে যখন ডাচরা দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাসিত করে, তখন হয়তো তাদের ধারণায়ও আসেনি, তিনি ওই অঞ্চলের ইসলাম প্রচারক হয়ে উঠবেন। বর্তমানে কেপটাউনে আনুমানিক ৪.৬ মিলিয়ন মুসলিম রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। বিবিসি।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ