পুরুষের পাশাপশি নারী উদ্যোক্তারাও আয়ের পথ হিসেবে বেচে নিয়েছেন অনলাইন ব্যবসাকে। নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ তাদের। পারিবারিক কাজের ফাঁকে ঘরে বসেই অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমে অর্থউপার্জন করে পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাচ্ছে ভৈরবের অন্তত দুইশতাধিক নারী উদ্যোক্তা।
অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই সফলতাও পাচ্ছে অবসরে বসে থাকা এসব নারীরা। করোনা মহামারির কারণে পরিবারের অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়ে নারীরা। অনলাইন নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও গৃহিনীদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবিরাও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলেই বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তা নিজের হাতে তৈরি করা পণ্য বিক্রি করে সাধারণ গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করছেন। আবার অনেকেই ওয়েবসাইট খুলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন ভৈরবসহ দেশের বিভিন্নস্থানে।
অর্ডারকৃত পণ্য হোম ডেলিভারীর মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
নিজেদের আইডিয়া কাজে লাগিয়ে ‘উই (ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম)’ এর সদস্য ভৈরবের নারী উদ্যোক্তা শোভা খানমের ‘রমণীর রং’ মিশু আক্তারের ‘দেশী রং দেশী ঢং’ আদ্রৌ জুইয়ের ‘ব্রাইডাল কালেকশন’ নাবিলা রহমানের ‘ নাবিলা ক্রাফট এন্ড ক্রিয়েশন’ মেহবুবা ফেরদৌস মিথিলা বিজনেস পেজ ‘আহরিকা, লামিয়া চৈতির ‘গুড ফুড’ ফারজানা আক্তারের ‘মাটির বাহার’ সহ বিভিন্ন নজরকারা নামে বিজনেস পেজে হাতের তৈরি নানান রকমের মশলা, ছাতুসহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যদ্রব্য, হাতের কাজের গহনা, শাড়ি, থ্রি-পিচ, টু-পিচ, টপস্, ব্লাউজ, পাঞ্জাবী, বিচানার চাদর, কোশন কভার, কসমেটিকস, মাটির তৈজসপত্র, অর্গানিক টিউব মেহেদী, আর্টিফিসিয়াল ফ্লাওয়ার ছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছ ও হাঁস-মুরগির মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করছেন অনলাইনে।
শুধুমাত্র অনলাইন মাধ্যমকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যান্য বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আর্থিক সচ্ছলতার পথকে সুগম করছেন তারা। অন্যদিকে অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই পণ্য পাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা অনলাইন ব্যবসাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
নারী উদ্যোক্তারা জানান, করোনাকালে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের চাকুরি হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়ে। আবার পুরুষরা ছোটখাট ব্যবসা করে যারা পরিবারের অর্থ যোগান দিত তাদেরও ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক অভাব অনটনে দিন কাটে। আর এসব কারণেই তারা অনলাইনে ব্যবসার চিন্তা করে। ঘরে বেকার বসে না থেকে অল্প পুঁজি খাটিয়ে ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে নিজেদেরও তৈরি পণ্য বিক্রি শুরু করে। অনলাইনে ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ায় তাদের ব্যবসাকে ছোট থেকে মাঝারি ও বড় পরিসরে গড়ে তুলতে পরিশ্রম করছেন তারা। অক্লান্ত পরিশ্রমই আর্থিক স্বচ্ছলতার মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বী করছে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা বলেন, অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা ভবিৎষত প্রজন্মকে স্বচ্ছল জীবনযাপনে সুন্দর পথে এগিয়ে নিবে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা পেয়েছে। ভৈরবের বেশিরভাগ অনলাইন উদ্যোক্তাই কলেজ-র্ভাসিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও গৃহিণী। তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মের ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।
ইতিমধ্যেই ভৈরব উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে অর্ধশত নারী উদ্যোক্তাকে আর্টিফিসিয়াল ফ্লাওয়ার তৈরি বিষয়ক দক্ষতাবৃদ্ধি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ