ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জীবনকে সবুজের ছোঁয়া দিতে যেতে পারেন নুহাশ পল্লী 

প্রকাশনার সময়: ২১ মে ২০২৩, ১৮:০৫

হুমায়ুন আহমেদের সিনেমা বা নাটক দেখার পর একজন অনুরাগী হিসেবে নুহাশ পল্লী যাওয়ার ইচ্ছা হয়নি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। তার ভাবনার প্রতিফলন যেন এই পল্লী। ৪০ একর জমিতে মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেছেন এই পল্লী। নানা প্রজাতির গাছ দেখা যায় সেখানে। আছে দীঘি, বৃষ্টিবিলাস, ভূতবিলাস, হোয়াইট হাউজ।

কর্মব্যস্তময় জীবনকে একটু সবুজের ছোঁয়া দিতে ঢাকার অদূরে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারেন। হুমায়ন আহমেদের ভাবনাগুলোর একটা জলন্ত চিত্র দেখার সুযোগও হবে। গ্রামীণ পরিবেশ, গাছগাছালি আর দিঘীর পাড়ে বসে মন ভোলাতে ঘুরে আসুন নুহাশ পল্লী থেকে।

যা যা দেখবেন

মূল রাস্তা থেকে নেমে শালবনের ভিতর দিয়ে একটু এগুলেই সামনে পড়বে কয়েকটি হরেক রকমের কুটির শিল্পের তৈজসপত্র ও শিশুদের খেলনা জাতীয় জিনিসপত্রের দোকান এবং খাবারের দোকান।

এরপর মূল ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসে আবৃত বিরাট মাঠ এবং একটি বড় শেফালী গাছ। এর পাশেই রয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এর প্রিয় বাস ভবন হোয়াইট হাউজ, যার সামনে দেখা মিলবে চিন্তিত হুমায়ুন আহমেদের ম্যূরাল।

মূল ফটকের ডান পাশেই দাড়িয়ে আছে মা ও ছেলের ভাস্কর্য। এখানেই আছে বিশ্রাম নেয়ার মতো একটি ছাউনি এবং অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা ডিম্বাকৃতির একটি সুইমিংপুল।

এরপর একটু সামনে গেলে হাতের ডান পাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বড় উদ্যান। উদ্যানের পূর্বদিকের খেজুর বাগানের পাশে ‘বৃষ্টিবিলাস’ নামে একটি অত্যাধুনিক ঘর রয়েছে। এর ছাদ টিনের তৈরি। এখানে বসে থেকে বৃষ্টির শব্দ শুনতেই এ আয়োজন। এছাড়া নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য বৃষ্টি বিলাস থেকে একটু দূরেই দিঘির পাড়ে রয়েছে ‘ভূতবিলাস’ নামে আরেকটি দুই কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক বাংলো।

নুহাশ পল্লীর অন্যতম মূল আকর্ষণ হল প্রাচীন আদলে নির্মিত আধুনিক দুটি ঘাট বাঁধানো বৃহৎ আকারের ‘লীলাবতী দীঘি’। এ দীঘির চারপাশের পাড়জুড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। দিঘির মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে কয়েকটি নারিকেল গাছ থাকায় দ্বীপের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে তুলেছে।

এখানে রয়েছে প্রায় আড়াইশ প্রজাতির গাছ, ঔষধি গাছের বাগান, হুমায়ুন আহমেদের কটেজ, ট্রিহাউজ, কাদামাটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও এবং দাবা খেলা ও নামাজ পড়ার কক্ষ।

হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থলসহ শীতল পানির সরোবরে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রূপবতী মৎসকন্যা। এর পাশে একটি বিরাট রাক্ষসের মূর্তিও রয়েছে।

কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসরের মতো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, হরেকরকম কবুতর ও ঘর, মাটির তৈরি ঘর ও পানির কূয়া, পদ্ম পুকুর, বসার জন্য ছাউনি, কংক্রিটের তৈরি বিশাল ব্যাঙের ছাতা, দোলনা, মাটির প্রাচীর এবং ট্রি হাউজসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। শালবন, অর্কিড বাগানসহ মোট তিনটি বাংলো রয়েছে এখানে। যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রথমে গাজীপুরের চান্দিনা চৌরাস্তায় যেতে হবে। ওখান থেকে বিভিন্ন মিনিবাসে চড়ে ২০-৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে যেতে হবে হোতাপাড়া। তবে সিএনজি দিয়েও যেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতিজনের ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা করে। আর অটোরিকশা বা সিএনজি রিজার্ভ করে নিলে ১৫০-২০০ টাকা খরচ হবে।

টিকেট ফি

নুহাশ পল্লী সারা বছরই দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়।

নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য একটি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, আর অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিনগুলোতে পড়বে ৪০ হাজার টাকা।

তবে বছরের দুইদিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর (হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন) এবং ১৯ জুলাই (মৃত্যুবার্ষিকী) নুহাশ পল্লী সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন টিকিট ছাড়াই যে কেউ প্রবেশ করতে পারে।

নয়া শতাব্দী/এসএম/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ