ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এই শীতে ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি

প্রকাশনার সময়: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৬ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:১১
সবুজ পাহাড়ের বুকে বিস্তৃত মেঘকন্যার দল। মেঘের ওপারে সূর্য ছড়াচ্ছে তার আলো। এই দৃশ্য শুধু সাজেকের। ছবি : সংগৃহীত

সাজেক মানেই মেঘময় এক পৃথিবীর ছবি। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কখনো তীব্র শীত। আবার মুহূর্তেই বৃষ্টি। এ যেন মেঘের উপত্যকা। সাজেকে উপভোগ করা যায় নীল পাহাড়ের সারি, সফেদ মেঘের খেলা, রূপালি বৃষ্টির রূপ বা কুয়াশা জড়ানো সকাল। পাহাড়ের ওপর কুয়াশার আবরণ, দলবেঁধে কুহেলিকার মিছিল আর মেঘের আনাগোনা দেখতে এই শীতে ঘুরে আসুন সাজেক।

সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে গিয়ে দেখতে পাবেন মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালি। মন, প্রাণ, দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা আর অনুভূতিতে। প্রভাত এবং প্রাতঃবেলায় সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার সুখানুভূতি আপনি সারাজীবন মনে রাখবেন। মনে হতে পারে, জীবনটা যদি এইখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্য উদয় দেখে কাটিয়ে দেওয়া যায়।

সাজেক- মেঘ আর পাহাড়ের মিতালী যেখানে। ছবি : সংগৃহীত

সাজেক ভ্যালি যেখানে

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং জনপ্রিয় স্থান এই সাজেক ভ্যালি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর অবস্থান রাঙ্গামটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। কারণ, খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা দিঘীনালা থেকেই সাজেক যেতে বেশি পছন্দ করেন।

সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন এই নৈসর্গিক উপত্যকায়। তবে সাজেকে প্রকৃতির আসল রূপ দেখার জন্য সেরা সময় হচ্ছে বর্ষাকালের শেষ দিকে এবং শীতকাল।

সবুজের বুকে মেঘকন্যাদের অবাধ বিচরণ। মন চায় ছুঁয়ে দিতে মেঘের সফেদ শরীর। ছবি : সংগৃহীত

সাজেক যাবেন যেভাবে

ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে খাগড়াছড়িতে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ৩১৬ কিলোমিটার। এতে জনপ্রতি ৫২০-৫৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। আর এসি বাসে ভাড়া লাগবে ১০০০-১২০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকেও আপনি পর্যটনের শহর খাগড়াছড়ি আসতে পারেন। চট্টগ্রামের অক্সিজেন বা বায়েজীদ থেকে খাগড়াছড়ি অভিমুখী গাড়িতে উঠতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আসতে জনপ্রতি ১৮০-২২০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির দুরত্ব ১০৯ কিলোমিটার।

ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন হুন্দাই (এসি-নন এসি), গ্রীণ লাইন (এসি), শ্যামলী, হানিফ (এসি-নন এসি), শান্তি পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া, রিল্যাক্স (এসি-নন এসি), ও ঈগল প্রায় সবধরনের বাস পাবেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়াও আপনার শহর থেকে আসা গাড়িতে করে খাগড়াছড়ির প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর গাড়ি থেকে নামতে হবে।

সাজেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্য ওঠার চমৎকার দৃশ্য। ছবি : সংগৃহীত

শাপলা চত্বরের আশেপাশেই রয়েছে সাজেকগামী গাড়ির কাউন্টার। সেখান থেকেই নির্ধারিত ভাড়ায় সাজেকগামী চাঁদের গাড়ি, পিকআপ, মাহেন্দ্র ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মধ্যে আপনার পছন্দের বাহন রিজার্ভ করবেন।

সকালের নাস্তাপর্ব শেষ করে সাজেকের উদ্দেশে রওনা দিয়ে প্রথমে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি চেকপোস্টে গাড়ির চালকসহ পর্যটকদের তথ্য দিয়ে টোকেন নিতে হবে। সেখান থেকেই শুরু হবে সাজেক অভিমুখে আপনার স্বপ্ন যাত্রা।

মনে রাখবেন, আপনাকে বাঘাইহাট এন্ট্রিপয়েন্টে আপনাকে সকাল সাড়ে ১০টার মধেই পৌঁছাতে হবে। সকালের এ্যাসকট না পেলে আপনাকে আবারো বিকালের এ্যাসকটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সাজেক ভ্যালির প্রবেশ মুখেই আছে প্রবেশ ফি টিকিট কাউন্টার। সাজেক ভ্যালিতের প্রবেশের জন্য পর্যটক প্রতি ২০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে।

সবুজ পাহাড়ের ওপর শুভ্র মেঘের মায়ার নদী বয়ে যায়। মেঘের সঙ্গে বয়ে যায় মন ও মনন। তখন আর মনের মধ্যে মন থাকে না। ঘরের মধ্যে ঘর। ছবি : সংগৃহীত

এ ছাড়াও যানবাহনের ক্ষেত্রে চাঁদের গাড়ির জন্য ১০০ টাকা ও মোটরসাইকেল হলে ৫০ টাকার টিকিট নিতে হবে। ফেরার সময় প্রবেশ মুখের নির্ধারিত কাউন্টারে সেই টিকিট আবার ফেরত দিতে হবে।

সাজেক উপভোগ করবেন যেভাবে

সাজেক পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া করার পর দীর্ঘ যাত্রার শেষে আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতেই হবে। এছাড়া সাজেকের কাঠফাটা দুপুরের রোদে না ঘোরাঘুরি করে রোদ পড়ার অপেক্ষা করাই ভালো। বিকেলে জিপে করে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালির আরও ভেতরে। সেখানে একটু উঁচু টিলায় উঠলেই উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত।

সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। দেখবেন মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে আর মিটিমিটি করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি দুটি থেকে সহস্র তারা আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে।

সন্ধ্যার তারাভরা আকাশ দেখতে দেখতে মৃদুমন্দ হাওয়ায় চায়ের কাপে চুমুক দিলে আপনার হৃদয়ে যে অনুভূতি আসবে, সেটাই হতে পারে আপনার সাজেক ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আনন্দ। যারা-তারা দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য সাজেক খুবই আদর্শ একটি জায়গা। এমনকি যারা এখনও মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখেননি তারাও সাজেক ভ্যালিত এসে জীবনে প্রথমবারের মতো দেখা পেতে পারেন মহাবিশ্বে আমাদের আশ্রয়স্থল আকাশগঙ্গার।

পাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকাবাঁকা পথ। পথের শেষে মেঘের রাজ্য। এইখানে স্থির হয়ে যায় জোড়া চোখ। ছবি : সংগৃহীত

ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাডে চলে যাবেন অবশ্যই। সেজন্য উঠতে হবে খুব ভোরে। আর চলে যেতে হবে এক বা দুই নম্বর হ্যালিপ্যাডে। সাজেকে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদা মেঘের ওপর যখন ঠিকরে পড়ে তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

যেসব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে

১. স্থানীয় লোকজনের ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নেবেন।

২. সঠিক সময়ে এসকর্ট দেওয়া।

৩. ছুটির দিনে কটেজ পাওয়ার ঝামেলা এড়াতে বেশ কয়েক দিন আগে (এক মাস আগে) বুকিং দিয়ে নিন।

৪. সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ছবি তোলা যাবে না।

৫. রবি, এয়ারটেল বা টেলিটক সিম সঙ্গে নিন।

৬. সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখুন।

৭. সঙ্গে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যান।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ